সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২২, ০০:০০

বিনা অস্ত্রোপচারে অপারেশনযোগ্য রোগের হোমিওপ্যাথিতে সমাধান
অনলাইন ডেস্ক

একবিংশ শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত চিকিৎসা জগতের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা। কিন্তু এমন কিছু রোগ আছে, যা অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা দ্বারা বিনা অস্ত্রোপচারে নিরাময় করা সম্ভব নয়। অথবা অস্ত্রোপচার দ্বারা সাময়িক নিবারণ সম্ভব হলেও পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব না। অনেক সময় চিকিৎসকরা জটিল রোগকে অ্যালোপ্যাথি ঔষধ দিয়ে নিরাময় না করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিরাময়ের ব্যবস্থা করেন। এতে অনেক সময় রোগীর কোনো উপকার তো হয়-ই না, বরং মারাত্মক কষ্টের সম্মুখীন এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এ কারণে মহাত্মা হ্যানিম্যান অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হয়েও এর বিভিন্ন অসুবিধা লক্ষ্য করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভাবন করেন। অপারেশনযোগ্য অনেক রোগ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবনে আশুফল লাভ করা সম্ভব।

টিউমার, আঁচিল, অ্যাপেন্ডিসাইটিস, ফোঁড়া, বাগী, ক্যান্সার, আলসার, অস্থিবৃদ্ধি, পক্ষাঘাত, কড়া, লিভার ফোঁড়া ইত্যাদি রোগে অ্যালোপ্যাথিতে অনেক কষ্ট ও অর্থব্যয়ে অপারেশন করা হয়। সেখানে হোমিওপ্যাথিতে শুধুমাত্র ঔষুধ দ্বারা চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্ত রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। হোমিও ঔষধ দ্বারা বিনা অস্ত্রোপচারে অপারেশনযোগ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোগ নিরাময়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

অর্শ্ব : মলদ্বারের বাইরে-ভেতরে বা চারদিকের শিরাগুলো ফুলে মটর দানার মতো বলি সৃষ্টি হয়। সেখানে জ্বালা-যন্ত্রণা-ব্যথা ও রক্তস্রাব হয়।

কারণ : বংশগত, সাইকোসিস দোষ, কোষ্ঠকাঠিন্য ও কুথন স্বভাব, গুরুপাকদ্রব্য আহার, যকৃত রক্তাধিক্য, পুরাতন আমাশয় প্রস্টেটগ্ল্যান্ড বৃদ্ধি মূত্রনালীর পীড়া কুথন দিয়ে প্রস্রাব, নানা কারণে শিরার চাপ, অর্জীন, পাকস্থলীর পীড়া, লিভারের দোষ, ঘোড়া ও সাইকেল চালনা এবং অলস জীবনযাপন।

বিঃদ্রঃ গুরুপাকদ্রব্য, মাংস, ডিম, চা, কফি, জর্দ্দা, ধুমপান, মদ্যপান, ঘোড়ায় চড়া, সাইকেল চড়া নিষেধ। কোষ্ঠ্য পরিষ্কার রাখতে হবে। ইসবগুলের ভূষি রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া খুবই উপকারী। কাঁচা-পাকা ও পোড়া বেল এবং সাগু ভিজা জল খুবই উপকারী।

ঔষধ : লক্ষণ অনুসারে আর্সেনিক, কলিনসোনিয়া, ইস্কিউইলাস, লাইকোপোডিয়াম, নাক্সভৌম, সালফার, মেডোরিনাম, ইগ্নোসিয়া, অ্যালোজ ইত্যাদি ঔষুধ ব্যবহার করা হয়।

অঞ্জনী : চোখের কানেকটির পাতার ধারে যে ক্ষুদ্র ফোঁড়া বা উদ্ভেদ দেখা যায় তাকে অঞ্জনী বলে। ফলে হঠাৎ চোখে ব্যথা, ভীষণ ব্যথা ও বেদনা, চোখ চুলকায় ওপিচুটি ধরে জ্বর ও চোখ লাল হয়, ব্যথা করে ও ফুলে যায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও সুড়সুড় করে।

কারণ : আবহাওয়াজনিত দোষ, অন্য কোনো রোগের উপসর্গ, কোনো কঠিন রোগ চাপা পড়া, গণ্ডমালা ধাতু হলে, শরীর দুর্বল ও জীবাণু সংক্রমণেও হতে পারে।

বিঃদ্রঃ গোমাংস, ডিম, টক-দই, পুঁইশাক, বাসি খাবার, মসুর ডাল, আমিষ-জাতীয় খাবার, ঠাণ্ডা লাগা ও হাত দিয়ে চোখ চুলকানো নিষেধ।

ঔষধ : পালসেটিলা, স্টাফিসেগ্রিয়া, বেলাডোনা, সালফার হিপার সালফ, রাসটক্স, গ্রাফাইটিস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, সাইলিসিয়া, এপিস মেল, থুজা, কোনিয়াম ইত্যাদি লক্ষণ অনুসারে ব্যবহার হয়।

অ-কোষের পীড়া : প্রমেহ¯্রাব বন্ধ, ঠাণ্ডা, আঘাত, চর্বি-রস, জল কিংবা অনুরুপ জলীয়দ্রব্য জন্মানোর ফলে শিরাযুক্ত কোষ বৃদ্ধি ও ব্যথাকে অ-কোষ প্রদাহ বলে।

কারণ : আঘাতজনিত কারণে, দপদপানি ব্যথা ও জ্বর হতে পারে, অ-কোষ ফুলে লালবর্ণ ধারণ করে, মমের চকচক করে ও থলথল করে, শক্ত মনে হয় ও অ-কোষ ঝুলে পড়ে।

বিঃদ্রঃ মাছ, মাংস, ডিম, টক, গুরুপাকদ্রব্য ও ভাত/লবণ কয়েক দিন না খাওয়া ভালো।

ঔষধ : একোনাইট, রাসটক্স হ্যামামেলিস, পালসেটিলা, বার্বারিস, ক্লিমিটিস, ফাইটোলক্কা, স্পঞ্জিয়া, রডোড্রেন, কোনিয়াম বেলাডোনা, থুজা, সাইলিসিয়া ইত্যাদি লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহার্য।

টিউমার : সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজম শরীরে প্রবেশ করে যে কোষকলা বৃদ্ধি ঘটে তাকে টিউমার বলে। বর্তমানে চিকিৎসাজগতে টিউমারকে ক্যানসারের জননী বলা হয়। কোষকলা বৃদ্ধি পায়, দিন দিন বেড়ে যায়, টিউমার নরম ও শক্ত এবং ব্যথা থাকতে পারে না-ও থাকতে পারে।

কারণ : সাইকোসিসে দোষ, আঘাতজনিত, মেহজনিত, রক্ত দূষিত হলে, ফোঁড়া বা অঞ্জনী থেকে হতে পারে, ঠাণ্ডাজনিত ও জীবাণু সংক্রমণে হতে পারে।

বিঃদ্রঃ মাংস, ডিম, টক ও ¯েœহ-জাতীয় খাবার নিষেধ। দুধ, ঘি, মাখন ও পুষ্টিকর খাবার বিধেয়।

ঔষধ : থুজা, স্টাফিসেগ্রিয়া, এলিয়ামসেপা, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ক্যালকেরিয়া ফ্লোর, কোনিয়াম, সিপিয়া, ব্যারাইটা কার্ব ইত্যাদি লক্ষণ অনুসারে প্রয়োগ করা হয়।

আঁচিল : শরীরে এক প্রকার ছোট বড় যন্ত্রণাহীন অর্বুদকে আঁচিল বলে। এটি ছোট-বড় মসৃণ ফাটা ফাটা ও শৃঙ্গের মতো হয়ে থাকে।

কারণ : শরীরে সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজম রক্তের কর্নিয়ার ওপর প্রভাব পড়ে তখন আঁচিলের জন্ম হয়।

বিঃদ্রঃ কাঁচা পেঁয়াজ, গোমাংস, টক ও মুলা না খাওয়া ভালো।

ঔষধ : এসিড নাইট, কস্টিকাম, লাইকোপোডিয়াম, এন্টিম ক্রুড, ন্যাট্রাম মিউর, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ডালকামারা, সাইলিসিয়া ইত্যাদি ব্যবহার্য।

কড়া : পায়ের তলায় এক প্রকার বেদনাযুক্ত শক্ত কোষ বৃদ্ধিকে কড়া বলা হয়। কড়ায় জ্বালা-যন্ত্রণা ও বেদনা থাকে। রোগী হাঁটতে পারে না। অনেক সময় খুঁড়িয়ে অতি কষ্টে হাঁটতে হয়। চলা-ফেরায় ব্যথা ও কষ্ট এবং জ্বর হতে পারে।

কারণ : জুতার ঘর্ষণ, ধাতুগত দোষ, পেটের পীড়া, কোষসমূহ জমে কঠিন হলে ও মেহের প্রভাব।

বিঃদ্রঃ গোমাংস, ডিম, টক, ধুমপান, জর্দ্দা ও মদ্যপান নিষেধ।

ঔষধ : এন্টিম ক্রুড, হাইপেরিকাম, সালফার, লাইকোপোডিয়াম, থুজা ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার্য।

পচনশীন ক্ষত : শরীরের কোনো স্থানে বর্ধনশীল, পচনশীল, অতি পুরাতন দুর্গন্ধময় ও পচনশীল ক্ষতকে গ্যাংগ্রীন বলে। ক্ষত হতে দুর্গন্ধ পুঁজরক্ত ও রসানি বের হতে হওয়া, ব্যথা ও জ্বালা হওয়া, ক্ষতস্থানে পঁচে যাওয়া, শরীরে সবসময় জ্বর ও শরীর দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়া ও অনেক সময় খাবারে অরুচি দেখা দেয়া।

কারণ : জীবনীশক্তির অভাব, অত্যন্ত দুর্বল ও রক্তহীনতা, কোনো জীবাণুর সংক্রমণ, পুষ্টির অভাব ও কঠিন কোনো রোগের ফল।

বিঃদ্রঃ মাছ, মাংস, ডিম, টক, অতি মিষ্টি ও মাটির তলার খাবার নিষেধ। নিমপাতা গরম পানি দ্বারা ধৌত করা ভালো। নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ বেটে গরম করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঔষধ : ট্যারেনটুলা, কার্বোভেজ, ল্যাকেসিস, এচেনশিয়া, আর্সেনিক আল্ব ইত্যাদি লক্ষণ অনুসারে ব্যবহার্য।

ভগন্দর বা ফিস্টুলা : মলদ্বারের পার্শ্বে নালী ঘা ব্যথা, জ্বালাযুক্ত রস, শক্ত ও পুঁজ বের হলে তাকে ভগন্দর বলে। মলদ্বারে ভীষণ ব্যথা জ্বালা-যন্ত্রণা, ব্যথার জন্যে রোগী চলা-ফেরা করতে পারে না, ব্যথায় অনেক সময় জ্বর ভাব দেখা দেয়, কয়েকদিন পর ফেটে পুঁজ বের হয়, কিছুদিন পর ভালো হয় আবার উঠে এভাবেই চলতে থাকে। যাদের টিউমার ধাতু তাদের এ রোগ বেশি দেখা দেয়।

কারণ : মলদ্বারের চাপজনিত, মলদ্বারের আঘাত, মলদ্বারের প্রদাহ, গুঁড়ো কৃমির প্রভাব, কোষ্ঠকাঠিন্যতা, মলের রসের ক্ষারত্বের জন্যে ও টিউবার কুলার ধাতু বিদ্যমান থাকলে।

বিঃদ্রঃ জ্বালা-যন্ত্রণা ও ব্যথা থাকলে চুনের জল ভিজিয়ে পট্টি দিলে উপশম হয়।

ঔষধ : নাইট্রিক এসিড, পিওনিয়া, অরমমিউর ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

মূত্র পাথরী : রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে মূত্রনালীতে বা কিডনীতে পাথরী জমে ব্যথা ও জ্বালা-যন্ত্রণা করে তাকে মূত্রপাথরী বলে। প্রসাবের সর্বদা ইচ্ছা। প্রসাবে জ্বালা-যন্ত্রণা ও ব্যথা, তলপেটে ব্যথা ও লিঙ্গ চুলকায়, সুড়সড় করে। রক্তপ্রস্রাব, কিডনীতে ভীষণ ব্যথা ও বমি বমি ভাব, কোমড়ে ব্যথা ও খাবারে অরুচি।

কারণ : অতিরিক্ত চুন খাওয়া, ইউরিক এসিডের আধিক্য, প্র¯্রাবের আধিক্যতা, পরিপাকতন্ত্রে বিশৃঙ্খলা, যে এলাকায় চুনের ভাগ বেশি সেখানে এই রোগ বেশি দেখা দেয়।

বিঃদ্রঃ মাংস, ডিম, নদীর জল, চুন, পান, চা, তামাক, নেশা-জাতীয় খাবার নিষিদ্ধ। গরম সেঁক ও গরম জল খেলে উপশম। পাথরকুচির পাতার রস ও কোত কলাই ডাল এবং প্রচুর পানি পান করা উচিত।

ঔষধ : ক্যান্থারিস, সার্সাপ্যারিলা, ক্যালকেরিয়া কার্ব, লাইকোপোডিয়াম, বার্বারিস ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার্য।

হার্নিয়া : অন্ত্র বহির্ভূত হয়ে অ-কোষে প্রবেশ করলে তাকে সাধারণ ভাষায় হার্নিয়া বলে। চলাফেরার সময় অন্ত্র অ-কোষে প্রবেশ করলে ভীষণ ব্যথা করে, বমি ও জ্বর হতে পারে, ভীষণ ব্যথায় রোগী অস্থির হয়ে পড়ে, শুয়ে আস্তে আস্তে চেপে নামিয়ে দিলে ব্যথার উপশম, ব্যথার স্থানে চাপ দিলে কোঁ কোঁ শব্দ করে।

কারণ : প্রবল কাশি, ভার উত্তোলন, প্রচুর চলাফেরা করা, বেশিদিন বাঁশি বাজান, অট্টহাসি, অতি ক্রন্দন, কোষ্ঠবদ্ধতা হেতু কুখনজনিত কারণ, প্রস্টেটগ্লান্ড বৃদ্ধি ও সাকোসিস দোষ।

বিঃদ্রঃ অধিক হাঁটা, অধিক শ্রম বা ভারী কাজ করা, পেট ভরে খাওয়া কোথ দিয়ে মলত্যাগ করা নিষেধ। হার্নিয়া ফোলার স্থানে বরফ ঠাণ্ডা জল দেয়া ভালো।

ঔষধ : লাইকোপোডিয়াম, নাক্সভোমিকা, প্লাম্বমেট, ওপিয়াম, বেলেডোনা ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

নাকের পলিপাস : ঘন ঘন ঠাণ্ডা ও সর্দির কারণে নাকের ভেতর মাংসপি- বড় হলে তাকে নাকের পলিপাস বলে।

কারণ : শরীরে টিউমার থাকার কারণে এ অসুখ হতে দেখা যায়। নাক দিয়ে প্রায় সর্দি ঝরে, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, ব্যথা ও ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়া। নাকে রসুন কোয়ার মতো ফুলে উঠে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট দেখা যায়।

বিঃদ্রঃ যে কোনো ঠাণ্ডা খাবার, গোমাংস, দধি, শিম, লাউ, হাসের ডিম, কচু খাওয়া নিষেধ। সকল ঠাণ্ডা কাজ ও খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। সরিষার তেল মেখে নিয়মিত গোসল করতে হবে।

ঔষধ : ক্যালকেরিয়াকার্ব, টিউবারকুলিনাম, থুজা, স্যাঙ্গনেরিয়া, টিউক্রিয়াম, এলিয়ামসেপা ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

পিত্ত পাথুরী : কোনো কারণবশত পিত্তকোষে বা পিত্তবাহীনালীতে পিত্তরস জমাট বেঁধে প্রস্তর কণা আকার ধারণ করে এটিকে পিত্তপাথুরী বলে।

কারণ : আহারাদির দোষে বা পিত্তকোষের বা পিত্তনালীর প্রদাহজনিত কারণে এ পিত্তপ্রবাহ বিঘিœত হতে পারে, এর ফলে পিত্তরস জমাট বেঁধে যায় এবং ধীরে ধীরে পিত্তপাথুরী দেখা দেয়, পিত্তপাথুরী খুব ছোট হলে বা বালুকণার মতো থাকলে অনেক সময় আপনা থেকেই বেরিয়ে যায়। এই পাথুরী যতোক্ষণ পিত্তকোষে থাকে ততোক্ষণ বেশি বেদনা অনুভব হয় না কিন্তু পিত্তকোষ থেকে পিত্তনালীতে এসে পড়ে তখনই প্রচণ্ড বেদনা হয় এবং রোগী বেদনায় অস্থির হয়ে পড়ে।

বিঃদ্রঃ গোমাংস, ডিম, টক, ঝাল, ধুমপান, গুরুপাকদ্রব্য, কচু, মান, ওল নদীর জল খাওয়া নিষেধ। বিশ্রাম, গরম জল খাওয়ায় উপশম বোধ করে।

ঔষধ : কার্ডুয়াসমেরী, সিওনানথাস, কোলেস্টোরিনা, চেলিডোমিয়াম, বার্বারিকা, লরোসিরেসাস, চায়না, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ডিজিটেলিস, ডায়াস্কোরিয়া ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহৃত হয়।

টনসিল প্রদাহ : বাংলায় এটিকে তালুর পার্শ্বস্থগ্রন্থির প্রদাহ বলে। তালুর পার্শ্বে বাদামের মতো যে গ্রন্থিগুলো আছে তা লালাবর্ণ ও স্ফীত হয়ে উঠাকে টনসিল প্রদাহ বলে।

কারণ : হিম লাগা বা ঠাণ্ডা লাগা, হঠাৎ শরীরের ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঋতু পরিবর্তন ও গণ্ডমালা ধাতুগ্রস্ত ব্যক্তি।

বিঃদ্রঃ ফ্রিজের যে কোনো খাবার, দই, কলাইয়ের ডাল, নদীতে গোসল, ঠাণ্ডা লাগা, গোমাংস, টক, ডিম খাওয়া নিষেধ। গরম লবণ-জলে গড় গড় করলে উপশম বোধ করে। গরম দুধ, নরম পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ভালো।

ঔষধ : ল্যাকেসিস, মার্কসল, কোনিয়াম, বেলেডোনা, একোনাইট, ফাইটোলক্কা, হিপারসালফ, এপিস মেল, ল্যাকক্যান, ব্যারাইটাকার্ব, ল্যাকেসিস, মার্কুরিয়াস ও সালফার ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার্য।

গলগণ্ড : গলগণ্ডের অপর নাম থাইরোসিল,। এটিতে গ্রন্থি অতি বৃদ্ধি পায়, গলা ফুলে উঠে, কখনো কখনো শ্বাসে বা গিলতে গেলে কষ্ট বোধ হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি দেখতে বড় হয়, এই বৃদ্ধি বা স্ফীতিভাব কখনো কোমল কখনো কঠিন হতে পারে, অনেক সময় ডানদিকের গ্রন্থিই আক্রান্ত হয়, কখনো মধ্যস্থান/দু পাশ আক্রান্ত হয়, কখনো বর্ধিত গ্রন্থির উপর ক্ষত দেখা যায়, শারীরিক দুর্বলতা, শ্বাসনালীর উপর চাপ পড়ার জন্যে শ্বাসকষ্ট এবং নিকটবর্তী রক্তবাহী নাড়ির উপর চাপ পড়লে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে।

কারণ : কণ্ঠনালীর দু পাশে থাইরয়েড নামক দুটি গ্রন্থি আছে, উক্ত গ্রন্থিদ্বয়ের মধ্যে একটি বা উভয় বৃদ্ধি পায় এবং এই বৃদ্ধি খুব ধীরে ধীরে হয়, পানীয় জলে ক্যালিফস নামক পদার্থের অভাব বা বৃদ্ধির জন্যে শারীরিক রক্তে ক্যালফস নামক পদার্থের অভাবই এ রোগের কারণ, আবার অনেকের মতে, রক্তে অম্লরসের বৃদ্ধি হওয়ার জন্যে রক্তের লাইম সল্টকে বিগলিত করে শরীর হতে বের করে দেয়, এজন্যে ক্যালফসের অভাব হয়, পানীয়জলে আয়োডিন নামক রাসায়নিক দ্রব্যের অভাব অথবা জীবাণু সংক্রান্ত অথবা চুনের ভাগ বেশি থাকা হেতু এ রোগ হতে পারে।

বিঃদ্রঃ মাংস, ডিম, টক, গুরুপাকদ্রব্য, চিংড়ি মাছ, ঠাণ্ডা খাবার নিষেধ। আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ ও বাইম মাছ খাওয়া উপকারী।

ঔষধ : ক্যালকেরিয়া কার্ব, আয়োডিয়াম, স্পঞ্জিয়া, ফাইটোলক্কা, থাইরয়ডিন, ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

প্রস্টেটাইটিস : প্রস্টেট গ্রন্থিটি দেখতে অনেকটা বড় কাজু বাদামের মতো এবং মূত্রথলির ঠিক নিচে থাকে, এটিতে এসে প্রবেশ করে শুক্রবাহীনালী এবং মূত্রনালী, এর একটি নিজস্ব নিঃসরণ আছে, কোনো কারণে এই প্রস্টেটগ্লাভ প্রদাহিত হলে একে প্রস্টেটাইটিস বলে।

বিঃদ্রঃ কচু, ওল, মান কচু, হাসের মাংস, নদীর জল, গোমাংস ডিম, টক, ভাঁজা-পোড়া খাবার ও অতি মিষ্টি খাওয়া নিষেধ। কোনো প্রকার গুরুপাকদ্রব্য না খাওয়া, ভারী কাজ না করা, সাইকেল ও ঘোড়ায় না চড়া ভালো। বিশ্রাম নিতে হবে।

ঔষধ : মাকুরিয়াস ডলসিস, স্যাবাল সেরুলেটা, পিক্রিকাম এসিড, থুজা, এসিড পিক্রিকাম, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

ফোঁড়া : সীমাবদ্ধ কোনো স্থানের ত্বকের অধস্থ উপাদানের নাম ফোঁড়া। অস্থির উপর মাংসপেশীর মধ্যে এবং স্তনে এটি বেশি হয়। রক্ত জীবাণু দ্বারা দূষিত হওয়ার কারণে ফোঁড়া হয়। গণ্ডমালা দোষের কারণে ফোঁড়া হতে দেখা যায়।

বিঃদ্রঃ মাছ, মাংস, ডিম, টক-দই, মসুর ডাল, ঠাণ্ডা ও শক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ।

ঔষধ : বেলাডোনা, হিপার সালফ, মাইরিস্টিকা, মার্কসল, আর্নিকা, ক্যালকেরিয়া পিক্রিয়া, আর্কটিয়াম লাপ্প, ক্যালকেরিয়া হাইপোবেলিস পেরিনিস, সার্সাপেরিলা, সালফার, সাইলিশিয়া, ল্যাকসিস ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

গ্যাংগ্রীন : বিভিন্ন কারণে মানব শরীর ক্ষত হয়ে পঁচতে থাকে তাকে গ্যাংগ্রীন বা পচনশীল ক্ষত বলে। জ্বালা যন্ত্রণা ও ব্যথা, ভীষণ দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ¯্রাব, মাংস খসে যায় ও শরীর দুর্বল হয়ে যায়।

কারণ : জীবাণুর সংক্রমণহেতু, কোনো জটিল রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অস্থিতিকর জীবন ধারণ, পুষ্টির অভাব, অত্যন্ত দুর্বলতা ও রক্তহীনতা ও ডায়বেটিসজনিত কারণ।

বিঃদ্রঃ টক-জাতীয় খাবার, মিষ্টি, দই ও বাসি খাবার খাওয়া নিষেধ।

ঔষধ : ট্যারেন্টুলা, আর্সেনিক, ক্রোটেলাস, এচেনিশিয়া, কার্বোভেজ ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

এপেন্ডিসাইটিস : উদরে, ডান দিকে যে অংশটা অনেকটা কেঁচোর মতো থাকে, অন্ত্রের ভার্মিফরম এপেনডিক্র তার প্রদাহকে এপেন্ডিসাইটিস বলে। ডান সাইডে তীব্র ব্যথা, ব্যথায় রোগী চিৎকার করে, তীব্র জ্বর ও বমি করে। ব্যথায় পা সটান করতে পারে না।

কারণ : এপেটিন্ডিসে কোনো দ্রব্য প্রবেশ করলে, কোষ্ঠবদ্ধতা, কৃমি, অতিরিক্ত আহার, জীবাণুর সংক্রমণ, ঘোড়া চড়া বা সাইকেলিং করার জন্যে।

বিঃদ্রঃ শক্ত খাবার, মাছ, মাংস, ডিম, টক, ঝাল, বেশি দোড়ঝাঁপ বা শক্ত কাজ করা নিষেধ। লঘু অল্প খাবার খাওয়া উচিত।

ঔষধ : সালফার, আইরিশ টেনাক্র, এচিনেশিয়া, কলোসিন্থ, রাশটক্স, এপিস মিল, হিপার সালফ, বেলাডোনা, ব্রাইনিয়া, আর্সেনিক, আর্নিকা ও প্লাম্বাম ইত্যাদি লক্ষাণুসারে ব্যবহার হয়।

একবিংশ শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের শ্রেষ্ঠ অবদান হলো অপারেশন। কিন্তু অপারেশন হচ্ছে মানুষের প্রধান ভীতির কারণ। মানুষ মরণ স্বীকার করে অস্ত্রের নিকট মাথা নোয়ায়। জরিপে দেখা গেছে, ৪০ ভাগ রোগ অপারেশনে কৃৎকার্য হয়। বাকি ৬০ ভাগ রোগী মারা যায়। মহাত্মা হ্যানিমান ওইসব কষ্ট দেখে বিনা কষ্টে, বিনা অপারেশনে রোগ নিরাময়ের জন্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবনে ৮০ ভাগ সফল হতে পারে। হোমিও ঔষধ অবশ্যই লক্ষণভিত্তিক ঔষধ। বই দেখে বা লেখা পড়ে কখনোই হোমিও ঔষধ সেবন করবেন না। তাই সবসময় একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করুন। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

ডাঃ মোঃ মাজহারুল হক : বি.এ.ডি.এইচ.এম.এস. (বি.এইচ.বি.), ঢাকা; ডি.ইউ.এম.এস. (কন্ট), এম.এইচ.জি. (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত),

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ঢাকা।

ইসলামিয়া হোমিও হল। চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর। মোবাইল ফোন : ০১৯২২৪৯২৬২৪, ০১৭৯৪৫০৯০৮০

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়