প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
এক কর্মকর্তার ভালো কাজে পরবর্তী কর্মকর্তার অনীহা কেন?
আমাদের দেশে সাধারণত একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিজ ক্ষমতার বলয়ে তাঁর কর্মস্থলে তাঁর নির্দিষ্ট কর্মকালে যে ভালো কাজগুলো করে যান, উত্তরসূরি হিসেবে যোগদানকৃত কর্মকর্তাদের অনেকেই সে কাজগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান না কিংবা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদারকি করা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতাও রক্ষা করতে আন্তরিকতার সাথে কাজ না করে দায়সারাভাবে কাজ করেন। এমন দৃষ্টান্ত এ সম্পাদকীয় নিবন্ধে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করলে তিক্ত সত্য প্রকাশের মতোই কাজ হবে, যাতে কারো রোষানলে পড়তে হবে বৈকি।
|আরো খবর
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় দুটি শীর্ষ সংবাদের মধ্যে যেটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে ছাপা হয়েছে, সেটির শিরোনাম হচ্ছে ‘শাহরাস্তির শিশুপার্ক, কল সেন্টারের স্থবিরতা কাটবে তো?’ এ সংবাদের গভীরে যাবার আগেই পাঠক গন্ধ পান নেতিবাচকতার।
এ সংবাদে লিখা হয়েছে, শাহরাস্তি উপজেলার ২০জন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-এর কেউ কেউ নিজ পরিধি থেকে বের হয়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হয়ে শাহরাস্তিবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। প্রথম এ কাজটি শুরু করেন ইউএনও মোঃ মোয়াজ্জেম হোসাইন। শাহরাস্তিতে এসে তিনি অনুভব করলেন, এখানে কোনো বিনোদন কেন্দ্র কিংবা পার্ক নেই। তিনি এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় একটি বিনোদন পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে তিনি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকলেন। তিনি শাহরাস্তিতে বেশি পরিচিতি লাভ করেন খাল উদ্ধার ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে ইউএনও হিসেবে সামিউল মাসুদ যোগদান করে বিনোদন পার্কের কাজ সম্পন্ন করে পূর্ববর্তী ইউএনও মোয়াজ্জেম হোসাইনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটান। চৌকস কর্মকর্তা সামিউল মাসুদ সরকারের ডিজিটাল সেবাকে এগিয়ে নিতে নিজ উদ্যোগে ‘কল সেন্টার’ চালু করেন, যেটি পুরো উপজেলাবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায়। তাঁর উত্তরসূরি ইউএনও মোঃ হাবিব উল্লাহ মারুফ শাহরাস্তিতে যোগদানের পর থেকেই এখানে একটি উন্নতমানের স্কুল গড়ার স্বপ্ন দেখেন এবং এলাকাবাসী, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করে স্কুল নির্মাণ কাজে নিবেদিত হন। স্থানীয় এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সহযোগিতায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করতে সক্ষম হন শাহরাস্তি বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল।
ইউএনও মারুফের বিদায় নেয়ার পর ইউএনও শিরিন আক্তারের সময় কতোটুকু ভালো কাজ হয়েছে কিংবা তিনি পূর্বসূরিদের ভালো কাজের ধারাবাহিকতা কতোটুকু রক্ষা করেছেন সেটা ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ না করে সংবাদটির প্রতিবেদক মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল লিখেছেন ইউএনও শিরিন আক্তার বিদায় নেয়ার পর গত ১১ এপ্রিল ২১তম ইউএনও হিসেবে শাহরাস্তিতে যোগদান করেছেন হুমায়ুন রশিদ অরুণ। তাঁর প্রতি শাহরাস্তিবাসীর আবেদন, আবার কি ইউএনও মোয়াজ্জেম হোসাইনের হাতে গড়া পার্ক শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হবে? জনসাধারণের প্রবেশের গেট দুটির তালা কি খোলা হবে? ‘প্রবেশ নিষেধ’ সাইনবোর্ডটি কি অপসারণ করা হবে? আবার কি বেজে উঠবে ইউএনও সামিউল মাসুদের কল সেন্টারের ফোন? বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল কি সভাপতির নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে? প্রাণবন্ত হবে কি উপজেলা পরিষদ চত্বর?
প্রতিবেদকের এসব প্রশ্নে পূর্বসূরি ইউএনওদের স্মরণীয় /উল্লেখযোগ্য ভালো কাজগুলোর ধারাবাহিকতা শাহরাস্তির সদ্য বিদায়ী ইউএনও শিরিন আক্তারের কর্মকালে যে ব্যাহত হয়েছে সেটা পরোক্ষভাবে ফুটে উঠেছে। এটার জন্যে তাঁর জবাবদিহিতার ফুরসত নেই, যেহেতু তিনি শাহরাস্তির কর্মস্থলে নেই। তাঁর কর্মকালে সংক্ষুব্ধ লোকজনদের পক্ষে এক বা একাধিক ব্যক্তি জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কোথাও অভিযোগ করলে ইউএনও শিরিন আক্তারকে ন্যূনতম জবাবদিহিতার আওতায় আনা যেতো। বস্তুত ইউএনওসহ কোনো পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার ব্যাপারে কোথাও কোনো অভিযোগ/অনুযোগের জন্যে যে সাহস প্রদর্শনের প্রয়োজন, তেমনটি অনেকেই ধারণা করেন না। সেজন্যে একজন কর্মকর্তার ভালো কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তী কর্মকর্তা খুব সহজেই অবজ্ঞা/অবহেলা/অনীহা দেখিয়ে পার পেয়ে যান। যে কোনো এলাকার ভালো কাজের ধারাবাহিকতার স্বার্থে এমনটি পরিহারে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।