বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৯

নাট্যাঙ্গনে মঞ্চের নেপথ্যের এক আলোকযোদ্ধা কার্তিক সরকার

সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদক
নাট্যাঙ্গনে মঞ্চের নেপথ্যের এক আলোকযোদ্ধা কার্তিক সরকার

চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে যে ক’জন মানুষের অবদান নিঃশব্দে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে মঞ্চ ও দর্শকের হৃদয় আলোকিত করে চলেছে, তাঁদের মধ্যে একজন আলোকযোদ্ধা হলেন কার্তিক সরকার। তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ নাট্যকর্মী। অভিনয়, আলোক নির্দেশনা ও আবহ সংগীতে তাঁর অবদান চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনকে করেছে সমৃদ্ধ ও বর্ণিল।

১৯৯৫ সালে নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। সে সময় প্রথম নাটকে অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়েছিলো চাঁদপুরের প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব আকরাম খানের কাছে। মঞ্চে প্রথম পদার্পণের পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁর। নাটকের প্রতি এই অগাধ ভালোবাসাই তাঁকে একের পর এক নতুন চরিত্রে রূপদান করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি মঞ্চে প্রাণ দিয়েছেন নানা চরিত্রে। একে একে অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-- ব্যারিকেড চারিদিকে, স্বাধীনতার সংগ্রাম, গ্রাস, সুন্দর আলীর বায়োস্কোপ, অপারেশন সার্চলাইট, ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল, নরকের দরজা ভেঙ্গে, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না, বর্ণচোর, রূপান্তর, নিমাই সন্যাস, রাজা হরিশ্চন্দ্র, কৃষ্ণকথা, রাধাকৃষ্ণ, কংসবধ, স্বামী বিবেকানন্দ, জগাইমাধাই উদ্ধার, বাবা লোকনাথ।এছাড়া আরও অনেক নাটকে করেছেন অভিনয়।

শুধুমাত্র অভিনয় নয়, নাটকের আড়ালেও কার্তিক সরকারের সৃজনশীল ভূমিকা কম নয়। ২০০০ সাল থেকে নাট্যকর্মী অভিজিৎ আচার্যীর উৎসাহে নাটকের আবহ সংগীতের কাজে যুক্ত হন। সংগীতের আবহে নাটককে প্রাণবন্ত করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর স্পর্শ তৈরি করে আলাদা মাত্রা। এরপর ২০০১ সালে আরেকজন বরেণ্য নাট্যজন গোবিন্দ মন্ডলের অনুপ্রেরণায় যুক্ত হন আলোক নির্দেশনা ও শব্দ নিয়ন্ত্রণের কাজে। মঞ্চের আলো-ছায়ার খেলায় গল্পের আবেগ, দৃশ্যের গভীরতা এবং চরিত্রের মনস্তত্ত্ব ফুটিয়ে তোলার যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সেটিই তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে করে আসছেন। কার্তিক সরকারের আলোক পরিকল্পনা অনেক নাটকে দর্শকের মনে রেখাপাত করেছে, যা নাটককে করে তুলেছে অনেক জীবন্ত ও প্রাণবন্ত।

বর্তমানে কার্তিক সরকার চাঁদপুরের অন্যতম নাট্য সংগঠন ‘অনুপম নাট্য গোষ্ঠী’র কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে তিনি থিয়েটার ফোরাম, চাঁদপুরের সদস্য হিসেবেও যুক্ত থেকে নাট্যাঙ্গনের সার্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছেন।

নাটকের মঞ্চে যখন পর্দা উঠে, দর্শকের দৃষ্টি থাকে মূলত অভিনেতাদের দিকে। কিন্তু এই পুরো আয়োজনের নেপথ্যে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অবদান অনেক সময়ই অদৃশ্য থেকে যায়। কার্তিক সরকারের মতো শিল্পীরা সেই নেপথ্যের নায়ক, যাঁরা না থাকলে নাটক তার পূর্ণতা পেতো না। তাঁর আলোক পরিকল্পনা, আবহ সংগীতের নিখুঁত ব্যবহার আর দায়িত্বশীল উপস্থিতি মঞ্চের প্রতিটি প্রযোজনাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।

মঞ্চের নেপথ্যে নীরবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শ্রম, মঞ্চের প্রতি ভালোবাসা এবং সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকার নতুন প্রজন্মের জন্যে এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা। কার্তিক সরকার চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে মঞ্চের আড়ালে এক নির্ভরযোগ্য আলোকযোদ্ধা, যিনি আলোকসজ্জা, আবহ সংগীত ও অভিনয়ের সমন্বয়ে দর্শকের মনে জ্বালিয়ে চলেছেন নাটকের অদৃশ্য আলো। তার নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় এভাবেই চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে দৃশ্যের সমন্বয়ে আলোকিত হোক মঞ্চ-- এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়