শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৯

শিশু গড়ার কারিগর ও মূল্যবোধের স্থপতি

রাশেদা আতিক রোজী
শিশু গড়ার কারিগর ও মূল্যবোধের স্থপতি

‘শিশু’ শব্দটি শুনলেই যেখানে মনে হয় শুভ্র-স্নাতো কুয়াশাময় সকাল। কেননা এই শব্দটির আদ্যক্ষর গুলো কে যদি আমরা সাজিয়ে বলি- “শুভ্রতার শিশির”। এই সভ্যতার যুগে শিশুগুলোকে ভালো আচরণ শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব শুধু পরিবারের নয়-বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরও।

আজকাল সমাজে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও শিষ্টাচারের অভাব প্রকটভাবে লক্ষ্যণীয়। এখন আর সমাজে শ্রদ্ধা-ভক্তি আগের মত নেই। এখন আর ছোটরা বড়দের সালাম-আদাব দেয় না। পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নেই। কেউ কাউকে মানে না। ছোটরা বড়দের সাথে মুখে মুখে তর্ক করে। এমন কী বড়কে অসম্মান করতেও দ্বিধা করে না। বিনয়ীভাবেরও অভাব। শিক্ষকদের সাথেও ঔদ্ধত্য আচরণ শিক্ষার্থীরা করে। পাবলিক পরিবহনে, ডাইনিং টেবিলে, টেলিফোন আলাপে কিংবা মসজিদ-মন্দিরে বা অফিস-আদালতে বা খেলার মাঠে, হাটে-বাজারে ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই শিষ্টাচার-ম্যানারের অভাব লক্ষ্যণীয়-এগুলো খুবই উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে, কারণ শিশুদের মধ্যে মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারের বীজ রোপণের শ্রেষ্ঠ সময় এটি। প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের জীবনে শিষ্টাচার ও ভালো আচরণের ভিত্তি স্থাপনে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বয়সে শিশুরা যেমন দ্রুত শেখে, তেমনি তাদের আচরণগত অভ্যাসগুলোও গড়ে ওঠে। বিদ্যালয় এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে যেখানে শিশুরা কেবল লেখাপড়াই নয়, বরং সামাজিক রীতিনীতি এবং অন্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনও শিখতে পারে। নিচে সুসংগঠিত উপায়ে শিক্ষকদের করণীয় তুলে ধরা হলো:

শ্রেণিকক্ষে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অনুশীলন

পাঠ্যক্রমের সাথে সমন্বয় : শুধু বইয়ের পাতায় নয়, দৈনন্দিন শিক্ষাদান পদ্ধতির অংশ হিসেবেই নৈতিকতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা, এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গল্পের ছলে, খেলার মাধ্যমে বা ছোট ছোট নাটকের মাধ্যমে এগুলো শেখানো যেতে পারে।

আদর্শ আচরণ প্রদর্শন : শিক্ষকরা নিজেরাই শিক্ষার্থীদের কাছে রোল মডেল। তাদের নিজেদের আচরণে শ্রদ্ধা, বিনয়, ধৈর্য এবং সহানুভূতির প্রকাশ ঘটাতে হবে। শিক্ষকের বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ দেখে শিক্ষার্থীরাও উৎসাহিত হবে। শিক্ষকরা ক্লাসরুমে এবং বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে শিষ্টাচারের উদাহরণ তৈরি করবেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সালাম দেওয়া, শুভেচ্ছা বিনিময়, এবং সম্মানসূচক ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে দৈনন্দিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করা ।

নিয়মিত আলোচনা ও বিতর্ক : শ্রেণিকক্ষে ছোট ছোট আলোচনা ও বিতর্কের আয়োজন করা যেতে পারে যেখানে শিক্ষার্থীরা শিষ্টাচার, নৈতিকতা এবং সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে তাদের ভাবনা প্রকাশ করতে পারবে। এতে তাদের চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটবে।

পারিবারিক সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।

অভিভাবক সভা: নিয়মিত অভিভাবক সভার আয়োজন করে সমাজে বর্তমান শিষ্টাচারের অভাব এবং এর কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিভাবকগণকে এই বিষয়ে সচেতন করা এবং বাড়িতেও শিশুদের একই মূল্যবোধ শেখানোর জন্য উৎসাহিত করা জরুরি।

পরামর্শ ও নির্দেশনা : প্রয়োজনে ব্যক্তিগতভাবে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে তাদের শিশুদের আচরণগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সেগুলো সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষাই শিশুর প্রাথমিক ভিত্তি।

যোগাযোগ স্থাপন : বিদ্যালয় এবং পরিবারের মধ্যে একটি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, যাতে শিশুদের ভালো আচরণ বা কোনো খারাপ আচরণ উভয়ই দ্রুত শিক্ষক ও অভিভাবকের নজরে আসে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

ব্যবহারিক শিষ্টাচার। শিক্ষা সালাম-আদাব ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন: রোল-প্লে ও সিমুলেশন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাস্তব পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা দেওয়া। যেমন: শিক্ষার্থীদের ছোটবেলা থেকেই বড়দের সালাম বা আদাব দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিদ্যালয়ে প্রবেশ বা প্রস্থানের সময় শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রতি এটি অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে হবে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বয়স্ক ব্যক্তিকে আসন দেয়া,খেলার মাঠে প্রতিপক্ষকে সম্মান প্রদর্শন।

ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: ধন্যবাদ”, “অনুগ্রহ করে”, “দুঃখিত” বলা, অনুমতি নিয়ে কিছু করা, এবং ভাগ করে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো শেখানো যেতে পারে। অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্য পেলে বা কোনো সুবিধা গ্রহণ করলে ‘ধন্যবাদ’ বা ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করার গুরুত্ব শেখাতে হবে।

নিয়মকানুন মেনে চলা : পাবলিক পরিবহন, খাবারের টেবিল, মসজিদ-মন্দির, খেলার মাঠ, লিফট ব্যবহার ইত্যাদি সব জায়গায় যে নির্দিষ্ট শিষ্টাচার ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, সে বিষয়ে তাদের ধারণা দিতে হবে এবং বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সেগুলোর অনুশীলন করাতে হবে। যেমন, লাইনে দঁাড়ানো, চিৎকার না করা, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ইত্যাদি। স্কুলের বার্ষিক পিকনিকে বা অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনে টেবিল (ডাইনিং) ম্যানার শেখানো যেতে পারে।

কথাবার্তা ও যুক্তিতর্ক : কীভাবে বিনয়ের সাথে নিজের মতামত প্রকাশ করতে হয়, বড়দের সাথে কথা বলার সময় কীভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে হয় এবং যুক্তিতর্কের সময়ও কীভাবে শালীনতা বজায় রাখতে হয়, তা শেখানো উচিত।

বিদ্যালয়ভিত্তিক কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক চর্চা

মূল্যবোধভিত্তিক অনুষ্ঠান: বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে যেখানে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত নাটক, গান, আবৃত্তি বা বিতর্ক প্রতিযোগিতা থাকবে।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি : ভালো আচরণ, বিনয় এবং শিষ্টাচারের জন্য শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা বা স্বীকৃতি প্রদান করা যেতে পারে। এটি অন্যদেরও ভালো আচরণে উৎসাহিত করবে। কেননা পুরস্কার কে আমরা ধরে নেই ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ।

শিষ্টাচার ক্যাম্পেইন : সালাম সপ্তাহ” বা “ভদ্রতা মাস” পালনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম চালু করা। শিষ্টাচার প্রদর্শনকারী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা, যেমন-সার্টিফিকেট দেওয়া।

কমিউনিটি সার্ভিস : ছোট ছোট কমিউনিটি সার্ভিস বা সেবামূলক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যা তাদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও পরোপকারের মনোভাব গড়ে তুলবে।

সামাজিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার ফিরিয়ে আনার এই দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রাথমিক শিক্ষকগণ যদি শুধু ‘জ্ঞানদাতা’না হয়ে ‘মূল্যবোধের স্থপতি’হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে সমাজের বর্তমান নৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব,তাদের সুসংগঠিত প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে একটি শ্রদ্ধাশীল ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।

এই শিশু গড়ার কারিগররা কেমন হবে, বাচনিক ও শারীরিক অঙ্গ-ভঙ্গি, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, শিশুর সাথে শিশুসুলভ আচরন-ব্যবহার, সহযোগিতা-সহমর্মিতা সকল কিছু বিবেচনা করে একজন শিক্ষকের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় । প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে ‘বিশেষজ্ঞ’ হতে হলে কী যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা উচিত?

প্রাথমিক শিক্ষা একটি আলাদা ও স্বতন্ত্র চর্চাক্ষেত্র। কেবল ‘শিক্ষা’ বোঝা কিংবা শিক্ষকতা করা এই ক্ষেত্রে ‘বিশেষজ্ঞ’ হবার জন্য যথেষ্ট নয়।

১. শিক্ষাগত যোগ্যতা:

শিশুশিক্ষা / প্রাথমিক শিক্ষা / শিক্ষা মনোবিজ্ঞান / শিক্ষা প্রশাসন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি (গধংঃবৎং বা চযউ) থাকা আবশ্যক।

টিচার ট্রেনিং, কারিকুলাম স্টাডিজ, শিক্ষাব্যবস্থাপনা, শিশু মনোবিজ্ঞান ইত্যাদির উপর বিশেষায়িত জ্ঞান থাকা জরুরি।

২. ক্ষেত্রভিত্তিক অভিজ্ঞতা: প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা যেমন: শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, ক্লাস্টার বা থানা পর্যায়ে কাজ।

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শেখার ধরণ, শিক্ষকের বাস্তবতা, পাঠ্যক্রম, মূল্যায়নব্যবস্থা, পঠনপাঠনের পরিবেশ সম্পর্কে মাঠপর্যায়ে অভিজ্ঞতা।

৩. গবেষণাভিত্তিক কাজ: প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণা/মুল্যায়ন/প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থাকা—যেমন, শিক্ষা প্রকল্প মূল্যায়ন, কর্মসূচি উন্নয়ন, শিক্ষাগত হস্তক্ষেপ ইত্যাদি।

ডেটা বিশ্লেষণ, শিক্ষা পরিসংখ্যান বোঝার দক্ষতা, শিশুর শেখার মানদণ্ড মূল্যায়নের সক্ষমতা।

৪. আন্তর্জাতিক মান ও প্রেক্ষিত বোঝার সক্ষমতা : ঝউএ-৪, টঘওঈঊঋ, টঘঊঝঈঙ, চঊউচ (বাংলাদেশে) বা অন্য দেশের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির ধারা বোঝা। স্থানীয় বাস্তবতা ও বৈশ্বিক ধারার মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটাতে পারার ক্ষমতা। কে ‘বিশেষজ্ঞ’ না, অথচ বিশেষজ্ঞরূপে মত দেন : শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন—তবে কোনো পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ/শিশু শিক্ষা নিয়ে কাজ করেননি। হয়তো তঁার ডিগ্রি বহঃরৎবষু অন্য বিষয়ে—তবুও ‘শিক্ষাবিদ’ হয়ে প্রাথমিক শিক্ষার দিক নির্দেশনা দেন। মিডিয়া ও কথার জোরে জনমত গড়েন, অথচ মাঠের জ্ঞান শূন্য।

এর ফল হয়: ভুল তথ্য দিয়ে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা, ভুল পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার ক্ষতি বাস্তবতাবিবর্জিত মত, যা টেকসই হয় না

যঁাদের প্রয়োজন: ১. মূলত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিরা:

সরকারি পর্যায়ে (উচঊ, ঘঅচঊ, চঞও, টজঈ), ঘএঙ, বা গবেষণা সংস্থা যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন।

২. প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা: যারা ঘঈঞই/ঈঊই/উচউ’র সাথে কাজ করেছেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ পলিসি বা মডিউল উন্নয়নে ছিলেন।

৩. শিক্ষানীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারী: প্রশাসনের এমন ব্যক্তিরা যারা শুধু উপরে বসে নীতি লিখেন না, বরং বাস্তবায়ন পর্যায়ের সমস্যা বোঝেন।

৪. চিন্তাশীল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা: যারা নিজের কাজের পাশাপাশি গবেষণা করেন, লেখালেখি করেন, স্কুল পর্যায়ের সমস্যা নিয়ে ভাবেন।

উপসংহার: প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হওয়া মানে কেবল “শিক্ষা” বোঝা নয়; বরং প্রাথমিক স্তরের শিশু, শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যক্রম ও নীতিমালার উপর বিশেষ অভিজ্ঞতা ও বাস্তব কাজের জ্ঞান থাকা। এই বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠতে পারে আগামীর যুগোপযোগী ও শিশুবান্ধব প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। যার সুফল সোনার বাংলা সোনার প্রজন্মরা যুগ থেকে যুগান্তরে ভোগ করবে।

লেখক : ইন্সট্রাক্টর উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, হাজীগঞ্জ, চঁাদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়