শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫  |   ৩৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

খালের সে কী করুণ হাল!
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর শহরের এসবি, বিদ্যাবতী ও নাপিত বাড়ি খাল, চাঁদপুর সদরের জমজমিয়া, হাজীগঞ্জের বোয়ালজুরি ও শৈলখালি খালসহ জেলার অনেক বিখ্যাত খালের চলছে অনেক করুণ হাল। এসব খালে এখন শুষ্ক মৌসুমে দূরের কথা, বর্ষা মৌসুমেও পালতোলা নৌকা দেখা যায় না দুটি কারণে। প্রথমত খালগুলোতে নৌকাসহ অন্যান্য নৌযান চলাচলের মতো নাব্যতা নেই, দ্বিতীয়ত নৌকায় ইঞ্জিনের সংযোজন। ইঞ্জিনচালিত নৌকার সৌন্দর্য কারো মন যতোটা কাড়তে পারে, তারচে’ বেশি কাড়তে পারে পালতোলা নৌকা। এই পালতোলা নৌকা আজ জাদুঘরে ছবিতে কিংবা নিজস্ব অবয়বে ঠাঁইয়ের বস্তু, সচরাচর দেখার মতো অবস্থায় নেই বললেই চলে। তিনভাগ জল আর একভাগ স্থলের এই পৃথিবীতে এবং নদীমাতৃক আমাদের এই দেশে কতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নৌকা যে আছে, সেটা নিয়ে ক’জনে আর ভাবে? যেমনটি ভেবেছেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী হাশেম খান। তিনি চাঁদপুরের ডাকাতিয়ার তীরে বৈচিত্র্যপূর্ণ নৌকার সমাহারে নৌকা জাদুঘর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটি আর হয়নি।

আজকের এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে নৌকা নিয়ে লিখার কোনো উদ্দেশ্য নেই। উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের দেশে অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে নৌকার বড় ভূমিকা ছিলো আনাচে-কানাচে বিদ্যমান খালগুলোর কারণে। সড়ক যোগাযোগের অভাবনীয় উন্নতির ফলে আজ খালগুলো সেই গুরুত্ব হারিয়েছে। দেশের প্রায় নিরানব্বই শতাংশ খাল সরকারি জায়গায় হলেও এগুলো নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় বেসরকারি লোকদের কুনজর পড়েছে। তারা এসব খাল ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ছে। ফলে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বছরের যে কোনো মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, কৃত্রিম বন্যা হচ্ছে এবং সর্বোপরি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।

খালগুলো শুধুমাত্র নৌ-যোগাযোগ স্থাপন করে না, প্রধানত একটি জনপদে ‘লাইফ লাইন’ হিসেবেও কাজ করে। সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে খালের ভূমিকা অনেক কার্যকর। ভূ-উপরিভাগস্থ পানির সরবরাহ পেতে খালগুলো প্রবহমান থাকা জরুরি। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত পানি এবং বৃষ্টির পানি সুষ্ঠুভাবে নিষ্কাশনে খালগুলো অনেক বড় মাধ্যম। কিন্তু নৌকা কিংবা অন্য নৌযান না চললেই এক শ্রেণীর ভূমিদস্যু/দখলদাররা মনে করে, খালের প্রয়োজন নেই। অতএব, খালকে মেরে ফেলো এবং দখল করো। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক সরকারি প্রকৌশলী/ কর্মকর্তা প্রবহমান খালে পাইপ বসিয়ে কিংবা না বসিয়েই সেটি ভরাট করে রাস্তা বা অবকাঠামো তৈরির নির্দেশ/ সিদ্ধান্ত দেন অপরিণামদর্শীর মতোই। যার পরিণতিতে এমন উন্নয়ন সত্যিকার অর্থে টেকসই হয় না।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ‘হাজীগঞ্জের যত্রতত্র খাল ভরাটের জের : ইরি-বোরো জমিতে জলাবদ্ধতা’। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, খালগুলো ভরাটের কারণে চলতি শুষ্ক মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই ইরি-বোরো ফসলের ক্ষেতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে ঝড়ে যতোটা না ফসলহানি হয়েছে, তারচে’ বেশি ফসলহানি হতে পারে জলাবদ্ধতা নিরসন না হলে। এটা কৃষকদের জন্যে নিঃসন্দেহে দুঃখের বিষয়।

আমাদের দেশে করুণ হালের শিকার হওয়া খালগুলো খনন কিংবা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুনির্দিষ্ট প্রকল্প প্রণয়ন এবং সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না। যদি এমনটি করা না হয়, তাহলে পালতোলা নৌকা কিংবা তার ছবিই শুধু জাদুঘরে ঠাঁই পাবে না, প্রবহমান খালগুলোর ছবিও ঠাঁই পাবে। আর যদি তাণ্ডই হয়, সেটা হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক এবং বিপন্ন পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে হবে অনেক অনুকূল। সত্যিই এমনটি ভাবতেও গা শিউরে উঠে। আমরা এমন ভাবনা থেকে কার্যকর পরিত্রাণ চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়