সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫, ০১:২৮

হাজীগঞ্জ বাজারের মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা বলছেন ক্ষতিগ্রস্তরা

অভিযোগের তীর জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তার দিকে

কামরুজ্জামান টুটুল
হাজীগঞ্জ বাজারের মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা বলছেন ক্ষতিগ্রস্তরা
হাজীগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের একাংশ। ছবি: চাঁদপুর কন্ঠ।

শনিবার (২২ মার্চ ২০২৫ ) গভীর রাতে হাজীগঞ্জ বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৪টি দোকানঘর পুড়ে গেছে। এটিকে নাশকতা হিসেবে দেখছেন খোদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার পুরানো দলিল পুড়ে ছাই হয়েছে। হাজীগঞ্জ বাজারস্থ শহীদ আলী আজ্জম সড়কের পৌর মার্কেটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে মার্কেটের ১৪টিসহ পাশের একাধিক দোকান পুড়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোর মধ্যে টাইলস এন্ড স্যানিটারি, প্রিন্টার্স (ছাপাখানা), দলিল লিখক, কম্পিউটার কম্পোজ ও প্রিন্ট এবং কনফেকশনারি দোকান রয়েছে। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোর মধ্যে অধিকাংশ দলিল লিখকের অফিস-ঘর। এর মধ্যে অন্তত ২০জন দলিল লিখকের প্রায় ১০ হাজার দলিল ও কয়েক লাখ টাকার স্ট্যাম্প পুড়ে যায়। ।

ক্ষতিগ্রস্ত দলিল লিখকরা হলেন : শাহাদাত হোসেন, মামুনুর রশিদ স্বপন, মাসুদ হাওলাদার, সফিকুল ইসলাম হাওলাদার, সাহাব উদ্দিন রিপন, আক্তার হোসেন, সাহাব উদ্দিন মজুমদার, ফটিক, মামুন কাজী, হেলাল উদ্দিন, তানভীর হোসেন, আব্দুল মালেক ও আনোয়ার হোসেন। তাদের সাথে আরো শিক্ষানবিশ দলিল লিখকের বসার রুম ছাড়াও মাসুদ কম্পিউটার এন্ড ফটোস্ট্যাট, ইয়াছিন কম্পিউটার এন্ড ফটোস্ট্যাট, জননী প্রিন্টার্স, মদিনা টাইলস্ এন্ড স্যানিটারী ও কাউছারের কনফেকশনারী দোকান পুড়ে যায়।

আগুনে ১৪টি দোকানঘর ও দোকানে থাকা অন্তত ২০ জন দলিল লেখকের প্রায় ১০ হাজার পুরানো দলিল, খতিয়ানসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কয়েক লাখ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, অর্ধ শতাধিক কম্পিউটার ও প্রিন্টার মেশিন, ছাপাখানার মেশিন, কনফেকশনারী দোকানের টিভি, ফ্রিজ, টাইলসের দোকানের টাইলস ও স্যানিটারী মালামালসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেন। আগুন নেভানোর সময় হাজীগঞ্জ আর্মি ক্যাম্প ও থানা পুলিশ আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যবসায়ী ও দলিল লিখকরা এই অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা বলে দাবি করেন। কারণ হিসেবে দলিল লিখক আকতার হোসেন জানান, ৮/১০ দিন পূর্বে তাকে কথায় কথায় একজন লোক বলেছেন, সবাই যেন গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নেয়। তখন বিষয়টির গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আর এখন ৮/১০ দিন পর তাদের সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। বিষয়টি সন্দেহজনক ও রহস্যজনক।

অপর দলিল লিখক মামুনুর রশিদ স্বপন ও কম্পিউটার এন্ড ফটোস্ট্যাট দোকানের মাসুদ জানান, পৌরসভা থেকে তাদের দোকানঘরের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এরপর তারা জেলা প্রশাসকের কাছে গেছেন তা ফের বরাদ্দ আনতে। এ সময় জেলা প্রশাসক বিষয়টি দেখে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন এবং তাদেরকেই দোকানঘর বরাদ্দ দেয়ার কথা বলেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা আরো জানান,

দোকান বরাদ্দের জন্যে জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা চেয়েছেন। তারা এতো টাকা কোথা থেকে দেবেন বলে ওই কর্মকর্তাকে তখন জানান।

স্থানীয়রা হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ফোন পেয়ে কিছু সময়ের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এলাকার তরুণ ও যুবকদের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তা না হলে হয়তো শতাধিক দোকানঘর পুড়ে যেতো। এ সময় তারা জানান, দলিলপত্র (কাগজপত্র) থাকার কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব বিল্লাল হোসেন জানান, প্রায় ১০ হাজার পুরানো দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এতে চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন ১৫-২০ জন দলিল লিখক। তিনি বলেন, আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের দলিলগুলো নিয়ে দলিল লিখকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

পৌরসভার বাজার পরিদর্শক খাজা সাফিউল বাসার রুজমন জানান, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করার পর হাজীগঞ্জ পৌরসভা গত দু যুগেরও বেশি সময় স্থানীয়ভাবে দোকানঘর ভাড়া দিয়ে আসছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদ পৌরসভার ইজারা বাতিল করে। তাই পৌরসভাও ভাড়াটিয়াদের দোকানঘরের বরাদ্দ বাতিল করে নোটিস দেয় এবং দোকানঘর বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে।

হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, পৌরসভার ইজারা বাতিল হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের বরাদ্দও বাতিল করে নোটিস দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ভাড়াটিয়াগণ জেলা পরিষদ কার্যালয়ে আসলে তাদেরকে প্রতিটি দোকানঘরের পজেশন অনুযায়ী ১০/১২ লাখ টাকা এবং সে অনুযায়ী ওই মার্কেটে দোকান বরাদ্দ বাবদ এক-দেড় কোটি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। যেহেতু এই ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলেন, তাই তাদেরকে অগ্রাধিকারের কথাও বলা হয়েছিলো।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, আগুন লাগার কথা শুনেই আমরা, স্থানীয় তরুণরা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডিসিকে /এমজেডএইস

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়