শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের যত্ন

ডাঃ বিউটি রানী সরকার
গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের যত্ন

গর্ভবতী হওয়া প্রতিটি মায়ের জন্যে সম্মানের। এজন্যে সন্তান ধারণ করেছেন বুঝতে পারলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। গর্ভধারণের পর থেকেই হবু মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। কেননা মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করেই ভ্রূণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি লাভ করে এবং মানবশিশুতে পরিণত হয়। আসুন জেনে নিই, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সুস্থতায় করণীয়গুলো।

গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি ও খাদ্যতালিকা

গর্ভবতী মায়েদের দিনে তিনবার মূল খাবারের পাশাপাশি দুবার নাশতা গ্রহণ করা উচিত। স্বাভাবিকের তুলনায় এ সময় দিনে ৩৫০ থেকে ৪৫০ ক্যালরি বেশি খেলেই যথেষ্ট। তবে খাদ্যতালিকা হতে হবে সুষম। অর্থাৎ শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেলস্, আঁশ ও পানি এ ৭টি পুষ্টি উপাদান পরিমাণমতো খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে।

শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্যে আমিষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাছ, কম চর্বিযুক্ত মাংস, ডিম, ডাল, বাদাম ও বীজ জাতীয় যে কোনো খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে। আবার, ডিম ও মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রনও থাকে, ফলে তা গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। তবে এ সময় রান্নার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ভালো। এছাড়া মাছ-মাংস কিংবা ডিম ভালোমতো সিদ্ধ হয়েছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ফলমূল এবং শাক-সবজি গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় মা অপুষ্টিতে ভুগে থাকলে এর প্রভাব মা এবং সন্তান দুজনের উপরই সমানভাবে পড়ে। তাই গর্ভস্থ সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশসহ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণের জন্যে গর্ভবতী মায়ের সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সচেতন থাকতে হবে এসব বিষয়েও

পোশাক : সুতির ঢিলেঢালা পোশাক। হিল জুতা পরিহার করতে হবে। পেটিকোট টাইট করে না পরাই ভালো।

ভ্রমণ : গর্ভধারণের প্রথম ও শেষ দিকে ভ্রমণ নিয়ে সচেতন হতে হবে। প্রথম তিন মাস এবং শেষ তিন মাস ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

গোসল : প্রতিদিন গোসল করা আবশ্যক।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : দাঁত ব্রাশ করা, চুল, নখ, পোশাক পরিষ্কার রাখতে হবে।

ব্যায়াম ও বিশ্রাম : প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও সকাল-সন্ধ্যা ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। দিনে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম এবং রাতে আট ঘণ্টা ঘুম গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সহবাস : গর্ভের প্রথম ৩ মাস ও শেষ ২ মাস সহবাস করা উচিত নয়।

ওষুধ : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না।

গর্ভবতী মায়ের টিকা বা ভ্যাকসিন

গর্ভাবস্থার আগে যদি পাঁচবার টিটেনাস টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলে আর কোনো টিকার প্রয়োজন নেই। যদি এ রকম না হয়, তাহলে পাঁচ থেকে ছয় মাসে টিটেনাস টিকার প্রথম ডোজ নিতে হবে। এর এক মাস পর আরো একটি টিটেনাস টিকা নিতে হবে। পরবর্তী গর্ভধারণ পাঁচ বছরের মধ্যে হলে শুধু পঞ্চম মাসে একটি টিটেনাস টিকা দিলেই হবে। তবে দ্বিতীয় গর্ভধারণের বিরতি পাঁচ বছরের বেশি হলে পরবর্তী গর্ভধারণেও দুইবার টিকা নিতে হবে।

নিয়মিত চেকআপ

গর্ভবতী মায়ের জন্য সর্বনিম্ন চেকআপ তিনটি। প্রথমটি তৃতীয় মাসে, দ্বিতীয়টি ষষ্ঠ মাসে এবং সর্বশেষটি নবম মাসে। তবে সম্ভব হলে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র কাছে থাকলে প্রতি মাসে চেকআপ করানো উত্তম।

চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের স্বাভাবিক সময়সূচি

-প্রথম পর্যায়ের সাক্ষাৎ : মাসিক বন্ধ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে।

-দ্বিতীয় পর্যায়ের সাক্ষাৎ : প্রতি মাসে একবার করে সপ্তম মাস পর্যন্ত।

-তৃতীয় পর্যায়ের সাক্ষাৎ : প্রতি মাসে দুইবার করে অর্থাৎ প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর সপ্তম থেকে নবম মাস পর্যন্ত।

-চতুর্থ পর্যায়ের সাক্ষাৎ : নবম মাস-পরবর্তী প্রতি সপ্তাহে একবার করে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত।

চেকআপের সময় যেসব বিষয় পরীক্ষা করা হয়

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসে যে চেকআপ করা হয় তখন গর্ভবতী মায়ের ওজন, রক্তের প্রেসার ও রক্তশূন্যতার জন্য পরীক্ষা (সিবিসি) করা হয়। চতুর্থ মাস থেকে পূর্ববর্তী তিনটি বিষয়ের পরীক্ষাসহ আলট্রাসনোগ্রামের পরীক্ষা করা হয়, যার মাধ্যমে পেটে জরায়ুর উচ্চতা, বাচ্চার নড়াচড়া, বাচ্চার হার্টবিট- এগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়।

ওজন বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ : প্রথম তিন মাসের পর থেকে স্বাভাবিক ওজনের যে কোনো মায়ের প্রতি মাসে দুই কেজি করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। তবে প্রথম তিন মাস ওজন বৃদ্ধি না-ও হতে পারে। বরং আধা কেজি ওজন কমতে পারে। শেষ তিন মাসে মায়ের স্বাভাবিক ওজনের থেকে মোট ১১ কেজি ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। যাদের ওজন অনেক বেশি, তাদের ওজন বৃদ্ধি পাঁচ থেকে সাত কেজির চেয়ে বেশি হওয়া উচিত নয়।

গর্ভকালীন জটিলতার চিহ্নসমূহ

গর্ভকালীন বেশ কিছু জটিলতা হতে পারে। সেগুলোর জন্য কিছু চিহ্ন বা লক্ষণ রয়েছে, যা পর্যবেক্ষণ করার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি।

প্রথম তিন মাসে জটিলতার লক্ষণসমূহ : অস্বাভাবিক বমি, রক্তক্ষরণ ও প্রচণ্ড পেট ব্যথা।

তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ মাসে জটিলতার লক্ষণসমূহ : রক্তক্ষরণ, পেট ব্যথা ও বাচ্চার নড়াচড়া টের না পাওয়া।

সপ্তম থেকে নবম মাসে জটিলতার লক্ষণসমূহ

-অতিরিক্ত মাথা ব্যথা।

-চোখে ঝাপসা দেখা।

-সারা শরীর ফুলে যাওয়া।

-পানি ভাঙা।

-মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ।

-সম্ভাব্য ডেলিভারির তারিখের অনেক আগেই লেবার পেইন শুরু হওয়া।

প্রসবকালীন স্বাভাবিক কিছু সমস্যা

প্রথম তিন মাসে হালকা বমি বমি ভাব অথবা বমি ও মাথা ঘোরানো থাকতে পারে। গর্ভকালীন কোমরে ব্যথা হতে পারে এবং তা শেষ দিকে বেড়ে যেতে পারে। হাতে-পায়ে ব্যথা ও অন্যান্য অঙ্গে ব্যথা হতে পারে। সপ্তম মাসের পর থেকে সামান্য পা ফোলা হতে পারে। এসব বিষয়ের জন্য মাকে আশ্বস্ত করতে হবে। কারণ এগুলো মায়ের স্বাভাবিক কারণেই হতে পারে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্ন

গর্ভবতী মা চিন্তামুক্ত থাকবেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত গর্ভবতী মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রকাশ করা। সব সময় আনন্দচিত্ত রাখার চেষ্টা করা। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করা। যে কোনো ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকা উচিত।

প্রসব-পূর্ব পরিকল্পনা

কোথায় প্রসব করাতে চান, বাড়িতে নাকি হাসপাতালে- এ বিষয়ে মনে মনে একটি পরিকল্পনা রাখা। জরুরি অবস্থায় বাহনের ব্যবস্থা, যেমন : অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি অথবা রিকশা বা ভ্যানচালকের নম্বর রাখা উচিত এবং তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত, যাতে জরুরি অবস্থায় তিনি সহযোগিতা করতে পারেন। প্রসবকালীন শেষ দিকে যে কোনো জরুরি অবস্থার জন্য কিছু খরচ হতে পারে। এজন্যে আগে থেকেই কিছু সঞ্চিত অর্থ কাছে রাখা ভালো। গর্ভবতী মায়ের জটিলতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তক্ষরণ। এ ধরনের জটিলতা যে কারো হতে পারে। এর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে একই গ্রুপের এক বা একাধিক রক্তদাতার মোবাইল নম্বর সংগ্রহে থাকা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়