সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ০০:০০

রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ প্রসঙ্গে

রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ প্রসঙ্গে
অনলাইন ডেস্ক

রাজনীতি নিয়ে সমাজে নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেন, রাজনীতি এখন আগের জায়গায় নেই; রাজনীতির মধ্যে ‘পলিটিক্স’ ঢুকে গেছে। রাজনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ পলিটিক্স হলেও সহজ সরল মানুষ এটিকে নেতিবাচকতার মোড়ক পরিয়ে দিয়ে খেদোক্তি প্রকাশ করে। আবার এমন মানুষদের কেউ কেউ রাজনীতিকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে ‘রাজার নীতি’ বলে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। এর পেছনে কারণটা কী?-মানুষ রাজনীতি ও রাজনীতিবিদের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। এই প্রত্যাশাপূরণকেন্দ্রিক তাদের সরল মন্তব্যগুলো প্রকাশ পায়, অবলীলায় উচ্চারিত হয়। পুস্তকী ভাষায় নয়, সাধারণ মানুষের ভাষায় রাজনীতি সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক কিছু বলা বা লিখা একেবারে সহজ কিছু নয়। এতে ঝুঁকিও আছে। তবুও সমকালীন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অপ্রিয় হলেও বা তিক্ত হলেও সত্য উচ্চারণ করতে হয়। সে প্রেক্ষিতে লিখছি, চাঁদপুরে তিনটি বড়ো রাজনৈতিক দলে দ্বিধাবিভক্তি, গ্রুপিং, কোন্দল যা-ই বলি না কেনো, সেটা একেবারে স্পষ্ট। কমিটি গঠন, নির্বাচনে মনোনয়নসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিংবা স্বার্থবহির্ভূত নানা কারণে এমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা বেশ ক’বছর দেখা গেলেও এর নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অর্থপূর্ণ ব্যর্থতায় সেটা স্বাভাবিক পর্যায় থেকে এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে গিয়ে পর্যন্ত পৌঁছেছে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একই দলের এক গ্রুপের নেতার সাথে আরেক গ্রুপের নেতার দেখা হলে একজন সালাম দিলে আরেকজন সালামের জবাব না দেয়া, দৃষ্টিকটুভাবে মুখ ঘুরিয়ে ফেলা, হাত বাড়িয়ে দিলেও করমর্দন না করা, কুশল জিজ্ঞেস করলেও নিশ্চুপ থাকার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। শুধু কি তাই, পরিস্থিতি যে আরো খারাপ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, সেটা গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা গেছে। প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে, ‘নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া : রাজনীতি থেকে কি ন্যূনতম সৌজন্যবোধও বিদায় নিচ্ছে? মৃত মানুষ নিয়েও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা!’

এ সংবাদে লিখা হয়েছে, চাঁদপুরে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল যে সকল সভ্যতা, ভব্যতা, শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নেতা-কর্মীরা তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা বলছেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব-কোন্দল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত গড়াবে তা মোটেই কাম্য নয়। যা সম্প্রতি চাঁদপুরে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ ক’জন নেতার আচরণে প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের আচরণ সমাজে খুবই খারাপ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল। চাঁদপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রবিন পাটোয়ারী ‘হায়রে রাজনীতি, হায়রে গ্রুপিং, শেষ পর্যন্ত মৃত মানুষ নিয়েও?’ শিরোনামে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে তার উদ্বেগ জানিয়ে একটি লেখা পোস্ট করেন। ৬ মে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির মাতা ইন্তেকাল করেছেন, পরদিন ৭ মে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সম্প্রতি চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের পিতা মারা গেছেন। গত বছর চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং গণপরিষদ সদস্য মরহুম অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মারা যান। এই তিনজনের জানাজায় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ তাঁদের অনুসারী ক’জন নেতা অংশ নেন নি। তাঁদের এই অনুপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টিতে যেমনি দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে, তেমনি সাধারণ মানুষও রাজনীতি থেকে এই সামান্য সৌজন্যবোধ বিদায় নেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মরহুম এমএ ওয়াদুদ হচ্ছেন ছাত্রলীগের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। তাঁর কন্যা ডাঃ দীপু মনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচবারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। এমএ ওয়াদুদের সহধর্মিণী ও শিক্ষামন্ত্রীর মায়ের জানাজায় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হননি। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, গণপরিষদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলামের স্ত্রীর জানাজায়ও তাঁরা উপস্থিত হননি। সম্প্রতি অর্থাৎ গত মাসে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের পিতার জানাজায়ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হননি। তাঁদের এই অনুপস্থিতি সকলের নজর কেড়েছে। দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মন্তব্য হলো, মৃত মানুষ নিয়ে তো কোনো প্রতিহিংসা বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। প্রতিহিংসা যদি জানাজা পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে প্রজন্ম কী শিখলো আমাদের নেতাদের কাছ থেকে!?

সংবাদে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, চাঁদপুরে নিকট অতীতেও রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ছিলো। একটি দলের কারো ছেলে/ মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কিংবা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রতিপক্ষ সকল দলের নেতা অংশ নিয়েছেন। আর ইফতার মাহফিল ও মৃত ব্যক্তির জানাজা, কুলখানি, চেহলামে তো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। সম্প্রতি সেটা বিরলদৃষ্ট হয়ে গেছে। রাগ/গোস্বা,জেদ, পাওয়া না পাওয়ার অভিমান সহ নেতিবাচক নানা কারণে বিনয়, ঔদার্য তো বটেই স্বাভাবিক শিষ্টাচারও যেনো গায়েব হওয়া শুরু করেছে। এটা এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। উদ্বেগ হচ্ছে সাংঘর্ষিক পর্যায়ে গিয়ে আবার পৌঁছে কি-না। তেমন পর্যায়ে পৌঁছার আগেই প্রতিটি বড়ো দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে চাঁদপুরের রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় কিছু করা যায় কি-না সে ব্যাপারে দ্রুত ভেবে দেখতে সহজ সরল সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়