প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
রন্ধন একটা শিল্প হলেও খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া হলো বিজ্ঞান। কাজেই খাদ্য গ্রহণের সময় কোনটার পর কোনটা খাবো কিংবা কোন খাবারের সঙ্গে কোন খাবার খাওয়া যায় না, তা আমাদের জানা উচিত। এতে হজম প্রক্রিয়া যেমন সুসম্পন্ন হয়, তেমনি পুষ্টি প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণতা পায়। গ্রামে-গঞ্জে একটা প্রবাদ চালু আছে, আনারস আর দুধ একসঙ্গে খাওয়া যায় না। কথাটি শোনামাত্রই উড়িয়ে দিলেও খাদ্য গ্রহণের বিজ্ঞান দিয়ে বিবেচনা করলে তা আমাদের মনে যথেষ্ট ভাবনা তৈরি করে বৈকি। আসলে কোন খাবারের পরে কোন খাবার খাওয়া উচিত কিংবা কোন খাবারের সঙ্গে কোন খাবার খাওয়া যাবে না, তা আমাদের জেনে নেওয়া কর্তব্য।
আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রে খাবার হজম হওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিবেশের প্রয়োজন হয়। কোন খাদ্য অম্লীয়য় পরিবেশে, কোন খাদ্য ক্ষারীয় পরিবেশে এবং কোন খাবার নিরপেক্ষ পরিবেশে হজম হয়। এই পরিবেশ তৈরিতে খাদ্যমণ্ডের রাসায়নিক পিএইচণ্ডএর মান অত্যন্ত জরুরি। পাকস্থলী ও অন্ত্রে পিএইচণ্ডএর মান সাত হওয়া মানেই নিরপেক্ষ পরিবেশ। আর সাতের নিচে হলে তা অম্লীয়য় এবং সাতের ওপরে হলে তা ক্ষারীয় পরিবেশ বলেই বিবেচিত হয়। খাদ্যবিজ্ঞানীরা পরিপাকের জন্যে প্রয়োজনীয় পিএইচ অনুয়ায়ী খাদ্যকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা :
১. অম্লীয়য় বা এসিডিক খাদ্য : প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন-মাছ, মাংস, দুধ ও দুধ জাতীয় খাদ্য ইত্যাদি।
২. ক্ষারীয় বা অ্যালকালাইন জাতীয় শর্করা বা স্টার্চ খাদ্য যেমন-ভাত, আলু, রুটি ইত্যাদি।
৩. নিরপেক্ষ খাদ্য যেমন-ফল, সবজি, চর্বি ও চর্বিজাতীয় খাবার, বাদাম ইত্যাদি।
হে-ডায়েট
খাদ্যগ্রহণের ধারাক্রম বা ইটিং অর্ডার নিয়ে বিজ্ঞানী হে একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। এই তত্ত্বটি বেশ ভালোভাবে গৃহীত হলেও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে আজও বিভাজিত মতামত রয়েছে। হে-তত্ত্ব অনুযায়ী প্রণীত হয় হে-ডায়েট।
হে-ডায়েট হচ্ছে একটা পুষ্টি-পদ্ধতি যা নিউইয়র্কের ফিজিশিয়ান উইলিয়াম হাওয়ার্ড হে ১৯২০ সালে প্রস্তুত করেন। তার মতে সব খাদ্য রাসায়নিক বিক্রিয়াগত দিক থেকে ক্ষারীয়, অম্লীয়য় বা এসিডিয় এবং নিরপেক্ষ- এ শ্রেণিতে বিভক্ত। এসিডিক খাদ্য ক্ষারীয় খাদ্যের সঙ্গে যুক্ত নয়। এসিডিক খাদ্যগুলো হলো আমিষ জাতীয় বা প্রোটিন। যেমন : মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি। ক্ষারীয় পিএইচ এর খাদ্য হলো কার্বোহাইড্রেট প্রধান, যেমন : ভাত, শস্য, আলু ইত্যাদি। সংযুক্ত খাদ্যের আহারও বলে।
১৯৭০ সালে গ্যারি অ্যা মার্টিন নিউট্রিপ্যাথি নামে একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করেন যা হে-তত্ত্বের অনুরূপ।
হে-তত্ত্ব মোতাবেক দিনে তিনটা আহার গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে আহার-১ হবে সম্পূর্ণ ক্ষারীয় পিএইচ সম্পন্ন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় আহার। আহার-২ হবে প্রোটিনজাতীয় খাবার, সালাদ, শাকসবজি ও ফলজাতীয় খাদ্য। আহার-৩ হবে শর্করা, সালাদ, শাক-সবজি ও মিষ্টি ফল। এক আহার হতে আরেক আহারের বিরাম থাকবে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। তখনকার দিনে রেস্তোরাঁয় হে-বান্ধব খাদ্য তালিকা মোতাবেক খাবার দেওয়া হতো।
হে-তত্ত্বের ব্যাখ্যা
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি ইত্যাদির সঙ্গে প্রোটিন যেমন-মাংস, দুধ ইত্যাদি খাবার খেলে পেটে গ্যাস হয়, পেট ফেঁপে যায়, হজমে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং পরিণামে খাদ্যসার শোষণে বিভ্রাট তৈরি হয়। তাই খাদ্য হজম প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে খাদ্য সংযোগের নীতিগুলো মেনে চলা উচিত।
খাদ্য হজম প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে করণীয়
১. খালি পেটে ফল খান। সকালের নাশতায় শুরুতেই ফল খাওয়া বাঞ্ছনীয়।
২. যেসব ফলে শ্বেতসার নেই তাদের সঙ্গে আমিষ বা প্রোটিন, চর্বি ও শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়া যায়। এতে হজম ভালো হয়।
৩. সবুজ শাকসবজির সঙ্গে প্রোটিন, চর্বি ও শর্করাজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা যায়।
৪. এক শ্রেণিভুক্ত খাদ্যগ্রহণের কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা পরে অন্য শ্রেণিভুক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে।
যা করবেন না
১. একই আহারে শর্করা ও প্রোটিন খাবার গ্রহণ করবেন না। এতে শর্করার ক্ষারীয় পিএইচ প্রোটিনের অম্লীয়য় পিএইচ দ্বারা নিরপেক্ষ হয়ে যায়।
২. একই আহারে প্রোটিন ও চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ করবেন না। এতে নিরপেক্ষ পিএইচ এর চর্বির হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৩. যেসব খাদ্য আহারে এসিড তৈরি হয় তার সঙ্গে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
৪. আহারে বিভিন্ন জাতের প্রোটিনের সমাহার ঘটাবেন না।
৫. ফল ও শাক-সবজি একই সময়ে খাবেন না।
৬. আহারের সঙ্গে তরল পানীয় গ্রহণ করবেন না।
ইটিং অর্ডার : খাদ্যগ্রহণের ধারাক্রম
ভেজিটেবল এবং প্রোটিন দিয়ে খাবার শুরু করুন। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা দিয়ে খাবার শেষ করুন। তাতে রক্তে গ্লুকোজের মান নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সকালের নাশতায় মিষ্টি খাবারের চেয়ে সুস্বাদু খাবারের ওপর জোর দিন।
লাঞ্চ ও ডিনারে সবুজ শাকসবজি, ব্রকলি ইত্যাদি দিয়ে শুরু করুন। সঙ্গে চর্বিজাতীয় খাবার যেমন : অ্যাভোক্যাডো, বাদাম, অলিভ অয়েল ইত্যাদি।