শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:০৬

একজন স্বপ্নবাজ তরুণ মাইনুল হাসান দুলন পাটওয়ারীর আকাঙ্ক্ষা

অনলাইন ডেস্ক
একজন স্বপ্নবাজ তরুণ মাইনুল হাসান দুলন পাটওয়ারীর আকাঙ্ক্ষা

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় মন্ত্রী-এমপি হয়েছে। প্রতিবার তারা‌ চাঁদপুরবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু তারপরও আজ পর্যন্ত উল্লেখ্য উন্নয়ন চাঁদপুরবাসীর কাছে অধরাই থেকে গিয়েছে। যে যখন আসে, স্বপ্ন দেখায়, নিজের পকেট বড় করে। আবার চলে যায়। উন্নয়ন শুধু কাগজে কলেমেই থেকে যায়।

গত ২০১৯-'২০ সালে চাঁদপুর জেলার মেঘনার চরে জাপানের অর্থায়নে Blue River Island Resort & Tourism Ltd.

-এর উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট হওয়ার কথা ছিল। যথারীতি ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের নিউজটি সেসময় সমগ্র চাঁদপুরে ছড়িয়ে পড়েছিলো উদ্দীপনা ও খুশির জোয়ার। ২০ হাজার মানুষের একসাথে অবকাশ যাপনের সুবিধা সম্পন্ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতো। শুরু থেকেই আমি প্রকল্পটির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। লোকাল কমিউনিকেশন, প্লানিং ও এক্সিকিউশনের দায়িত্বের কিছু অংশ ছিলো আমার এবং মুনসুর আলম মুন্না ভাইয়ের কাঁধে।

প্রকল্পের ইনোগারেশন প্রোগ্রামে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যম কর্মী এবং জাপানের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলো। সেসময় বিনিয়োগকারীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে তাদের সন্তুষ্টি ও আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। সেই আলোকেই আমরা পরবর্তীতে প্রকল্পের সাম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক প্রকল্পটির খসড়া রুপরেখা দাঁড় করিয়ে তৎকালীন স্থানীয় একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করি। তিনি আমাদেরকে প্রকল্পের প্রয়োজনে সমস্তরকম সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।

মূলত এই প্রকল্পটির জন্য চাঁদপুর শহরের পার ঘেঁষে ৩০/৩৫ বছর পুরোনো ছোট ছোট রিভার আইল্যান্ড বা স্থায়ী চরের ৬’ শ একর জমি অধিগ্রহন করতে হতো। শুরুর দিকের কাজে স্থানীয় মন্ত্রী, চাঁদপুরের তৎকালীন মেয়র এবং ডিসির কাছ থেকে আমরা ভালোই সহযোগীতা পাচ্ছিলাম।

এরপর আমরা প্রকল্পের চুরান্ত রুপরেখা অনুযায়ী একটি প্রস্তাবনা ডিসি অফিসে প্রেরণ করি। প্রস্তাবনায় আমরা তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে ৬’ শ একর জমি অধিগ্রহণের অনুরোধ জানাই। প্রকল্প প্রস্তাবনার একটি শর্ত ছিলো রিসোর্টটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রকল্প এলাকার ৬/৭ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো ড্রেজিং বা নদী খনন কার্যক্রম যেন না হয়।

এতদিন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু এই প্রস্তাবনা প্রেরণের পর থেকেই দেখি কোনো এক অজানা কারণে সরকারী প্রশাসনের সহযোগীতা কমে যেতে থাকে। আমাদের ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরতে থাকে। অন্যদিকে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক পরিবহন অধিদপ্তর, নদী রক্ষা কমিশন, বন অধিদপ্তর থেকে টুরিজম বোর্ডসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জায়গার অনুমোদন সংগ্রহ থেকে শুরু করে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে ফেলি। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যলয় থেকে আমাদের ফাইলের আর মুক্তি ঘটে না। এক পর্যায়ে নোটিস করি আমাদের ফাইলটি এক জায়গাতেই স্থবির হয়ে পড়ে আছে।

এই স্থবিরতার কারণ ঘাটতে গিয়ে খেয়াল করলাম, আমাদের প্রকল্প এলাকার আশেপাশে তো বটেই এমনকি প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত চরগুলোতেও স্থানীয় সেই মন্ত্রীর ভাই ও তার পার্টনার ক্ষমতাসীন দলের আর কিছু নেতাকর্মী মিলে সমানে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। ইতিমধ্যেই দুটি চর সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারলাম, আমাদের ফাইল আটকে থাকা ও অসহযোগীতার কারণ আসলে এই বালু উত্তোলনের ব্যবসা।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে চূড়ান্ত অসহযোগীতার পাওয়ার পর এক পর্যায়ে আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম প্রায়, ঠিক সেসময় চাঁদপুর শহরের মেয়র আমাদের ডেকে জানালেন ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে চাঁদপুর পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসনের কাছে কিছু জমি আছে, আমরা চাইলে সেখানে কিছু করতে পারি।

আমাদের মনে তখন কিছুটা আশার সঞ্চার হলো। আবার নতুন উদ্যমে কাজে নেমে পড়লাম। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।

আমরা পুনরায় প্রকল্পের খসরা নতুন করে তৈরী করে সেখানে প্রকল্পের সাম্ভাব্যতা যাচাই করলাম। নতুন করে প্রকল্প স্টাডি করলাম। ভূমির মান যাচাইসহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত অধিদপ্তরের পার্মিশন নেয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ মোটামুটি গুছিয়ে আনার পর এবার আবার মেয়রের কাছ থেকে অসহযোগীতামূলক আচরণ পেতে শুরু করলাম। এদিকে জাপানের বিনিয়োগকারীরা কয়েকবার করে এসে প্রকল্পের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। কিন্তু মেয়র সাহেবকে ফোন দিলে তিনি আর ফোন ধরেন না। প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণ এগিয়ে আসতে থাকলেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। শেষমেশ আমরা আবিস্কার করলাম সেই জমিগুলোও মেয়র সাহেব তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবহারের জন্য অন্য একটি কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছেন।

ফলাফল চাঁদপুর বাসীর স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। ৬ হাজার কোটি টাকার এত বড় একটা বিনিয়োগের সুযোগ হাত ছাড়া হলো এবং আমাদের ৪ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রকল্প অনুমোদনের কাজে খরচ হওয়া কাড়ি কাড়ি টাকা সবটাই মেঘনা নদীর পানিতে ভেসে গেল।

সেসময় থেকে আজ অবধি অনেকেই সেই প্রকল্পের কথা জিজ্ঞেস করলে আমি এড়িয়ে যেতাম। ভয়ে মুখ খুলতাম না। কার কাছেই বা বলব? অভিযোগ জানানোর মতো জায়গা বা সাহস কোনোটাই ছিলো না। ডাঙায় নেমে আর যাইহোক কুমিরের সাথে লড়াই করা যায় না। ফলত চুপ করে থাকাকেই শ্রেয়তর মনে করেছিলাম। আজ উত্তরটা জানাতে ইচ্ছে করল তাই জানালাম।

তবে এখনো আমরা স্বপ্ন দেখি, হয়তো কখনো এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়