প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
বাইপাসের আগে যানজটের কী হবে?
গত ১০ এপ্রিল রোববার চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে বাইপাস সড়কের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, চাঁদপুর শহরে সেই পাকিস্তান আমলের রাস্তা দিয়েই চলাচল করা হচ্ছে। মানুষ বেড়েছে, বাড়েনি রাস্তা। এই শহরের যানজট নিরসনে রাস্তা প্রশস্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেকেই রাস্তার পাশে বাড়ি নির্মাণ করেছেন, অথচ জায়গা ছাড়েন নি। ১০ জন লোকের জন্যে ১০ হাজার মানুষ কষ্ট পাবে সেটা মেনে নেয়া যায় না। আজকে সবাই বাইপাস সড়কের দাবি তুলেছেন, এটা ইতিবাচক। তিনি এ বিষয়ে সড়ক বিভাগকে সার্ভে করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, চাঁদপুরে অন্য জেলার সিএনজি অটোরিকশা আসতে পারবে না। কেবল চাঁদপুরের সিএনজিই চাঁদপুরে চলবে। আইন অমান্য করলে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। উক্ত সভায় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, চাঁদপুর শহরের রাস্তা প্রশস্ত করার জন্যে আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ রাস্তাই রেলওয়ের সম্পত্তিতে। চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে বাইপাস সড়কের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন থেকে নদীর পাড় হয়ে মতলব পর্যন্ত একটি বাইপাস সড়ক করা যেতে পারে। এজন্যে প্রজেক্ট তৈরি করা প্রয়োজন।
|আরো খবর
বাইপাস সড়কের জন্যে প্রজেক্ট তৈরি, তারপর পাস, বাজেট বরাদ্দ, দরপত্র আহ্বান, কার্যাদেশ প্রদান এবং বাস্তবায়নসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পাদনে কম করে হলেও এক বছর সময় প্রয়োজন। তার আগে চাঁদপুর শহরে ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসনে কার্যকর কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবতে হবে এবং সে ভাবনার অনুকূলে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ বাস্তবায়নের ত্বরিত উদ্যোগ নিতে হবে।
চাঁদপুর শহরের অপ্রশস্ত রাস্তাসমূহ প্রশস্ত করার জন্যে এবং ফুটপাত নির্মাণের জন্যে চাঁদপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র চিত্রলেখার মোড় এবং পাঁচ রাস্তার মোড় শপথ চত্বর প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল চাঁদপুর জেলাকে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় এনে চাঁদপুর শহরের পর্যটন গুরুত্ব বাড়াতে অপ্রশস্ত রাস্তাসমূহকে প্রশস্ত করার পরিকল্পনা নিয়েও সফল হতে পারেন নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর চাঁদপুর আগমন উপলক্ষে চার রাস্তার সংযোগস্থলে কালীবাড়ি মোড়কে প্রশস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তৎকালীন মেয়র চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের মধ্যবর্তী লেভেল ক্রসিংকে প্রশস্ত করতে গিয়ে রেলওয়ের বাধা ও আইনী হুমকির মধ্যে পড়েছিলেন। এভাবে রাস্তা প্রশস্তকরণের উপরোক্ত ছিটেফোঁটা উদ্যোগ কার্যকর করা না হলে চাঁদপুর শহর ইতোমধ্যে অচল হয়ে যেতো।
বিদ্যুৎ গতিতে চাঁদপুর শহরের অপ্রশস্ত রাস্তা সমূহকে প্রশস্ত করা যাবে না। বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও অনেক সময় লাগবে। ততোদিন চাঁদপুর শহরবাসী কি ভয়াবহ যানজটের কষ্টকর আবর্তে নিতান্তই ঘুরপাক খাবে?-নিশ্চয়ই নয়। ট্রাফিক পুলিশে জনবল বৃদ্ধি, ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করতে পৌরসভার পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অস্থায়ী/স্থায়ী লোক নিয়োগ, পিক আওয়ারে কোনো সড়ককে ওয়ান ওয়ে করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবা, অন্য জেলার সিএনজি অটোরিকশার অনুপ্রবেশ রোধ এবং অটোরিকশাসহ অটোবাইকের যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা, অন্যথায় জরিমানা করা ইত্যাদি পদক্ষেপ ত্বরিত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসন বা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলের মাথায় রাখতে হবে। এজন্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বিত প্রয়াস জরুরি বলে আমরা মনে করি।