প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০
লঞ্চগুলোর প্রতি এমন ঔদাসীন্য কেন?
ঢাকা-চাঁদপুর রূটে চলাচলকারী লঞ্চসহ অন্যান্য রূটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ কাঙ্ক্ষিত নজরদারি রাখছে বলে মনে হচ্ছে না। চাঁদপুর-ঢাকা, ঢাকা-চাঁদপুর রূটে বিরতিহীন বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে কোনো পুলিশ/আনসার ডিউটি করে না বলে এগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা যেমন চলে, তেমনি বিআইডব্লিউটিএ ও মালিক পক্ষের উদাসীনতাও লক্ষ্য করা যায় দৃষ্টিকটুভাবে। সেজন্যে এসব লঞ্চে জাতীয় পরিচয়পত্র/কাবিননামা কিংবা বিয়ের অন্য কোনো প্রমাণ প্রদর্শন ছাড়াই কেবিনগুলো ভাড়া প্রদান করা হয় জোড়ায় জোড়ায় যে কোনো নারী-পুরুষের কাছে। এদের মধ্যে যারা বিবাহিত দম্পতি, তারা ছাড়া অন্যরা কেবিনগুলোকে ব্যবহার করে অবৈধ যৌনাচারের প্রয়োজনে। ঘাট বা টার্মিনাল থেকে লঞ্চ ছাড়ার আগে কেবিনগুলো কাদের নিকট কোন্ পরিচয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে, সেটি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে কেউ তদারকি করে দেখে না। এর পেছনে রামণ্ডরহিমের সন্ধি কাজ করে কিনা সেটা জানা না গেলেও উদাসীনতা যে কাজ করে সেটা সুস্পষ্ট। এর ফলে লঞ্চের কেবিনে যৌনাচার ও হত্যাকাণ্ডের শিকার নারীর লাশ প্রাপ্তির খবর মাঝে মধ্যে পাওয়া যায়। এমনটি প্রতিরোধে যাদের টনক নড়া প্রয়োজন, সেটি নড়ছে বলে মনে হচ্ছে না।
|আরো খবর
আমাদের দেশে সড়ক ও রেলপথে পুলিশের নজরদারি যেভাবে লক্ষ্য করা যায়, নৌপথে সেভাবে লক্ষ্য করা যায় না। এক সময় লঞ্চে আনসার থাকলেও এখন নেই। আর পুলিশ তো নেই-ই। এর ফলে লঞ্চগুলোতে চালক, সুপারভাইজার, কেরানীসহ অন্যদের কর্তৃত্ব চলে নির্বিঘ্নে। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করার জন্যে কোনো যাত্রী প্রয়াস চালালে তাকে হেনস্তা হতে হয়। প্রতিবাদী যাত্রীকে নদীর মাঝে ফেলে দেয়ার হুমকিও দেয় লঞ্চের লোকজন। এমন বাস্তবতায় গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে খবর বেরিয়েছে যে, কোনো কোনো লঞ্চে জমজমাট জুয়া চলায় যাত্রীরা হচ্ছে সর্বস্বান্ত।
এ খবরে লিখা হয়েছে, ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী লঞ্চে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জুয়াড়িরা যাত্রী বেশে লঞ্চে উঠে। তারা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় ও ছাদে জুয়ার আসর বসায়। ফিতা পেঁচিয়ে গোল করে মধ্যখানে কাঠি দিয়ে বাজি ধরে। সুযোগ বুঝে ক’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে আসর বসিয়ে সাধারণ যাত্রীদের আকৃষ্ট করে। আশেপাশের যাত্রীরা একে একে তাদের খপ্পরে পড়ে সব খুইয়ে কাঁদতে কাঁদতে লঞ্চ থেকে নামে। সচেতন যাত্রীরা জুয়ার আসর প্রত্যক্ষ করে কাউন্টারে গিয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা দায়সারা জবাবে বলে, আমরা লঞ্চে মাইকিং করেছি যাত্রীদের সতর্ক থাকার জন্যে। আসলে লঞ্চে জুয়ার আসর বসানোর সাথে লঞ্চের কিছু স্টাফ থাকে জড়িত। তাদের সহায়তায় জুয়াড়িরা মোহনপুর এলাকায় পূর্ব থেকে রাখা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লঞ্চ থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে চলে যায়।
আমরা চাঁদপুর-ঢাকাসহ যে কোনো রূটে চলাচলকারী লঞ্চ সমূহে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড এবং বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়মিত নজরদারি প্রত্যাশা করি। সাথে সাথে মালিকদের সচেতন তদারকি চাই। আমরা মনে করি, লঞ্চগুলোতে নজরদারি ও তদারকির পরিবর্তে যদি ঔদাসীন্য লাগাতার হয়, তাহলে কেবিনে যৌনাচার, লঞ্চের সুবিধাজনক স্থানে জুয়ার আসর বসার ঘটনাই শুধু ঘটবে না, অবৈধ মালামাল পাচারসহ অন্যান্য অপরাধকর্মও ঘটবে। অতএব, সময় থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের সাবধানতা কাম্য।