প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
কাজ না করে অর্থ লোপাট!

কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদার, কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু জনপ্রতিনিধি আমাদের দেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্নরূপী বরাদ্দকে কীভাবে কাজ না করেই লোপাট করা যায় তার ধান্ধা করে এবং সফল হয়। এই অবৈধ অর্জনের ভাগ কীভাবে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত দিতে হয়, সেটা তারা ভালোভাবে জানে। এরা তৈল মর্দন, চাপাবাজি এবং দাতা সাজার কাজটিতেও বেশ পারঙ্গমতা প্রদর্শন করে। এদেরকে সরাসরি আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় অসাধু প্রকৃতির কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। এমন সব পিআইও সরকারি চাকুরির নিয়ম অনুযায়ী একটি উপজেলায় তিন বছর কেনো, এক দশক, এক যুগ পর্যন্ত বদলি ছাড়া বহাল থাকতে অসুবিধা হয় না। এদেরকে কিছু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনেক পছন্দ করেন। কারণ, এদের দ্বারা বাড়তি আয় হয়, যা দ্বারা বিলাসিতা করতে বেশ ভাল্লাগে।
কোনো উপজেলায় ইউএনও ও পিআইও যদি একাত্ম থাকে, তাহলে কাজ না করেও বিল তুলে নেয়া, মাঠের মাঝখানে, পাহাড়ের ভেতর তথা অপ্রয়োজনীয় স্থানে ব্রীজ নির্মাণ করা, রাস্তা ছেঁচে মাটি না ফেলেও মাটি ফেলার বিল বানানো সহ অনেক অনিয়মই করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এটাই জনমনে সংশয় ও নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।
চাঁদপুর কণ্ঠে গত ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সাধারণ ও বিশেষ কোটায় প্রথম কিস্তিতে কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পের অনুকূলে ২৬ লাখ টাকার ৪৪ মেট্রিক টন চাল ও ২৭.৯৪৪ মেট্রিক টন গম, কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের অনুকূলে ২৬ লাখ টাকা এবং টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের অনুকূলে ৪ লাখ ৭ হাজার ৬৬৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। হাইমচর উপজেলা পিআইও অফিস সূত্রে পাওয়া গেছে উপর্যুক্ত তথ্য। এছাড়া আরো জানা যায়, ১৫/০৩/২০২২ খ্রিঃ-এর মধ্যে উপরোক্ত প্রকল্পভুক্ত কাজ সমূহ শতভাগ শেষ করার সরকারি নির্দেশ ছিলো। চাঁদপুর কণ্ঠের হাইমচর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি সরেজমিনে গিয়ে জানতে পেরেছেন, অধিকাংশ প্রকল্পে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে কাগজে কলমে শতভাগ কাজ দেখিয়ে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ও খাদ্যশস্য উত্তোলন করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্পভুক্ত এলাকার লোকজন মৌখিক অভিযোগ করেন। সেজন্যে পিআইও বলেছেন লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্যে। এ ব্যাপারে ইউএনও বলেছেন, কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা বলে পিআইও সকল বিলে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। যেহেতু প্রকল্পসমূহে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আমি তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
আমরা হাইমচরে ইউএনও এবং পিআইও একাত্ম হয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্প সমূহের ছোট-বড় কোনো অনিয়ম করেছেন সেটা বলতে চাচ্ছি না। আমরা অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইউএনও’র বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাতে চাই। কেননা এতে নিজেকে স্বচ্ছ প্রমাণের সুযোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এর মধ্য দিয়ে কোনো কোনো পাবলিক ‘পাগল’ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে কিনা সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে এ ব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপনকারীদের তিরস্কার জানাবো, আর যদি ন্যূনতম সত্যতাও প্রমাণিত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানাবো।