প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২২, ০০:০০
পান্নার কাছে আর বেতন চাইবে না স্কুল কর্তৃপক্ষ
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিদ্যালয়ের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দায় থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো। শিক্ষা সচিব ছুটে এসেছিলেন ঘটনাস্থলে। দায়েরকৃত মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে শিক্ষকগণ আসামী হয়েছিলেন। এদের কেউ জেল খেটেছেন, কেউ জমিন পেয়েছেন। এ স্মৃতি মন থেকে মুছে না যেতেই ফরিদগঞ্জে ঘটেছে অনুরূপ ঘটনা।
|আরো খবর
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের সোহেল তালুকদার ও হাছিনা বেগমের কন্যা পান্না আক্তার (বয়স ১৩ বছর) স্থানীয় মজিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীতে পড়তো। স্কুল কর্তৃপক্ষ তার নিকট বেতন বাবদ এক হাজার ছয়শ’ টাকা বকেয়া পাওনা ছিলো। এ বকেয়া পরিশোধের জন্যে পান্না তার বাবার অনুপস্থিতিতে মায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলো। মা তার মেয়ের স্কুল-বকেয়া পরিশোধে অসামর্থ্যে ভুগছিলেন। কেননা তিনি অন্যের বাড়িতে ঝি-বুয়ার কাজ করে সন্তানদের ভরণপোষণ করছিলেন। তিনি মেয়ের কাছে উক্ত বকেয়া পরিশোধের জন্যে ২-৩ দিন সময় চেয়েছিলেন। মেয়ে পান্না সেটি মানতে ছিলো নারাজ। এ নিয়ে মা ও মেয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। গত ১৮ মার্চ শুক্রবার রাতে মা হাছিনা বেগম শবেবরাতের নামাজ পড়ার জন্যে ছেলে মাকসুদকে নিকটবর্তী মসজিদে পৌঁছে দিতে যান। ঘরে ফিরে আসেন রাত ৮টার দিকে। এসে দেখেন মেয়ে পান্না আক্তার আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ পান্নার লাশ উদ্ধার করে, মা হাছিনা বেগম অপমৃত্যুর মামলা করেন এবং ময়না তদন্তের জন্যে লাশ চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ময়না তদন্ত রিপোর্ট এবং পুলশের তদন্তেই বেরিয়ে আসবে, পান্না আক্তার আত্মহত্যা করেছে কিনা এবং এ আত্মহত্যার পেছনে মায়ের কথিত কারণই লুকিয়ে আছে, না অন্য কোনো কারণ রয়েছে। ফরিদগঞ্জের মজিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পান্না আক্তার যে কারণেই মারা যাক না কেনো, পান্নার কাছে তার স্কুল কর্তৃপক্ষ আর বকেয়া বেতন চাইবে না। পান্নার অপমৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই চাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে সে রেহাই পেয়েছে। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়।
আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে, অর্ধেক বেতনে পড়ালেখার সুযোগ দেয়ার রীতি প্রচলিত আছে। কিন্তু রীতিটি বহুলভাবে প্রচারিত হয় না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দিক বিবেচনা করে। এর ফলে পান্নার মতো দরিদ্র ঝি-বুয়ার কিংবা অন্য কোনো নি¤œ পেশার মানুষের সন্তানেরা উক্ত রীতির বিষয়টি জানে না এবং বিনা বেতন বা অর্ধেক বেতনে পড়ার জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বরাবর আবেদনও করে না। সেজন্যে দারিদ্র্যহেতু তাদের বকেয়া বেতনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই বেড়ে যাওয়াটাই যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানতে পারে, তাহলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এমন কাজটি করে কি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা ম্যানেজিং কমিটি? দেশের প্রতিটি স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পর যদি উক্ত কাজটি করার জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের তাগিদ দিতো, তাহলে ফরিদগঞ্জে মজিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অনুরূপ ঘটনা ঘটতো বলে মনে হয় না।