সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২২, ০০:০০

ন্যাচারাল থেরাপি : আকুপ্রেশার চিকিৎসা
অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন

(১১তম পর্ব ॥ পূর্ব প্রকাশিতের পর)

হাঁপানি ও শ^াসকষ্ট : শরীরের উত্তাপ বেড়ে গেলে ঘন ঘন ঠা-া, সর্দি ও সাইনোসাইটিস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যার প্রথম দিকে ফুসফুস ও মস্তিষ্ক পরিষ্কার থাকে। এই ঠা-া-সর্দিতে কোনো রকম ঔষধ ব্যবহার করলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পর শরীর যখন স্বাভাবিক হয়ে যায় তখন আবার এই পানি বের করে দিতে চেষ্ট করে। বারবার এই ঠা-া-সর্দি বন্ধ করার চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে ফুসফুস ও মস্তিষ্কে টক্সিনযুক্ত শ্লেষ্মা জমা হতে থাকে। এ সময় এড্রিনাল গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফুসফুসের অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস বিনিময় ক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে শ^াসকষ্ট দেখা দেয় এবং রোগী হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়। প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ হাঁপানির রোগীর ক্ষেত্রে হাঁপানির মূল কারণ দেহের বাড়তি তাপজনিত ঠা-া। এটির চিকিৎসা ব্রংকাইটিস-এর চিকিৎসার অনুরূপ।

ব্রংকাইটিস, জ¦র ও নিউমোনিয়া : শরীরের বাড়তি তাপজনিত ঠা-া, বায়ু দূষণ বা ধুমপানজনিত কারণে ফুসফুসের অ্যালভিওলাস প্রকোষ্টগুলোতে মিউকাস জমতে থাকে। ফলে শ^াস-প্রশ^াস ক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয় এবং ফুসফুসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের (টক্সিন) পরিমাণ বাড়তে থাকে। এই বিষাক্ত পদার্থযুক্ত শ্লেষ্মায় সমগ্র ট্রাকিয়া ভর্তি হয়ে যায়। ট্রাকিয়ার ঝিল্লিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই শ্লেষ্মা বের করে দিতে কাশির সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো কাশির সাথে রক্ত বের হয়। একে ব্রংকাইটিস বলে। যখন এই শ্লেষ্মা গাঢ় হয়ে জমাট বেঁধে যায় তখন রোগীর জ¦র হতে পারে। কখনো কখনো এ কাশির সাথে রক্ত বের হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে এর থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে।

চিকিৎসা : ক) আইসক্রিম, ঠা-াপানীয়, এক কথায় ফ্রিজে রাখা যে কোনো ধরনের খাবার এবং সবধরনের টক-জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন।

খ) সকালে প্রথমেই এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে সামান্য হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন এবং দুপুর ও রাত্রেও পান করুন। এর ফলে জমাট কফ বের হয়ে আসবে। কখনো বমি হতে পারে।

গ) কেবল ক্ষিদে পেলেই হালকা গরম খাদ্য খাবেন।

ঘ) শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিন।

ঙ) প্রতিদিন লোহা/তামা/ রূপা/সোনা দ্বারা চার্জিত পানি চার গ্লাস থেকে দুই গ্লাস করে দু’মাস পান করতে হবে।

চ) প্রতিদিন দুই থেকে চার কাপ সবুজ রস এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।

ছ) বুকে ও পিঠে দিনে দু’বার পাঁচ মিনিট ধরে লাল আলোর আভা দিন।

জ) আধা টেবিল চামচ যোয়ানের গুঁড়ো সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে দুঘণ্টা সূর্যের আলোতে রেখে গরম করে খেয়ে নিন।

ঝ) ৬, ৭, ৮, ২২, ২৩, ২৭, ২৮, ৩০ ও ৩৪নং বিন্দুতে দিনে তিন বার চাপ দিন।

হার্ট : হার্ট একটি বিরামহীন পাম্প, যা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অবিরামভাবে পাম্প করতে থাকে। প্রকৃত অর্থে এটির কার্যক্রম মাতৃগর্ভেই শুরু হয়ে যায়। এজন্যে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য ও খাদ্যের প্রতি বিশেষ যতœ নেয়া প্রয়োজন।

যদি পিতা-মাতা উভয়ের অথবা যে কোনো একজনের যৌন হরমোন সঠিক মাত্রায় কাজ না করে তবে তাদের থেকে আগত শিশুর হার্ট দুর্বল থাকে এবং এরা ভীরু প্রকৃতির হয়। যেমন স¤্রাট আলেকজেন্ডার বিশ^ বিজয়ী ছিলেন। তাকে গ্রেট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছোটবেলায় ভীরু প্রকৃতির ছিলেন এবং মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেন। বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই যদি নি¤েœর বিষয়গুলো মেনে চলেন তবে তাদের থেকে আগত শিশু সুস্থ ও সবল হবে।

* হর অতিরিক্ত তাপ বের করে দিতে হবে।

* প্রতিদিন লোহা/তামা/রূপা/সোনা দ্বারা চার্জিত পানি পান দু মাস পান করতে হবে।

* স্বামী-স্ত্রী উভয়ই (স্বামী ১১, ১২ ও ১৪নং বিন্দুতে এবং স্ত্রী ১১, ১২ ও ১৩নং বিন্দুতে) দিনে দুবার একাধারে চার মাস চিকিৎসা করতে হবে।

হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় : শরীরের ভাষা : শরীরের কোনো বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা কোনো প্রতিকূল অবস্থায় শরীর আমাদেরকে বিভিন্ন সংকেত দেয়। সংকেতগুলো বুঝে শরীরকে রোগ মুক্ত হতে সাহায্য করা উচিৎ। যেমন

* শরীরের কোনো অঙ্গে বিদ্যুৎপ্রবাহ হ্রাস পেলে অথবা কোনো অঙ্গে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হলে তখন সেখানে ব্যথা হয়।

* বুক ধড়ফড় করলে বা বুকে ব্যথা হলে হৃদপি-ের সম্পূর্ন বিশ্রাম প্রয়োজন। যদি এ সময় ৩৬নং বিন্দু চাপ দিলে প্রচ- ব্যথা হয় তবে এক নাগাড়ে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন।

* যদি এই সংকেতকে অবজ্ঞা করা হয় তবে হার্ট এটাকের সম্ভবনা থাকে।

হার্টের সমস্যাবলি : ১. কোলেস্টেরল ও হার্ট ব্লক : খাদ্য থেকে যে কোলেস্টেরল রক্তে প্রবেশ করে, লিভার এই কোলেস্টেরল থেকে পিত্তরস উৎপন্ন করে। কিন্তু যদি লিভার সঠিকভাবে কাজ না করে তবে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। একসময় এই কোলেস্টেরল হার্টের শিরায় জমাট বাঁধে এবং রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা সৃষ্টি করে। নিচের নির্দেশ অনুযায়ী চললে এই কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

* হালকা খাবার খেতে হবে বিশেষ করে রাত্রে।

* সমপরিমাণ জিরার গুঁড়ো ও ধনিয়ার গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ করে সারাজীবন সেবন করতে হবে।

* আধা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো আধা কাপ মধুর সাথে মিশিয়ে পঁয়তাল্লিশ দিন থেকে ষাট দিন সেবন করতে হবে।

* দশ থেকে বার দিন বুকে ও পেটে নীল আলোর থেরাপি দিতে হবে।

* ২২, ২৩ ২৭ ও ৩৬নং বিন্দুতে দিনে দুবার আকুপ্রেশার চিকিৎসা করলে ইনশা-আল্লাহ চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ দিনের মধ্যে বিস্ময়কর সাফল্য দেখতে পারবেন।

হার্ট বড় হয়ে যাওয়া : যাদের নাভিচক্র উপরে উঠে যায় এবং সবসময় গ্যাসে পেট ফুলে থাকে, এই গ্যাস সবসময় তাদের হার্টের উপর নিচ থেকে উপরের দিকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। হার্ট বেলুুনের মতো নিচের দিকের এই চাপের ফলে পার্শে^ (ঠবৎঃরপধষু) বড় হয়ে যায়।

চিকিৎসা : ক) নাভীচক্র ঠিক করে দিতে হবে।

খ) প্রতিদিন সকালে নাভীচক্রের ব্যয়াম করতে হবে।

গ) প্রতিবেলা খাবারের পরে দুটি করে লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে হবে।

ঘ) দিনে দুবার ২৭, ২৯ ও ৩৬নং বিন্দুতে চাপ দিলে অল্পদিনের মধ্যে ইনশা-আল্লাহ ভাল হয়ে যাবে।

শিরা ফুলে যাওয়া : হার্ট অবিরাম পাম্প করে ধমনীর মাধ্যমে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেয় এবং সেখান থেকে দূষিত রক্ত শিরার মাধ্যমে সংগ্রহ করে। কিন্তু হার্ট দুর্বল হলে দূষিত রক্ত সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে এই রক্ত হাঁটুর নিচের ও উরুর শিরায় জমে থাকে। তাই এটি ফুলে যায়। দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলতে থাকলে শিরা নীল হয়ে যায়।

চিকিৎসা : হার্টের বিন্দুতে দিনে তিনবার চিকিৎসা করলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

অনিয়মিত হার্টবিট : আমাদের দেহে যে জৈব বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, এটিই দেহের সকল ভাইটাল অঙ্গ ও গ্রন্থিগুলোকে সক্রিয় রাখে। কোন কারণে এই প্রবাহ দুর্বল হলে হার্টবিট অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে বিট নিয়মিত রাখতে প্রেস-মেকার বসাতে হয়।

চিকিৎসা : ৮, ৯, ১১, ১৬, ২৩, ২৫, ২৮, ৩০, ৩৬ ও ২৬নং বিন্দুতে দিনে দুবার চিকিৎসা করতে হবে।

বুকে ব্যথা ও বুক ধড়ফড় করা : হার্টের উপর প্রচ- চাপ পড়লে এ সমস্যা দেখা দেয়। এটি হার্টের সর্ম্পূণ বিশ্রামের প্রয়োজন নির্দেশ করে।

চিকিৎসা : ক) এক নাগাড়ে ৭২ ঘণ্টা বেড রেস্টে থাকতে হবে।

খ) ৮, ২৮ ও ৩৬নং বিন্দুতে নিয়মিত চিকিৎসা করতে হবে।

অনিয়মিত রক্তপ্রবাহ : হার্টের সমস্যার সাথে থাইরয়েড/প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি ও এড্রিনাল গ্রন্থি ধীরগতিসম্পন্ন হলে এই সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসা : ৮, ২৮ ও ৩৬নং বিন্দুতে নিয়মিত দিনে দুবার চিকিৎসা ধীরে ধীরে এটি ঠিক হয়ে যায়। (চলবে)

অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন : বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়