সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যে মৃত্যুর দায় সন্তানরা এড়াতে পারবেন না

যে মৃত্যুর দায় সন্তানরা এড়াতে পারবেন না
অনলাইন ডেস্ক

মানুষসহ যে কোনো প্রাণী কোনো না কোনোভাবে মৃত্যুবরণ করবেই। মৃত্যুকে সাময়িকভাবে ঠেকানো যায়, তবে চিরদিনের জন্যে নয়। মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মৃত্যুকে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুই প্রত্যাশা করে, কোনোভাবেই অস্বাভাবিক মৃত্যু নয়। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র্রের নানা অব্যবস্থাপনায় কোথাও কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যু তথা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার বেশি হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেজন্যে এদেশের মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। কিন্তু এ গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা কেউ কাউকে দিতে পারছে না। ফলে অহরহ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ঘটেই চলছে। চালকের অদক্ষতা, অসচেতনতা, গাফলতি ও উদাসীনতা, সর্বোপরি ট্রাফিক আইন মেনে না চলার কারণে দুর্ঘটনার অনিবার্যতা তারা এড়াতে পারছে না। সড়কের যে স্থানটিতে পথচারী পারাপারের প্রবণতা থাকে, সে স্থানটিতে নিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালাতে হয়। কিছু চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে সড়কের ওই স্থানকেও বিবেচনায় রাখে না। সেজন্যে দুর্ঘটনা এড়াতে পারে না। যেমনটি এড়াতে পারেনি এক ট্রাক চালক। পরিণতিতে গত ১ জানুয়ারি খ্রিস্টিয় নববর্ষের প্রথম দিনে চাঁদপুর সদর উপজেলার কালিভাংতি নামক স্থানে এক বৃদ্ধাকে সেই চালক সড়ক পারাপারের সময় শুধু ধাক্কাই দেয়নি, দলিতমথিত করে বীভৎসতায় মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে গেছে।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে বৃদ্ধার করুণ মৃত্যু’ শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা যায়, এই সড়কে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে কালীভাংতি নামক স্থানে চাঁদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-২-এর সম্মুখে ১ জানুয়ারি রোববার সকাল ১০টায় লজ্জাতিন্নেছা (৭০) নামে বৃদ্ধাটি করুণ মৃত্যুর শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কল্যাণপুর ইউনিয়নের রঙ্গেরগাঁও গ্রামের বকাউল বাড়ির আলী বকাউলের স্ত্রী চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এ বিদ্যুৎ বিল জমা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা পার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

জানা যায়, ঘাতক ট্রাকটি বৃদ্ধ নারীকে চাপা দিয়ে টেনে প্রায় একশ’ ফুট দূরে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে বৃদ্ধার শরীর ও মাথার মগজ বের হয়ে তার করুণ মৃত্যু হয়। ঘাতক ট্রাকটি বৃদ্ধ নারীকে চাপা দিয়ে দ্রুত গতিতে মতলবের দিকে চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ক’জন জানান। খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার এসআই সুমন ও এএসআই মিজান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠান।

নিহত বৃদ্ধা তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। এই বৃদ্ধা বিদ্যুৎ বিল দেয়ার জন্যে প্রতিমাসেই চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এ আসতেন। স্বামী শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও সন্তানেরা চাকুরিজনিত কাজে ব্যস্ত থাকায় বাড়িতে থাকতেন না বলে এই বৃদ্ধাকেই বিদ্যুৎ বিল দিতে আসতে হতো।

বৃদ্ধার মৃত্যুর বীভৎস দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রত্যক্ষদর্শী ক’জন জানান, এ স্থানে কোনো ধরনের গতিরোধক না থাকায় ব্যস্ততম সড়কে অতিরিক্ত গতির কারণে প্রতিনিয়তই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কারো প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের সম্মুখ থেকে ব্রিজ পর্যন্ত গতিরোধক দেয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

বৃদ্ধা লজ্জাতিন্নেছার মৃত্যুর জন্যে অবশ্যই বেপরোয়া গতির অজ্ঞাত ট্রাক চালক দায়ী। কিন্তু যে কারণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে গিয়ে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ বলি দিলেন, তার জন্যে তার তিন পুত্র সন্তানের উদাসীনতাকে অবশ্যই দায়ী করা যায়। তারা চাকুরি করেন বলে যদি এতোই ব্যস্ত হন ও বাড়িতে অবস্থান না করেন, তাহলে তাদের ঘরের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের দায়িত্বটি প্রতিবেশী কিংবা অন্য কাউকে দিয়ে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে পারতেন। সেটি না করে তারা বৃদ্ধা মায়ের সশরীরে বিদ্যুৎ সমিতিতে গিয়ে বিল পরিশোধে নিশ্চিত থেকেছেন। এতে যে তাদের উদাসীনতা প্রতিফলিত হয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত হবে, সেটা কি তারা আদৌ ভেবেছেন?-নিশ্চয়ই ভাবেননি। আর ভাবেননি বলেই তাদের মায়ের এমন করুণ মৃত্যুর দায় তারা আইন-আদালতে এড়াতে পারলেও বিবেকের আদালতে কোনোদিনই এড়াতে পারবেন না বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়