প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২২, ০০:০০
যানজটের এ রূপ কি পাল্টানো যায় না?

চাঁদপুর শহরের যানজট রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহরের যানজটের মতোই হয়ে গেছে। শুধু অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে, মধ্যাহ্ন বিরতি চলাকালে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস ছুটি শেষে চাঁদপুর শহরে তীব্র যানজট হয় না। আরো নানা কারণেও যানজট হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : মূল শহরের মধ্যেই রেল লাইনের ওপর তিনটি লেভেল ক্রসিং, অপ্রশস্ত সড়ক, জেলার সবচে’ আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্র চাঁদপুর বড় স্টেশনস্থ তিন নদীর মোলহেডে বিপুল সংখ্যক লোকজনের নিত্য যাতায়াত, অতিরিক্ত অটোবাইক চলাচল এবং হাজার হাজার লঞ্চযাত্রীর লঞ্চঘাটে ২৪ ঘণ্টা আসা-যাওয়া। এসব কারণের মধ্যে যে কারণটি সবকিছুকে ছাপিয়ে সবার নজরে আসে, সেটি হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অটোবাইক চলাচল।
গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে ব্যানার হেডিংয়ে ছাপা হয়েছে চাঁদপুর শহরের ভয়াবহ যানজটের সচিত্র প্রতিবেদন। এ প্রতিবেদনে পাঁচ কলামে যে ছবিটি সংযুক্ত করা হয়েছে, তার ক্যাপসনে কী লিখা হয়েছে সেটি পড়ার আগে পাঠকের নজরে পড়ে যানজটের ভয়াবহতা উপলব্ধির মতো হেডিংটির দিকে। এই হেডিংয়ে লিখা হয়েছে ‘২০ সেকেন্ডের পথ পার হতে ৩০ মিনিট!’ ছবিতে কিন্তু ট্রাক, বাস, পিকআপ ও রিকশার অস্তিত্ব দেখা যায় না, অটোরিকশা ও অটোবাইকের প্রাধান্যই প্রকটভাবে চোখে পড়ে। বিশেষ করে চোখে পড়ে অটোবাইকের আধিক্য। বস্তুত প্রয়োজনের অতিরিক্ত অটোবাইকের কারণেই চাঁদপুর শহরের প্রধান সড়কগুলো অটোবাইকের দখলে থাকে এবং সেজন্যে নিত্যদিনের যানজট তার ভয়াবহতার রূপ পাল্টাতে পারে না।
চাঁদপুর শহরের যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গিয়ে অটোবাইক বন্ধ করে দেয়া কিংবা অনেক কমিয়ে ফেলাটা বাস্তবসম্মত নয়। কেননা দুর্মূল্যের বাজারে যে যানবাহনটির ভাড়া এখনও অনেক সুলভ, সেটিই হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোবাইক। এ অটোবাইকের ভাড়া শুধু রিকশার চেয়ে কম নয়, মেঝে নিচু ও ছাদ থাকার কারণে ওঠানামা ও রোধ-বৃষ্টিতে ভ্রমণ করাটা আরামদায়ক। সে সুবিধায়¬ দূরদর্শিতাকে গুরুত্ব না দিয়ে পৌরসভা বা ইউনিয়নের অনুমোদনে কিংবা মৌন সম্মতিতে সড়কে লাগাতার অটোবাইক নামানোর সুযোগ নিশ্চিত করাটা কিংবা অতিরিক্ত অটোবাইক নিয়ন্ত্রণ না করাটা মোটেও সমীচীন নয়।
আমরা চাঁদপুর শহরে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রথমত অতিরিক্ত অটোবাইক নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা ও যত্রতত্র অটোরিকশায় যাত্রীর জন্যে চিৎকার বন্ধ করা, অটোরিকশার অনির্ধারিত স্ট্যান্ড অপসারণ করা, রেলওয়ে হকার্স মার্কেটসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্যানে করে নানা পণ্য বিক্রি বন্ধ করা, ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্যে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়া, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ও বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত কন্ট্রোল রুম থেকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সর্বোপরি সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করা ইত্যাদির চেয়ে আর উল্লেখযোগ্য অন্য কিছু আছে বলে পর্যবেক্ষক, সুধীজনরা মনে করেন না এবং আমরাও মনে করি না। এগুলো সম্পাদন করা অনেক বেশি কষ্টকর ও ব্যয়বহুল নয়। এজন্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বিত উদ্যোগই যথেষ্ট বলে মনে করি।