প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৯
কুরআন হাদিসে শবে বরাতের প্রমাণ

শা'বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রজনী" শবে বরাত" নামে পরিচিত। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী। একটি অভিযোগ শবে বরাত কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। এ কথার জবাব হল, কুরআন ও হাদিসের কোথাও শবে বরাত থাকবে কেন, শবে বরাত কুরআন ও হাদীসের পরিভাষা নয়। যেমন : নামাজ, রোজা, ফেরেস্তা এগুলো কুরআন ও হাদিসের পরিভাষা নয়। কুরআনে ‘লাইলাতুম মুবারকা’। হাদিসে "লাইলাতুন নিসফী মিন শা'বান "।
পবিত্র কোরআন ও প্রসিদ্ধ তাফসীরের আলোকে শবে বরাত
আল্লাহ এরশাদ করেন-
হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ। (সূরা দুখান, আয়াত নং ১-৪)
এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য মুফাস্সিরগণের মতামত :
১. মালেকী মাযহাবের আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী বলেন-
ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি (মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও অন্যান্য তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন- ১। লাইলাতুম মুবারাকাহ-বরকতময় রজনী। ২। লাইলাতুল বারাআত-মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি। ৩। লাইলাতুর রহমাহ-রহমতের রাত্রি। ৪। লাইলাতুছ ছাক-সনদপ্রাপ্তির রাত্রি ইত্যাদি। (তাফসীরে ছাভী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০) খণ্ড খণ্ড
২.তাফসীরে জালালাইন শরীফে রয়েছে-নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। (তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায়)
৩.তাফসীরে তাবারী শরীফে রয়েছে-
আল্লাহ তায়ালার বাণী এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না। (তাফসীরে তাবারী শরীফ, পৃষ্ঠা ২২, খন্ড ১০)
৪. প্রসিদ্ধ তাফসীরে কুরতুবী রয়েছে-
ইমাম কুরতুবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এ রাতের ৪টি নাম আছে- (ক). লাইলাতুম মুবারাকা, (খ). লাইলাতুল বারাআত, (গ). লাইলাতুছ্ ছাক (ঘ). লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। (তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬ পৃষ্ঠা-১২৬)
৫. তাফসীরে বাগভী শরীফে বর্ণিত আছে-
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন । (তাফসীরে বাগভী, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা ২২৮)
এ রকম ৬৫টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মোবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবান অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহের নাম-
(১).তাফসীরে ইবনু আবি হাতেম, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-২১৪। (২).তাফসীরে রুহুল মায়ানী, খণ্ড-২৫, পৃষ্ঠা-১১০। (৩).তাফসীরে বাহরুল মুহীত, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৪। (৪).তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫৭০। (৫).তাফসীরে যাদুল মাছির, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২২। (৬).তাফসীরে নাসাফী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩০২। (৭). তাফসীরে নিসাপুরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (৮). তাফসীরে কাশ্শাফ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৭২। (১০). তাফসীরে নুকুত ওয়াল উয়ূন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (১১). তাফসীরে দুররে মানসূর, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৬৯। (১২). তাফসীরে খাজেন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৪৩। (১৩). তাফসীরে আল বোরহান, খণ্ড-২৩, পৃষ্ঠা-১১৬। (১৪). তাফসীরে রাযী, খণ্ড-১৭, পৃষ্ঠা-১৩৩। (১৫). তাফসীরে আলুসী, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-৪২৪। (১৬). তাফসীরে হাক্কী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬। (১৭).তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬, পৃষ্ঠা-১২৭। (১৮). তাফসীরে সাভী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩০২। (১৯). তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৪৬। (২০). তাফসীরে জামিউল বায়ান, খণ্ড-২০, পৃষ্ঠা-১৫১। (২১). তাফসীরে নুসূকী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২০। (২২). তাফসীরে কাদের, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। (২৩). তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৪). তাফসীরে কাসেমী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৫). তাফসীরে কোশাইরী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯০, (২৬). তাফসীরে আবু সাউদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৩০। (২৭). তাফসীরে আয়াতুল আহকাম, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। (২৮). তাফসীরে রুহুল বয়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৯৮। (২৯). তাফসীরে কাশেফুল আসরার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৯৪-৯৮ পৃষ্ঠা। (৩০). তাফসীরে মাওয়ারদী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১০২। (৩১). তাফসীরে সিরাজুম মুনির, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৫৮। (৩২). কানজুল ঈমান শরীফ।
হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলীল:
রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন-মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। হাদিসটি হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। {তথ্য সূত্র: (১).ইবনে মাজাহ শরীফ, পৃষ্ঠা-১০০, হাদীস নং-১৩৮৯, মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫। (২). ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩৮২। (৩). ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১৩৩, হাদীস নং-২৯। (৪). মিসবাহুজ জুজাযাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪২, হাদীস নং-৪৮৭। (৫). আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৩য়, হাদীস নং-২৭১৮। (৬).আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দীন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা” এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩১ আরো ৫ টি হাদীস রয়েছে।}
নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অতঃপর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। এই হাদিসটি হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)থেকে বর্ণিত, {তথ্য সূত্র: (১). ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮৩৩। (২).সহীহ ইবন হিব্বান, খণ্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৩৫৫, হাদীস নং ১৯৮০। (৩).আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিস আসসাহীহা”এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩৫, হাদীস নং-১১৪৪। (৪).মুজামুল কাবীর, খণ্ড-১৫, পৃষ্ঠা-২২১। (৫).ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১১৯, হাদীস নং-২২। (৬).আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪১। (৭).মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৬৫। (৮).আল হিলয়াহ, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১৯১। (৯).আসসুন্নাহ, হাদীস নং-৫১২।}
জামে তিরমিজি শরীফ ১ম খণ্ড, ৯২ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায় রয়েছে, যার নাম “বাবু মাযা ফি লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” সেখানে হযরত উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন-এক রজনীতে আমি দয়াল নবী রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বিছানায় পেলাম না। এই জন্য তাঁর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আমি জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে নবীজিকে আকাশের দিকে মাথা উঠানো অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ধারণা করছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার উপর অবিচার করেছেন? হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহ আনহা বললেন; আমি এমন ধারণা করিনি, ভেবেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকট গমন করেছেন। তখন নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন নিশ্চয় আল্লাহ পাক শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রে প্রথম আকাশে তাজাল্লী ফরমান-অতঃপর তিনি (আল্লাহ) বনী কালব গোত্রের:মেষের পশম সমূহের চেয়েও বেশী লোকের গুনাহ ক্ষমা করেন।” উল্লেখ্য যে, এই বনী কালব এর মেষের সংখ্যা ছিল ৩০,০০০।
{তথ্য সূত্র: (১).মুসনাদে আহমদ, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-১১৪, হাদীস নং-২৫৯৬, মোট ২১ টি হাদীস রয়েছে।(২).মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড-১০, পৃষ্ঠা-৪৩৮, হাদীস নং-৯৯০৭। (৩).শরহুস্সুন্নাহ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২৬, হাদীস নং-৯৯২। (৪).আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৪০, হাদীস নং-২৪। (৫).আল মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯৪।}
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, শাবানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাত যখন আগমন করে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তিনি তার সমস্ত বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষপোষণকারীকে ক্ষমা করেন না। হাদিসটি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,{তথ্য সূত্র: (১).বাজ্জার, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৯৩।(২).বায়হাকী শরীফ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭৮।(৩).শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৮০, হাদীস নং-৩৮২৭। (৪).আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর “সহিহ্ আত তারগীব ওয়াত তারহীব”, খণ্ড-৩, হাদীস নং-২৭৬৯। (৫).মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৬৫।}
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে মহান আল্লাহ রহমতের ভান্ডার নিয়ে তার সকল সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং এ রাতে হিংসুক ও হত্যাকারী ব্যাক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। হাদিসটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)থেকে বণিত, {তথ্য সূত্র: (১). মুসনাদে আহমদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৩৮, হাদীস নং-১৬৪২।}
আশরাফ আলী থানবী : কাওমী ও তাবলীগ সম্প্রদায়ের অন্যতম মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী বলে, ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ বলতে গিয়ে বলেন, কেউ কেউ লাইলাতুল মুবারাকাহ এর ব্যাখ্যা লাইলাতুল বরাত করেছেন। এর কারণ এই যে, বিভিন্ন বর্ণনায় এ সম্পর্কেও বার্ষিক ঘটনাবলীর সিদ্ধান্তের বিষয় এসেছে। ( তাফসীর বয়ানুল কুরআনে, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৯।)
শবে বরাত বলতে কিছু আছে কিনা :
হাদিসে "লাইলাতুন নিসফী মিন শা'বান "। শাবানের মধ্যবর্তী রজনী, শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। হাদিসে আছে তাই শবে বরাত আছে।
শবে বরাতে কি কি ইবাদত করা যায় :
নফল নামাজ, দোয়া-দুরুদ, তাসবীহ-তাহলীল, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, তাহাজ্জুদ নামাজ, কবর জিয়ারত সহ নফল ইবাদত হিসেবে যে কোন ইবাদত করা যায়।
শবে বরাতে কি হালুয়া রুটি বানাতে হবে :
শবে বরাতে হালুয়া রুটিই বানাতে হবে এমনটি নয়, বরং আপনার সামর্থ্যানুযায়ী পোলাও, ভাত, মাছ, গোস্তসহ ভালো ভালো খাবার খাওয়াতে বা দান করতে পারেন। তবে, হালুয়া রুটি সহজ হওয়ায় বা পছন্দের খাবার হওয়ায় অনেকে সহজ পথ অবলম্বন করে থাকে। এছাড়া টাকা পয়সা দান-সদকা করা যায়।
শবে বরাতে মসজিদে ইবাদত করা :
শবে বরাত বরকতময় একটি রাত্রী। এ রাত্রীতে ঘরে, মসজিদে সর্বত্রই আল্লাহর ইবাদত করা যাবে। একটি প্রশ্ন আসে, মসজিদে এসে নফল ইবাদত করা কি গুনাহের কাজ? অনেক মসজিদ শবে বরাতে তালা মেরে রাখা হয়। এটা খুবই অন্যায় কাজ। একদল গুনাহগার পাপী মসজিদে আসতে চায়, আর আরেকদল মসজিদে আসতে বাঁধা দেয়। কেহ সারা জীবন নামাজ, রোজা করেছে তাকে কি জান্নাতি বলা যায়? আরেকজন বর্তমানে নামাজ, রোজা করেনা সে জাহান্নামে যাবে এটাও কি শিউর। হয়তোবা আল্লাহ তাকে ভালো কাজের তাওফিক দান করতে পারেন।
পরিশেষে বলব, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়। শবে বরাতে আতশবাজিসহ নানাবিধ গুনাহের কাজ বর্জন করে, ঘরে বা মসজিদে ইবাদতে নিজেকে সপর্দ করে দেয়াই মু'মিনের কাজ। শবে বরাতের দাবী সকল মসজিদগুলো ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দিন।
লেখক, খতিব,মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ
বিষ্ণুপুর, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।