প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
কোনো কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও অপরিণত দ্রুত বিভাজনের ফলে উক্ত অঙ্গের আকার বেড়ে যায় এবং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঙ্গে তা চাপ সৃষ্টি করার পাশাপাশি দূরবর্তী অঙ্গগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। এটাই হলো ক্যান্সারের প্রক্রিয়া। এ রকম কোন কিছু যদি জরায়ুর মুখে ঘটে তবে তাকে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার বলা হয়। জরায়ু-মুখকে বলা হয় সার্ভিক্স। জরায়ু-মুখের ক্যান্সারকে সারভ্যাইক্যাল ক্যান্সার বলা হয়।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সার হলো পৃথিবীতে নারীদের মৃত্যুর চতুর্থ বড় কারণ। পৃথিবীতে প্রতি ২ মিনিটে একহন করে জরায়ু-মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৩০০০ জন নারী নূতন করে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে সনাক্ত হয় এবং প্রতি বছর ৬.৬০০ জন নারী এতে মৃত্যবরণ করে।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের কারণ
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা ঐচঠ জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের বড় কারণ। একে উস্কে দেয় ধূমপান, অনিরাপদ ও অবিশ্বস্থ যৌনজীবন, একাধিক বিবাহ ও যৌনসঙ্গী ইত্যাদি। এর রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হলো দীর্ঘদিন একটানা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, বাল্যবিবাহ ও অল্পবয়সে মাতৃত্ব, ইমিউনিটি হ্রাস সম্পন্ন নারী ইত্যাদি।
সাধারণত ২১ বছরের আগে মহিলারা জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন না। বেশি আক্রান্ত হন ৩৫-৫৫ বছরের মহিলারা। এমনকি ৬০ বছরের নারীও জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের ধরন
সবচেয়ে বেশি হয় স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার। প্রায় ৭০% ভাগ। ২০% হয় অ্যাডেনো কার্সিনোমা। বাকি কিছু অংশ স্মল সেল কার্সিনোমা ও অন্যান্য ধরনের হতে পারে।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
১. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন গ্রহণ করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করা। তিন ডোজ ভ্যাক্সিন নিতে হয়। প্রথম ভ্যাক্সিন নেয়ার একমাস পরে দ্বিতীয় ডোজ ও প্রথম ডোজের ছয়মাস পরে তৃতীয় ডোজ ভ্যাক্সিন নিতে হয়।
২. নিয়মমাফিক প্যাপ টেস্ট করা : প্রতিটি নারী ২১ বছর বয়স থেকে প্রতি ৩ বছর পর পর নিয়মিত প্যাপ টেস্ট করা দরকার।
৩. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্ক্রিনিং টেস্ট
৪. স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ যৌন জীবন : বিশ্বস্থ ও নিরাপদ দাম্পত্য সঙ্গী
৫. ধূমপান নিরোধ করা ও বিরত থাকা
৬. সবুজ ও রঙিন শাক-সব্জি ও ফল আহার করা।
লক্ষণ ও উপসর্গ
১. খুব প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দৃশ্যমান হয় না।
২. যৌন মিলনের পরে, ঋতুস্রাবের মধ্যবর্তী সময়ে কিংবা মেনোপজের পরে জরায়ু হতে রক্তক্ষরণ হয়।
৩. জলের মতো, রক্তস্রাবের মতো তরল পদার্থ জরায়ু হতে নির্গত হতে পারে। এই নিঃসরণে তীব্র দুর্গন্ধ থাকে।
৪.নিতম্বীয় অঞ্চলে বা কোমড়ে বা সহবাসকালীন ব্যথা হয়।
৫. গায়ে গায়ে জ্বর আসতে পারে।
৬. ওজন কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচি হতে পারে
চিকিৎসা
১. সার্জারির মাধ্যমে আক্রান্ত অংশের টিস্যু অপসারণ করা
২. কেমোথেরাপির মাধ্যমে টিউমারের আকার সঙ্কুচিত করে আনা
৩. রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার-কোষ ধ্বংস করা
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]