সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২২, ০০:০০

ক’জন ঠিকাদার শাস্তি পায়?

ক’জন ঠিকাদার শাস্তি পায়?
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশের ঠিকাদারদের মধ্যে এক সময় যারা রাজনৈতিক প্রভাব ও পেশী শক্তির অধিকারী ছিলো, তারা টেন্ডার বাক্স ছিনতাই, প্রকৌশলীদের হুমকি কিংবা মারধর করে কাজ বাগিয়ে নিতো। এদের কেউ কেউ কোনো কাজ না করেই টেবিলে টেবিলে বখরা বা কমিশন দিয়ে পুরো বিল তুলে নিয়ে খেয়ে ফেলতে পারতো। এখন অবশ্য এমন কথা শোনা যায় না এবং গণমাধ্যমে এমন সংবাদ দেখা যায় না। এখন ই-টেন্ডার হওয়ায় কিছু ঠিকাদারের প্রধান যোগ্যতা হচ্ছে লটারী ভাগ্য থাকা কিংবা প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে কে কতো কমে কাজ করতে পারে সে মানসিকতা থাকা। এমন বাস্তবতায় কিছু ঠিকাদার কার্যাদেশ বাগিয়ে নিয়ে সেটি বিক্রি করার ধান্ধায় থাকে এবং লাভ গুণে সটকে পড়ে। এমতাবস্থায় সাব-কন্ট্রাক্টর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি ছাড়া অর্থাৎ কর্মকর্তা/কর্মচারীর অনুপস্থিতিতে কতোটা মানহীনভাবে কাজ করে পার পেয়ে যেতে পারে, সে ফিকিরে থাকে। এদের কেউ কেউ জনতার হাতে ধরা পড়ে, কেউ পড়ে না। যারা ধরা পড়ে তাদের খবর গণমাধ্যমে আসার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এতে ঠিকাদার (কন্ট্রাক্টর) বা সাব-কন্ট্রাক্টর গ্রেফতার হয়েছে কিংবা অর্থদণ্ডের শিকার হয়েছে বা অন্য কোনো শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে বলে খুব একটা জানা যায় না।

আমাদের দেশে অনেক ভালো ঠিকাদারও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারে না। যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তারা সময় বাড়ায় এবং মান রক্ষা করেই কাজ শেষ করে। এমন ঠিকাদাররা হয় অনেক পরিশ্রমী এবং আন্তরিক। এদের মধ্যে দেশপ্রেমও লক্ষ্য করা যায়। আবার এমন কিছু ঠিকাদার আছে, যারা অনেক কাজ পেলে কোনো কাজই যথাসময়ে শেষ করতে পারে না। নির্দিষ্ট অফিসকে ম্যানেজ করে তারা সময় বাড়ায় এবং বর্ধিত সময়ে যদি উপকরণের মূল্য বাড়ে, তাহলে তারা কাজ রেখে পালিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এমন ঠিকাদাররা আদৌ কালো তালিকাভুক্ত হয় কি না, সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করে না কিংবা করার ভয় দেখিয়ে বড় কর্তা পকেট ভারী করার সুযোগ নেয়।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় সংবাদ বেরিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বিষকাটালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঠিকাদারের গাফিলতিতে অসমাপ্ত ভবনে চলছে পাঠদান। এ বিদ্যালয়টি ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। দরপত্রের মাধ্যমে ৬২ লাখ টাকার প্রাক্কলনে একতলা ভবন নির্মাণের কাজ পায় হাইমচর উপজেলার আলগীবাজার এলাকার ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ডের মালিক নুরুল ইসলাম নান্টু নামের ঠিকাদার। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও চলতি ২০২২ সালের এপ্রিল চলে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। ফলে অসমাপ্ত তথা নির্মাণাধীন ভবনটিতে বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ক্লাস করতে হচ্ছে। ক্লাসে শিক্ষকরা ব্যবহার করতে পারছেন না উপকরণ। সুষ্ঠু পরিবেশ না পেয়ে কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে, আর অধিকাংশ শিক্ষার্থী হয়ে গেছে অমনোযোগী। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছে না।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মতিউর রহমান চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেছেন, ঠিকাদার নূরুল ইসলাম সেন্টু আমার অফিসে আসলে তিনি আগামী দেড় মাসের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম বিষকাটালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কাজ শেষ করে দেবেন বলে কথা দিয়েছেন। আমাদের অভিমত হচ্ছে, ঠিকাদার অফিসে এসেছেন বলে ঠিকাদারের এমন কথা আদায় করতে পেরেছেন। অন্যথায় কী হতো? বস্তুত প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য নানা কারণে ঠিকাদাররা কারণ দর্শানো, জবাবদিহিতা কিংবা দৃশ্যমান শাস্তির মুখোমুখি হয় না। বরং তারা তোয়াজের মুখোমুখি হয়। আমাদের উন্নয়ন কাজের গতিশীলতা ও মান রক্ষায় ঠিকাদার শায়েস্তা না হওয়াটা একটু বড় বাধা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়