বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫, ০৯:১১

অনলাইন জুয়ার সাম্রাজ্য : ‘Ume’ প্ল্যাটফর্মের আড়ালে কোটি টাকার প্রতারণা

নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইল!

তথ্য-প্রযুক্তি কণ্ঠ ডেস্ক
অনলাইন জুয়ার সাম্রাজ্য : ‘Ume’ প্ল্যাটফর্মের আড়ালে কোটি টাকার প্রতারণা

‘Ume’ প্ল্যাটফর্মটি তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করার জন্যে স্লোগান দেয় “লাইভ আড্ডা, গিফট ইনকাম” আর “সহজে আয় করুন”। এর আওতায় একাধিক সাইট ও অ্যাপ পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রথমে টাকা বা কয়েন কেনার জন্যে ব্যবহারকারীদের প্রলুব্ধ করা হয়। কিন্তু, এখানে বিষয়টি শুধুমাত্র প্রতারণা ‘গিফট’ বা ‘টিপ’ দেয়ার পর ব্যবহারকারীরা পাচ্ছেন না তাদের প্রতিশ্রুত আয়ের প্রতিফলন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কিন্তু প্ল্যাটফর্মের শিমুলের মতো মালিকরা টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ‎‎অথচ, মূল সত্য হলো এই প্ল্যাটফর্মটি আসলে এক ধরনের আড়ালে চলে থাকা অনলাইন ক্যাসিনো। প্রথমে এখানে ফাঁদে পড়ার পর, ব্যবহারকারীদের অর্থের বিনিময়ে খেলতে বলা হয় এবং বিভিন্ন ‘টোকেন’ বা ‘কয়েন’ কেনার মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে আরও বড়ো ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েন। এরপর, এই প্ল্যাটফর্মের, একাধিক অনলাইন জুয়া সাইট যেমন 1xBet বা অন্য বিদেশি ক্যাসিনো সাইটের মতো নয়, এখানে প্রথমে কয়েন কিনতে হয় এবং পরবর্তীতে সেই কয়েনের মাধ্যমে ক্যাসিনোতে বাজি ধরতে হয় ।

‎‎শিমুলের অপকর্ম : নারীদের ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল!

‎‎বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, শিমুল নিজেই Ume প্ল্যাটফর্মের একটি স্লটের মালিক এবং তিনি এই সাইটের মাধ্যমে একটি গভীর নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। বিশেষত, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি নারীদের ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিং চক্র তৈরি করেছেন। একাধিক প্রবাসী যুবক জানিয়েছেন, শিমুল তার ঁসব চক্রের মেয়েদের ব্যবহার করে তাদের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন, যা পরে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করা হয়।

‎‎এক প্রবাসী যুবক জানান, “তার (শিমুলের) স্ত্রীই আমাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিয়েছে। আমি প্রতারণার শিকার, সে আমাকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ফেলে টাকা আদায় করেছে।”

‎‘Ume’ : আড্ডার আড়ালে গেম এবং ক্যাসিনো চক্র!

‎এলাকার জনগণ অভিযোগ করছেন যে, ‘টসব’ প্ল্যাটফর্মের সাইটে আসলে একদিকে তরুণ-তরুণীরা ‘লাইভ আড্ডা’ দিলেও, এই আড্ডার আড়ালে চলছে বিশাল ক্যাসিনো চক্র। এই গেমের ভেতরে প্রবেশ করলে কোনো কিছুই বোঝার উপায় নেই। এর একদম ভেতরের স্তরে চলে যায় একাধিক অনলাইন জুয়া সাইট, যা ডলার বা বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করতে বাধ্য করে। এক ধরনের ক্যাসিনো গেমে অংশগ্রহণের পর, সেখানে যে কোনো সময় একজন ব্যবহারকারী হেরে যেতে পারে এবং তার সঞ্চিত অর্থ হারিয়ে ফেলে।

‎‎এছাড়া, প্রথম কয়েন কিনে এখানে খেলা শুরু করা হয়। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন লোভনীয় প্রলোভন দেখানো হয়, যাতে ব্যবহারকারীরা বিশ্বাস করে যে, তারা লাভ করতে পারবে, কিন্তু শেষে তারা জানতেই পারে না তাদের টাকা কোথায় যাচ্ছে।

‎বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি : একটি গভীর নেটওয়ার্ক!

‎বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, শিমুল তার নিজস্ব বোর্ডে থাকা একাধিক লোকের মাধ্যমে এই পুরো নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে। তাকে সহযোগিতা করার জন্যে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে এই গ্রুপে জয়েন্ট করানো হয়েছে এবং একে একে বিভিন্ন স্লট ও প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিমুল এবং তার সহযোগীরা এই ভয়ঙ্কর চক্র চালিয়ে যাচ্ছে। তার পরিচালিত নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের লুকানো এডভান্সেড টেকনিক ব্যবহার করে নিরাপদে এই সাইবার অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।

‎প্রশাসনের কাছে দাবি : এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে!

‎এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে মাঝে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলেও, শিমুলের মতো ক্যাসিনো চক্র প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে, যার ফলে চক্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি থেকে অনেকাংশে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের ভয়ংকর চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনের গতি আরো ত্বরান্বিত করতে হবে, নয়তো আরো মানুষ এই চক্রের শিকার হতে থাকবে।

‎‎এখনই সময়, প্রশাসনকে আরো তীব্র পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দ্রুত এই ‘টসব’ প্ল্যাটফর্মসহ এর অন্যান্য ক্যাসিনো সাইট বন্ধ করে সমাজের ক্ষতি থেকে যুবকদের রক্ষা করতে হবে।

কে এই সাইবার মাফিয়া?

যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের সাইবার মাফিয়া শিমুল। এক সময়ের সাধারণ ইটভাটার শ্রমিক শিমুল আজ কোটি টাকার মালিক, কিন্তু তার এই দ্রুত উত্থান কোনো সৎ পথে হয়নি। তার উত্থানের পেছনে রয়েছে একটি ভয়ঙ্কর অনলাইন জুয়া চক্র, যার নাম ‘টসব’Ñএকটি প্ল্যাটফর্ম যা প্রবাসী যুবক-যুবতীদের লক্ষ্য করে ভয়ংকরভাবে তাদের জীবন ধ্বংস করছে। এর পাশাপাশি নারীদের ব্যবহার করে ভিডিও কলের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। তার বাড়ি যশোর হলেও সারাদেশের মধ্যে তার এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আর সারাদেশের যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীরা প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে আত্মহত্যাও করছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়