প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ। তাই এতে জ্বরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০১-১০৩ ডিগ্রি হতে পারে। তবে ডেঙ্গু হলেই যে তীব্র জ্বর থাকবে, এমনটা নয়। জ্বর ১০০-এর নিচে থাকা অবস্থায়ও অনেক শিশুর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
প্রথমত ফেব্রাইল ফেজ থাকে। এ সময় শিশুর জ্বর দুই-তিন দিন বা তার চেয়েও বেশি সময় থাকে। দ্বিতীয় অ্যাফেব্রাইল ফেজে বাচ্চার জ্বর থাকে না। এর সময়কাল দুই-তিন দিন। তৃতীয় কনভালিসেন্ট ফেজে শিশুর শরীরে র্যাশ দেখা যায়। এর সময়কাল চার-পাঁচ দিন। এটাই ক্রিটিক্যাল ফেজ। এ সময় শিশুর জ্বর কমে যায় এবং রোগটি সংকটপূর্ণ অবস্থায় যেতে পারে। শরীরে প্লাজমা লিকেজ হয়ে বিভিন্ন অংশে জমাও হয়ে থাকে। যে কারণে রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দেয় এবং শিশুর শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। তাই জ্বর সেরে যাওয়ার দুই থেকে তিন দিন শিশুকে কড়া নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন।
* ডেঙ্গু হলে শিশুর মধ্যে স্বাভাবিক চঞ্চলতা থাকবে না। শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়বে। ঝিমাতে থাকবে।
* শিশুর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেবে। বমি বমি ভাব হবে। পানিশূন্যতা ও পাতলা পায়খানাও হতে পারে। ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে শিশুর প্রস্রাব না হওয়া ডেঙ্গুর মারাত্মক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি।
* আবার শরীরে লালচে র্যাশও দেখা দিতে পারে। সঙ্গে থাকবে মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, পেটব্যথা।
* অ্যাফেব্রাইল স্তরে শিশুর চোখ লাল হবে। কাশি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শিশুর শকে যাওয়ার অবস্থা হলে তার পেট ফুলে যেতে পারে বা শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেমন রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি।
* শিশুর জ্বর হলে প্রথমেই চিকিৎসক এনএস-১ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে বলেন। তারপর ডেঙ্গু ধরা পড়লে নিয়মিত যে পরীক্ষা করাতে হয়—কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি), এফজিপিটি ও এফজিওটি। প্রতিদিন একবার সিবিসি পরীক্ষার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি-অবনতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
উপশম
* শিশুর যদি জ্বর থাকে, তাহলে পানি দিয়ে শরীর বারবার স্পঞ্জ করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* শিশুকে পানি ও মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বেশি তরল খাবার, বিশেষ করে খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের শরবত, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। ডেঙ্গুর ধরন বুঝে চিকিৎসকরা শিশুদের প্যারাসিটামল অথবা অন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন। রক্তচাপ অস্বাভাবিক থাকলে স্যালাইন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
* শরীরে প্লাজমা লিকেজের কারণে ফ্লুইড জমতে থাকলে ও রোগী শক সিনড্রোমে চলে গেলে স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে অ্যালবুমিন প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া শিশুর শরীরে রক্তক্ষরণ হলে রক্ত দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।
* শিশুর রক্তে প্লাটিলেট ১০,০০০-এর নিচে চলে এলে শিশুকে অনেক সময় আইসিইউতে রেখে প্লাটিলেট দেয়ারও প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে শিশুর ডেঙ্গু ধরা পড়লে আগে থেকেই তার রক্তের গ্রুপ জেনে রক্তদাতা খুঁজে রাখা ভালো। সাধারণত এক ব্যাগ প্লাটিলেটের জন্যে চারজন রক্তদাতার প্রয়োজন হয়। অনেক সময় রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি শিশুর বুকের এক্স-রে, পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি, ইলেকট্রোলাইটের মাত্রাও পরিমাপ করা হয়। প্রস্রাব কম হলে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রাও মাপা হয়।
শিশুর ডেঙ্গু প্রতিরোধে
* শিশুরা পানি নিয়ে খেলতে পছন্দ করে বেশি। তাই তারা যেন দিনের বেলায় জমাট পানি বা ঝোপ-ঝাড়ের আশপাশে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আগে। তারা যেসব স্থানে খেলতে পছন্দ করে সেসব জায়গা খোলামেলা ও শুষ্ক রাখতে হবে।
* নবজাতকসহ শিশুদের যতটা সম্ভব হলে এ সময়টা মশারির ভেতরে রাখতে হবে।
* শিশুরা যে সময়টায় বাইরে খেলাধুলা করে, ওই সময় মশা নিরোধীকরণ স্প্রে, ক্রিম বা জেল ব্যবহার করতে হবে। এসব ক্রিমের স্থায়িত্ব থাকে কয়েক ঘণ্টা। পাশাপাশি শিশুদের ফুলহাতা ও ফুলপ্যান্ট পরিয়ে রাখতে হবে। অ্যারোসল, মশার কয়েল বা ফাস্ট কার্ড শিশুদের জন্য একটু বেশি ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে মসকুইটো কিলার বাল্ব, ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প, কিলার ব্যাট, রেপেলার ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
* ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রভাব মায়ের বুকের দুধে পড়ে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা তার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।