বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

মেয়েরা যখন অসহায়, অনিরাপদ

মেয়েরা যখন অসহায়, অনিরাপদ
অনলাইন ডেস্ক

মেয়েরা যে অনেক সম্ভাবনাময় ও একটি পরিবারের জন্যে অনেক সৌভাগ্যের সেটি বুঝিয়ে বলার জন্যে অনেক দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে না। বাবা/মায়ের সঙ্গে, ভাই-বোনের সঙ্গে একটি পরিবারে একটি মেয়ের বেড়ে ওঠা সহজ। কিন্তু মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে একটি মেয়ের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অপ্রকাশিত কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই যায়। একটি বাড়িতে যদি কেবল একটি পরিবার থাকে, এমন পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি বেশি না হয়, তাহলে এমন পরিবারে শুধু মেয়ে নয় তার মা-ও পিতাসহ ভাই বা অন্য পুরুষের অনুপস্থিতিতে দিনে ও রাতে কক্ষণোই নিরাপদ নয়। একটি মেয়ে ছোট হোক বা বড় হোক, তাকে দলবদ্ধ ছাড়া একাকী স্কুল/কলেজে এমনকি মসজিদের মক্তব/মাদ্রাসায় পাঠানোও নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় সচেতন মা/বাবা কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কেউ মেয়েকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেয়া-আনার কাজটি করে থাকেন। কিন্তু সব মেয়ের জন্যে এ সুযোগটি অবারিত থাকে না নানা অনিাবার্য কারণে। এর মধ্যে বাবা ও মা দুজনই পেশাজীবী হওয়া কিংবা অন্য ব্যস্ততার কারণে মেয়ে সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেয়া-আনার দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা, অন্যান্য বিষয়েও যখন দেখভাল করার দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রদর্শন করেন, তখন মেয়ে সন্তানটি বুয়া বা কাজের লোক নির্ভর হয় কিংবা অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল হয়। এ মেয়েটি কার্যত তখন কমণ্ডবেশি নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকে।

আমাদের দেশে পিতামাতার দায়িত্ব সম্পর্কিত শিক্ষা তথা পেরেন্টিং বিষয়ে আবশ্যিক শিক্ষা ক’জন বিয়ের পূর্বে অর্জন করে? নিশ্চয়ই এমন প্রশ্নের জবাবে এক শতাংশ বললেও অনেক বেশি হবে। কারণ, এমনটি এ দেশে এখনও কল্পনা বহির্ভূত। অন্যদের দেখে/শুনে নূতন পিতা/মাতা হওয়া পুরুষ/নারী স্বীয় সন্তানের প্রতি দায়িত্বপালনের বিষয়টি শিখে, তবে এদের নব্বই শতাংশই অসম্পূর্ণভাবে সে দায়িত্বপালন করে। সেজন্যে সন্তান স্বাস্থ্যঝুঁকি, নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ আরো কিছু ঝুঁকিতে থেকেই যায়। এমতাবস্থায় সন্তানরা নানা দুর্ঘটনার শিকার হয়। পানিতে ডুবে মৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নানা ধরনের নিপীড়ন/নির্যাতনের শিকার হয়।

পিতা/মাতার অসম্পূর্ণ দায়িত্বপালন কিংবা সচেতনতার অভাবহেতু ছেলে সন্তানরা যতোটা না যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, বখে যায় তথা বিপথগামী হয়, মেয়েরা হয় তারচে’ অনেক বেশি। মেয়েদের বখে যাওয়া কিংবা বিপথগামী হওয়ার চেয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হবার আশঙ্কা তৈরি হয় ব্যাপক। মেয়ে সন্তানকে প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে দিনে বা রাতে কোথাও একাকী যাতায়াত করার সুযোগ দেয়াটা যেমন ঝূঁকিপূর্ণ, তারচে’ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নিরিবিলি পরিবেশে পৃথক টয়লেট ও রান্নাঘরের সুবিধাহীন ঘরে দিনে/রাতে একাকী রেখে পরিবারের অন্য সকলের কোথাও যাওয়া। এমতাবস্থায় এমন মেয়ে সন্তানটি কতোটা অসহায়ত্ব ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে-সেটা অনেক বাবা/মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বুঝে না কিংবা বুঝতে চায় না। যার ফলে কখনও কখনও দুর্ঘটনা ঘটেই যায়। যেমনটি গত মঙ্গলবার রাতে হাজীগঞ্জের কালোচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের নওহাটা গ্রামের মাস্টার বাড়িতে ঘটেছে। ওই বাড়ির এক কিশোরীকে ঘরে একা রেখে তার পরিবারের লোকজন রাত ৯টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে ছিলেন। ঘরে ফিরে তারা কিশোরীকে ঘরে না পেয়ে খুঁজতে বের হন। পরে বাড়ির পুকুর পাড় সংলগ্ন বাঁশঝাড়ে হাত-পাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় বিপন্ন কিশোরীটিকে দেখতে পান। তাকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসায় মেয়েটি সুস্থ হলে জানায়, তাদের প্রতিবেশী একই গ্রামের চৌকিদার বাড়ির সোহেল হোসেন (২২) আরো দুজনসহ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। তার বাবার অভিযোগের আলোকে হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ সোহেলকে তার নানার বাড়ি থেকে আটক করে।

যে কোনো বয়সী একটি মেয়েকে দিনে/রাতে কোনো ঘরে একাকী রেখে গেলে যে সে অসহায় ও অনিরাপদ থাকে এবং সেজন্যে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে, হাজীগঞ্জের নওহাটাসহ তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। তারপরও অনেক বাবা/মা কিংবা পরিবারের দায়িত্বশীলরা সেটা বোঝেন না। ‘আরে কিচ্ছু হইবো না, আল্লাহ ভরসা’ বলে কোনো মেয়েকে কোথাও একাকী রেখে যাওয়াটা সমীচীন নয়। ঠেকা বা বিপদে পড়ে কোনো মেয়েকে তার বাবা/মা কিংবা পরিবারের অন্য লোকজন ঘরে একা রেখে গেলেও প্রতিবেশীদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। কিন্তু এমন সৎ প্রতিবেশী আমাদের সমাজে বিরল। সেজন্যে অনেক মেয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিজনিত কারণে একাকিত্বহেতু অসহায় ও অনিরাপদ হয়ে যায়। এটা সত্যিই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়