প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫২
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া-প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের এক নীরব বিপদ

আজকের পৃথিবীকে বলা হয় ডিজিটাল যুগ। হাতের স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে দ্রুত আর সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এই আরামদায়ক প্রযুক্তি যখন চিন্তা-ক্ষমতা, স্মৃতি আর মনোযোগ কেড়ে নিতে শুরু করে, তখন এক নতুন মানসিক সমস্যার জন্ম হয়Ñএর নাম ডিজিটাল ডিমেনশিয়া।
|আরো খবর
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া বলতে বোঝায় সেই অবস্থাকে, যখন মানুষ অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে করতে নিজস্ব মনে রাখার ক্ষমতা হারাতে শুরু করে, মনোযোগ কমে যায়, এবং মস্তিষ্ক অলস হয়ে পড়ে। আমরা যা আগে মুখস্থ রাখতাম বা মাথায় হিসাব করতাম, এখন সবই স্মার্টফোনে লিখে রাখি বা খুঁজে দেখি। ফলে মস্তিষ্ক তার স্বাভাবিক কাজ কম করতে থাকে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে শুরু করে।
আগে মানুষ ফোন নম্বর মুখস্থ রাখত, ঠিকানা মনে রাখত, বই পড়ে ধারণা তৈরি করত। এখন শিশু থেকে প্রবীণÑসকলেই গুগলের ওপর নির্ভর। যে প্রশ্ন মনে আসে, সঙ্গে সঙ্গে গুগল। মস্তিষ্ক আর ভাবতে চায় না। মনে রাখার শক্তি ব্যবহার না করলে মাংসপেশির মতো এটিও দুর্বল হয়ে যায়।
প্রধান লক্ষণগুলো
* গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলে যাওয়া
* মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হওয়া
* এক কাজ করতে করতে হঠাৎ অন্যদিকে মন চলে যাওয়া
* কথোপকথনের মাঝপথে শব্দ খুঁজে না পাওয়া
* মানসিক অস্থিরতা, খিটখিটে স্বভাব
* ঘুমের ছন্দ নষ্ট হওয়া
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা মস্তিষ্ককে একমুখী উত্তেজনা দেয়, কিন্তু বাস্তব জীবনের মতো গভীর চিন্তা বা আবেগ তৈরি করে না। ফলে আবেগ-প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে। শিশুরা বইয়ের চেয়ে ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে, কারণ সেখানে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, সব কিছু চোখের সামনে তৈরি করা হয়ে যায়। ঠিক এখান থেকেই শুরু হয় ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি।
শুধু শিশু নয়, অনেক প্রবীণ মানুষও দিনভর মোবাইলে খবর দেখেন, গেম খেলেন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটান। কিন্তু এই সময়টা যদি আলাপ, হাঁটা, বই পড়া বা শখের কাজে ব্যয় করা যেত, তাহলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় থাকত। বিশেষ করে প্রবীণ বয়সে মানসিকভাবে ব্যস্ত থাকা খুব প্রয়োজন। কারণ অলস মস্তিষ্কেই স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বেশি।
সমাধান কী হতে পারে?
* প্রতিদিন কিছু সময় বিনা মোবাইলে কাটানো
* হাতের কাজ, গল্প করা, বই পড়া, লেখার অভ্যাস তৈরি করা
* হাঁটা, ব্যায়াম ও সামাজিক মেলামেশা বৃদ্ধি করা
* প্রয়োজনে পরিবারের সবাই মিলে “ডিজিটাল বিরতি সময়” ঠিক করা
* স্বনির্ভর স্মরণশক্তি ব্যবহার করাÑযেমন নাম, নম্বর বা ছোট কাজ মনে রাখার চেষ্টা করা
শেষ কথা হলো, প্রযুক্তি আমাদের শত্রু নয়। বরং প্রযুক্তি যেন মস্তিষ্কের জায়গা নিয়ে না নেয়, সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিজের স্মৃতি, মনোযোগ আর চিন্তার ক্ষমতা রক্ষা করতে হলে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে সংযম ও সচেতনতার সঙ্গে। এই সচেতনতাই আমাদের বাঁচাতে পারে ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার নিঃশব্দ ফাঁদ থেকে।
হাসান আলী : প্রবীণ বিষয়ে লেখক।








