সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২২, ০০:০০

ন্যাচারাল থেরাপি

লিভার ও কিডনীর সমস্যায় আকুপ্রেশার চিকিৎসা

অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন

লিভার ও কিডনীর সমস্যায় আকুপ্রেশার চিকিৎসা
অনলাইন ডেস্ক

লিভার

লিভার উদর গহ্বরের উপরিভাগে ডানে ডায়াফ্রামের নিচে অবস্থিত। শরীরে উৎপন্ন তাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অধিক তাপ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। যকৃতে উৎপন্ন পিত্তরস পিত্তথলিতে সংগৃহীত হয়। সেখান থেকে পরিমাণমতো ডিউডেনামে আসে এবং পাকস্থলী থেকে আগত অর্ধ-পরিপাককৃত অম্লীয় তরল খাদ্য ক্ষারীয় পদার্থে পরিণত হয়।

যকৃত যদি যথেষ্ট পরিমাণ পিত্তরস উৎপন্ন না করে অথবা পিত্তথলি থেকে প্রয়োজনমতো পিত্তরস ডিউডেনামে না আসে তাহলে পিত্তথলি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পিত্তরস নিঃসৃত না হলে, পাকস্থলীর উত্তাপ কমে যায় এবং শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে শরীর ফুলে যায়; ত্বকের নিচে, কোমড়ে এবং পেটে চর্বি জমে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, মলদ্বারে জ্বালা ও মলদ্বারে ঘা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

আবার কোনো কোনো কারণে পিত্তপ্রবাহ বেড়ে গেলে পাকস্থলীর উত্তাপ বেড়ে যায় এবং শরীরের উত্তাপও বেড়ে যায়। এর ফলে মাথা ব্যথা, সাইনোসাইটিস, জিহ্বা ও গলায় ঘা হয়, ঘন ঘন হাঁচি আসে এবং নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

লিভারের সমস্যাবলি

জন্ডিস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, পিত্তথলিতে পাথর ও লিভার সিরোসিস ইত্যাদি। লিভারের সমস্যা হলে নিচের অসুবিধাগুলো দেখা দেয় :

* হজমক্রিয়ার অম্লতা বৃদ্ধি পায়। ফলে অধিক বায়ু উৎপন্ন হয়, পেটে শব্দ হয়, পেট ও অন্ননালী জ্বলে, মুখে ও অন্ত্রে ঘা হয় এবং দাঁত ও মাড়ির শক্তি কমতে থাকে।

* শরীরে অধিক তাপ উৎপন্ন হয়। ফলে ঘন ঘন সর্দি হয় এবং চোখের শক্তি কমে যায়। পুরুষের বীর্যরস পাতলা হয়। সে কারণে ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয় এবং শীঘ্রই বীর্য স্খলন হয়। স্ত্রীলোকদের ডিম্বরস পাতলা হয় সে কারণে লিউকোরিয়ায় ভোগেন।

* জন্ডিস, চর্মরোগ ও চুলকানী হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এই প্রকার মানুষগুলো রাগী ও খিট খিটে স্বভাবের হয়।

চিকিৎসা

* প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাভীচক্রের ব্যায়াম করতে হবে।

* প্রতিদিন দুবেলা দশ মিনিট করে হ্যান্ডরোলার ও ফুটরোলার রোলিং করতে হবে।

* প্রতি বেলা খবারের পরে দুটি করে লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে হবে।

* দিনে ৩/৪ কাপ সবুজ রস এবং এক গ্লাস তাজা ফলের রস পান করুন।

* শরীরের বাড়তি তাপ বের করে দেয়ার জন্যে প্রতিদিন সকাল বেলা হরিতকি চূর্ণ সেবন করতে হবে।

* প্রতিদিন দুবার ৮, ২২, ২৩, ২৭ ও ২৮নং বিন্দুতে চিকিৎসা করতে হবে।

* লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা লিভার ক্যান্সারের অনুরূপ।

পিত্তথলিতে পাথর

শরীরের উত্তাপ খুব বেশি হলে পিত্তথলির তরল পিত্ত শুকিয়ে দানার আকার দেখায় এবং ডিউডেনামে পিত্ত প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হয়। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে পিত্তদানাগুলো জমাট বেঁধে পাথরে পরিণত হয়। এ একমাত্র চিকিৎসা অপরেশন করে পিত্তথলিকে ফেলে দেয়া। কিন্তু উপরের চিকিৎসার সাথে ছয়টি এলাচ, ছয়টি চীনা বাদাম ও ১০ গ্রাম বাঙ্গির ছিলকা একত্রে পিশে সকালে খালি পেটে ১০/১২ দিন সেবন করলে অল্পদিনের মধ্যে পাথরগুলো দূর হয়ে যায়।

কিডনী

উদর গহ্বরের পেছনে বক্ষ পিঞ্জরের নিচে ও মেরুদণ্ডের দু পাশে দুটি কিডনী থাকে। দেহের বিভিন্ন কোষে সংঘটিত রসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব উৎপন্ন হয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। কিডনী এই বিষাক্ত পদার্থ যুক্ত রক্তকে ছেঁকে পরিশোধিত করে। প্রতিদিন কিডনী ১৭৫ লিটার রক্ত ছেঁকে পরিষ্কার করে এবং ১.৫ লিটারের মতো অপ্রয়োজনীয় বস্তু প্র¯্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়। কিডনীর যে কোনো রকমের সমস্যায় ২৬নং বিন্দুতে ব্যথা হয়।

কিডনী সমস্যার লক্ষণ

স্বল্প প্র¯্রাব, প্র¯্রাব লালচে বর্ণ ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া, প্র¯্রাব ত্যাগের সময় মুত্রনালী জ¦লা, চোখের পাপড়ির নিচে বৃত্তাকারে ফোলা ও কালো থাকে, হাত-পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।

কিডনী সমস্যার মূল কারণ

* আমরা প্রতিদিন রসনাবিলাসের জন্য খাদ্যে যে তেল, মসলা ব্যবহার করি এবং ভাজা-পোড়া ও ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করি এগুলো থেকে শোষিত খাদ্যরস কোষে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে প্রচুর পরিমাণ টক্সিন উৎপন্ন করে।

* শহর, শিল্পএলাকা অথবা অন্য কোন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাতাসে বিষক্ত কার্বন জাতীয় বর্জের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি আমাদের ফুসফুসের কার্যক্রম ব্যাহত করে। তখন রক্তে কার্বন জাতীয় বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং কিডনীকে অধিক কাজ করতে হয়। এক সময় কিডনী বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশনক্ষমতা কমে যায়।

* কিডনী সমস্যার আরও একটি মূল কারণ হল যৌনরোগ। যেমন : গনেরিয়া, সিফলিস, এইডস জরায়ু ক্যান্সার প্রোস্টেড ক্যান্সার ইত্যাদি। এসব জটিল রোগের কারণে শরীরে প্রচুর পরিমাণ টক্সিন সৃষ্টি হয়। কিডনীর উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। যখন শরীরে টক্সিনের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট লেভেলের উপরে যায় তখন এটি শরীরের প্রোটিনের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থ উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে এবং রক্তে কৃটিনিংয়ের মাত্রা যখন শতকরা আট ভাগের উপরে যায় তখন কিডনী অকেজো হয়ে পড়ে। রোগীকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে কৃটিনিং-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। যা জীবিত-মৃত্যুর সমান। এই সময় শরীরের পানি ধারণক্ষমতা বেড়ে যায় ফলে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। এর ফলে পিনিয়ল গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি এড্রিনালগ্রন্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সাহায্য করে। এই দুটি গ্রন্থি একত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে রোগীর প্রেশার অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়।

আবার যখন থাইরয়েড/প্যারা-থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রম ব্যহত হয় তখন ক্যালসিয়াম সঠিকভাবে বিপাক হয় না। ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এই ক্যালসিয়াম শরীর থেকে প্র¯্রাবের সাথে বের হয়ে যায়, ফলে হাঁটু কোমর ও অন্যান্য অস্থি সন্ধিতে ব্যথা হয়। ক্যালসিয়াম কিডনীর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করার সময় কিডনীতে জমতে থাকে। এক সময় পাথরে পরিণত হয়।

কিডনী সমস্যার পরীক্ষা

ঘুম থেকে উঠার পর প্রথম প্র¯্রাব একটি পরিষ্কার পাত্রে রেখে দিন। এক ঘণ্টা এর রং ও গন্ধ পরীক্ষা করুন, যদি এটি লালচে অথবা ঘোলাটে এবং দুর্গন্ধযুক্ত হয় তবে বুঝতে হবে কিডনীতে সমস্যা আছে।

কিডনী রোগীদের করণীয়

* ভাজা-পোড়া, তৈলাক্ত, অধিক মসলাযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।

* যারা শিল্পএলাকা, শহর বা অন্য কোনো ঘনবসতি এলাকায় বাস করেন তাদেরকে নিয়মিত ফুসফুসের ব্যায়াম (শান্ত পরিবেশে সোজা হয়ে বসুন। খুব ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকুন। প্রতি মিনিটে ১০ বার থেকে শুরু করে প্রতি মিনিটে ৫০ বার পর্যন্ত করার চেষ্টা করুন)। প্রতি বারে দুমিনিট করে প্রতিদিন দুবার এ অভ্যাস করুন। এটি নিয়মিত অনুশীলন করলে দেহে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে ও রক্ত শোধন করে।

চিকিৎসা

* প্রতিদিন একবার কালো চা পান করুন। (এক কাপ পানিতে এক চামচ চা পাতা দিন। এরপর ফুটিয়ে অর্ধেক কাপ করে নিন। এটিকে ছেঁকে নিয়ে অর্ধেক কাপ ঠাণ্ডা পানি (ফ্রিজের পানি নয়) মিশান। কিডনীর যে কোন সমস্যার জন্য এই চা খুবই উপকারী। সুস্থ অবস্থায়ও এই চা মাঝে মাঝে পান করা উপকারী। এটি কিডনীকে সতেজ রাখে।)

* দেহের অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দিন। দু চামচ কফি পাউডার, এক চামুচ ক্যাস্টোর-ওয়েল ও পাঁচ মিলি পানি ভালোভাবে মিশিয়ে রাত্রে ঘুমানোর আগে ঢুস দিন। এই মিশ্রণ শরীরের টক্সিনকে জ্বালিয়ে দেয়। তিনদিন এক নাগাড়ে দিন, এরপর সপ্তাহে একবার দিন।

* প্রতিদিন ২/৩ কাপ সবুজ রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।

* রুপা দ্বারা চার্জিত পানি প্রতিবার এক কাপ করে দিনে তিন/চারবার পান করতে দিন। এটি আমাদের জীবনীশক্তিকে বৃদ্ধি করে এবং গ্রন্থিগুলোকে সক্রিয় করে ফলে শরীরে টক্সিন উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়।

* প্রতিদিন দুবার ৪, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৮, ৩০ ও ২৬নং বিন্দুগুলোতে (যে কয়টিতে সমস্যা) আকুপ্রেশার চিকিৎসা করলে ইনশাআল্লাহ কিডনীর পাথর ও কিডনীর যে কোনো সমস্যা এমনকি ডায়ালায়সিস করার রোগীও আরোগ্য লাভ করবে।

* যদি প্রেশার বেড়ে যায় তবে ৪, ২৮ ও সাইনাস পয়েন্টে দিনে তিনবার চাপ দিন। যদি হঠাৎ প্রেশার বেড়ে যায় তখন দু কানের লতিতে দু মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। সাথে সাথে প্রেশার ১০ কমে যায়। (চলবে)

অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন : বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়