প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
মাদকের ব্যাপারে কোথাও কি বিশেষ ছাড়?
মাদকের ব্যাপারে চাঁদপুরে কর্মরত বর্তমান পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) জিরো টলারেন্সে আছেন বলে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক মাদক ও মাদক ব্যবসায়ী আটক আটক হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন। কিন্তু পর্যবেক্ষক মহল বিষয়টিকে অন্য কিছু ভাবছেন। সেটি হচ্ছে, কুমিল্লার অবস্থান ভারত সীমান্তে হওয়ায় মাদক পাচারকারীরা উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখ এড়িয়ে প্রথমত ভারত থেকে মাদক সংগ্রহ করে। তারপর কুমিল্লা থেকে জাতীয় মহাসড়ক ও রেল সড়ক এড়াতে চাঁদপুর জেলার কচুয়া, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায় বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওনা দেয়। তাদের উল্লেখযোগ্য গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে রাজধানী ও দেশের দক্ষিণাঞ্চল। এজন্যে মাদক পাচারকারীরা বাস ও সিএনজি অটোরিকশাকে ব্যবহার করে। চাঁদপুরের বিভিন্ন থানার পুলিশ ও কুমিল্লার র্যাব তাদের নিয়োজিত সোর্সের মাধ্যমে পথিমধ্যে ওঁৎ পেতে থেকে মাদক পাচারকারীদের পাকড়াও করে। যারা ধরা পড়ে তো পড়েই, আর অন্যরা চাঁদপুর লঞ্চঘাট কিংবা অন্য লঞ্চঘাটে পৌঁছে নৌপুলিশকে ফাঁকি দিতে পারলেই হলো, তারপর চাঁদপুর-ঢাকা ও চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ এবং চাঁদপুর হয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী বিভিন্ন রূটের লঞ্চ বা অন্য নৌযানে চড়ে তাদের গন্তব্যে অনেকটা নিরাপদে পৌঁছে যায়। প্রথমত কেবল পুরুষরা মাদক পাচারে নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে বোরকা পরা নারীরাও এ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে।
|আরো খবর
মাদকের বিরুদ্ধে চাঁদপুর জেলা পুলিশ তথা পুলিশ সুপারের জিরো টলারেন্সের মধ্যেও মাদকের বিষয়ে কোথাও যখন বিশেষ ছাড়ের ব্যাপারে কারো পরোক্ষ নীরবতার বিষয়টি অনুমিত হয়, তখন সচেতন ব্যক্তিমাত্রই চোখ কচলান। বলেন, কিসের মধ্যে আবার কী! এই বিশেষ ছাড়ের জায়গাটি হচ্ছে মতলব উত্তরের লেংটার মেলা।
চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, লেংটা মানে শাহ্সূফী সোলেমান লেংটা। মতলব উত্তরের বদরপুর ( বেলতলী) গ্রামে তাঁর মাজার অবস্থিত। এ মাজারে ৭দিনব্যাপী ওরশ শুরু হয়েছে গত ৩১ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার। এই ওরশের পূর্বাপর এখানে চলে মেলা। মেলা শুরুর আগেই মাজারের চারপাশে নেশাখোররা আস্তানা গেঁড়ে বসে। সে সুবাদে এখানে চলে সকল প্রকার মাদক বিক্রি, সেবন ও অশ্লীলতা। নেশাখোরদের মাদক সেবন ও অবাধে মাদক বিক্রি প্রত্যক্ষ করে যে কারোরই মনে হয়, এটা যেন মাদকের স্বর্গরাজ্য। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে তো এ সংক্রান্ত বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম ‘লেংটার মেলা যেনো মাদকের স্বর্গরাজ্য’।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরীফুল হাসান বলেছেন, শাহ্সূফী সোলেমান লেংটার ওরশ উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় কোনোরূপ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহজাহান কামাল জানান, মেলায় সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
লেংটার মেলার প্রধান খাদেম মতিউর রহমান (লাল মিয়া)-এর হিসেবে সারাদেশ থেকে ওরশ উপলক্ষে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ ভক্ত-আশেকানের আগমন ঘটবে। এমন ব্যাপক জনসমাগমে মাদক বিরোধী অভিযান চালাতে পুলিশকে কতোটা পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন, সেটা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এমন প্রস্তুতি না থাকলে পুলিশকে হয় ছাড় দিতে হবে, নতুবা সর্ষের ভেতরে ভূতের মতো ভূত পুলিশে অনুপ্রবেশ করবে এবং মাদকের স্বর্গরাজ্য দেখেও না দেখার ভান করতে হবে। পুলিশ সুপার মহোদয়কে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, লেংটার মেলার আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা মতলব উত্তর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদ জানান, এ মেলায় লাখ লাখ লোকের সমাগম হয়। অনেক পাগলও আসে। মাদক বিক্রি ও সেবনের সময় পুলিশ সামনে গেলে তারা পালিয়ে যায়। আর এভাবে আমরা কতজনকে আটক করবো? বস্তুত তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পুলিশের এক প্রকার অসহায়ত্ব ও সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে, যার ফলে লেংটার মেলার মাদকের স্বর্গরাজ্য কার্যত বিশেষ ছাড়ই পেয়ে যাচ্ছে।