প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২২, ০০:০০
বিপজ্জনক উন্নয়ন প্রকল্প!
কোনো উন্নয়ন প্রকল্প যে বিপজ্জনকও হয়ে যেতে পারে তার নমুনা মিলেছে শাহরাস্তিতে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক সারাদেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স পুকুর ও চিতোষী আরএম উচ্চ বিদ্যালয় পুকুর উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। সেমতে ৮৪ লাখ ৩১ হাজার টাকার চুক্তিমূল্যে চাঁদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। গেল রমজানের প্রথম সপ্তাহে তারা পুকুর দুটির উন্নয়ন কাজ শুরু করে। পুকুরের মাঝখান থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। তড়িঘড়ি করে পুকুর খননের কাজ ঈদুল ফিতরের আগেই সমাপ্ত করা হয়। ওয়াকওয়ে নির্মাণের সপ্তাহ পার না হতেই শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স পুকুরের চারপাশ থেকে ওয়াকওয়ের মাটি ধসে পড়া শুরু হয়। পুকুরটি বার বার সেচেও প্রকল্পের বাকি কাজ করতে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে পুকুরটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। চারপাশে থাকা প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবনগুলো ভাঙ্গন-আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরাও আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন। আশেপাশের লোকজন পুকুরটি দেখতে ছুটে আসছেন। ভাঙ্গন ঠেকিয়ে ভবনগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
|আরো খবর
উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসান জানান, বেলে মাটির কারণে পুকুরের চারপাশে ধস দেখা দিয়েছে। এখানে এ প্রকল্পটি দেয়া ঠিক হয়নি। মাটি ধস ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উক্ত প্রকৌশলীর বক্তব্যের রেশ ধরে আমরা বলতে চাই, যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের অনেক আগেই সয়েল বা মাটি পরীক্ষা করা হয়। সেমতে শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স পুকুরটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনার আগে এটির মাটি পরীক্ষা যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে সে পরীক্ষা যথাযথভাবে করা হয়নি কিংবা আদৌ মাটি পরীক্ষা করা হয়নি। এক্ষেত্রে যেটাই সত্যি হয়, সেটা দুঃখজনক। এর জন্যে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই শাস্তি পেতে পারে।
আমরা বার বার বলেছি, আজও বলছি, সরকারের যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প টেকসই করতে হলে পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্ব থেকে বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকলের দেশপ্রেমকে তথা দেশের স্বার্থ-জনস্বার্থকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। এর বাইরে যদি প্রকৌশলী-ঠিকাদারের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়, তাহলে শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স পুকুরের মতো উন্নয়নের নামে বিপজ্জনক কাজই হবে। এমন উন্নয়ন হওয়ার চেয়ে না হওয়া যে ভালো, সেটা অকপটে বলতে কারোই দ্বিধান্বিত হবার সুযোগ নেই।