প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:০০
সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত’ সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত, আহত ৪

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম), ৩ মার্চ: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার (৩ মার্চ) রাতে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
|আরো খবর
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় প্রবেশ করে। হঠাৎ তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮) গুলিবিদ্ধ হন।
মসজিদের মাইকে ঘোষণা, গণপিটুনিতে মৃত্যু
হঠাৎ গুলির শব্দে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে ঘোষণা দেন। মুহূর্তেই শতাধিক লোক জড়ো হয়ে অস্ত্রধারীদের ধাওয়া করে। এ সময় অটোরিকশায় থাকা দুই যুবককে ধরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। পরে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করা হয়।
পুলিশের অভিযান, অস্ত্র উদ্ধার :
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। তবে নিহত দুই যুবকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, "ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এখনো নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।"
পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা
ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, নিহত দুই যুবক প্রকৃতপক্ষে ডাকাত ছিল কিনা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এলাকায় গিয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বেগ
এই ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে স্থানীয়রা বলছেন, তারা নিজেদের জানমাল রক্ষা করতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্দেহের ভিত্তিতে গণপিটুনি দেওয়া ঠিক নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সময় দেওয়া উচিত ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে এবং গণপিটুনির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত করছে।
(সংবাদটি আপডেট করা হবে)
ডিসিকে/এমজেডএইচ