প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮
ছেংগারচর পৌরসভা যেনো মৃত্যুশয্যায়!

মতলব উত্তরের প্রবীণ সাংবাদিক, মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ মাহবুব আলম লাভলু গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ছেঙ্গারচর পৌরসভাকে নিয়ে যে সংবাদ পরিবেশন করেছেন, সেটা ব্যানার হেডিংয়ে শীর্ষ সংবাদের মর্যাদা পেয়েছে। তিনি লিখেছেন, মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা নামেই শুধু প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। পৌরসভায় নেই কোনো জনপ্রতিনিধি। ৯০ শতাংশ পদ শূন্য। রাস্তা ও কার্যালয়ে জলাবদ্ধতায় বেহাল অবস্থা এ পৌরসভার। পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৫ এপ্রিল এ পৌরসভাটি ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট ‘গ’ শ্রেণি থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি এ পৌরসভাকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার নিয়োগ-কাঠামো অনুযায়ী পৌরসভার স্থায়ী নিয়োগে ১৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু আছে মাত্র ১৫ জন। আছে ১জন নির্বাহী প্রকৌশলী, ১জন সহকারী প্রকৌশলী, ১জন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, ১জন কর নির্ধারকসহ অফিস সহায়ক, নলকূপ মিস্ত্রি, রোলার চালক, মিক্সার মেশিন অপারেটর ও গাড়ির ড্রাইভার সহ মাত্র ১৫ জন। বাকি ১৪০টি পদই শূন্য রয়েছে। সে হিসেবে বলা যায়, পৌরসভার ৯০ শতাংশ স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদই শূন্য।
জানা গেছে, ছেংগারচর পৌরসভার ৫০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি রাস্তাই কাঁচা। আর সামান্য পাকা রাস্তার বেশিরভাগই বেহাল। পৌর পাম্পের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যের সাপ্লাইয়ের পানির সুবিধা পেয়েছে ১০ হাজার ৬ শতাধিক পরিবারের মধ্যে মাত্র ৩২৯ পরিবার। এই পৌরসভার ৫০ কিলোমিটার সড়কে বাতি আছে মাত্র ৫২টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। ময়লা ডাম্পিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই নেই। বৃষ্টি হলে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। খোদ পৌরসভা কার্যালয়ের ভেতরে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। একতলার ফ্লোরে থাকে পানি আর পানি। সচেতন মহল বলছে, শূন্য পদে জনবল পদায়ন করলে নাগরিক সেবা কার্যক্রমে গতি ফিরবে। জনবল সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। অথচ নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করে নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। পৌরসভার কয়েকজন নাগরিকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শিক্ষাদীক্ষা ও ব্যবসায় ছেংগারচর পৌর এলাকাটি ভালো অবস্থানে থাকলেও বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অনেক কাঁচা রাস্তা, জরাজীর্ণ পাকা রাস্তা, অপরিচ্ছন্নতাহেতু নাগরিক সেবায় এই পৌরসভাটি অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও সড়ক বাতি নেই বললেই চলে। ময়লা-আবর্জনা ফেলারও কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে পানি সরার নালাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যে উন্নয়ন হওয়ার কথা সে তুলনায় অনেক কম হয়েছে। আর পৌরসভাটির নিজস্ব আয় কম। নিজস্ব আয় দিয়ে তেমন উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারি বরাদ্দ দিয়েই কেবল উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়। জনবল নিয়োগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
ছেঙ্গারচর পৌরসভাকে গ্রামীণ পৌরসভাই বলা যায়। যদিও পৌরসভা হলো একটি শহুরে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা, যা জাতীয় ও আঞ্চলিক আইনের অধীনে নির্দিষ্ট এখতিয়ারের মধ্যে জনগণের সেবা নিশ্চিত করে। এটি সড়ক নির্মাণ, পানীয় জল সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন স্থানীয় সেবা নিশ্চিত করে থাকে। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে পৌরসভা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর নিজস্ব মেয়র ও কাউন্সিলর থাকে।
পৌরসভার সংজ্ঞার আওতায় ছেঙ্গারচর পৌরসভাকে খুঁজে পাওয়া যায় মুমূর্ষু রোগীর মতো, যে কিনা আছে মৃত্যুশয্যায়। মেয়র-কাউন্সিলর নেই বলে এটি আছে এতিমের মতো অবস্থায়। বলা দরকার, চাঁদপুর জেলার অনেক ইউনিয়ন পরিষদ এবং পুরো ইউনিয়ন এলাকা ছেঙ্গারচর পৌরসভার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। এ পৌরসভার আওতাধীন এলাকার অনুন্নয়ন ও সামগ্রিক নাগরিক সেবা দেখে এটিকে পৌরসভার নামে প্রহসন বলে মনে হচ্ছে। নব্বই শতাংশ জনবল সঙ্কট নিয়ে এ পৌরসভাটি স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষায় যেনো ঠাঁই না পাওয়া জলাশয়ে নাক জাগিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এ পৌরসভাটিকে বাঁচাতে তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।