সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৩

গর্ভধারণ নিরূপণ : প্রাচীন পদ্ধতি

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
গর্ভধারণ নিরূপণ : প্রাচীন পদ্ধতি

নতুন শিশু ভূমিষ্ঠ না হলে পৃথিবীতে মানবজাতির প্রবাহের ধারা অব্যাহত থাকতো না। গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান প্রতিটি নারীর কাছে পরম পাওয়া। এর মাধ্যমে তাঁর নারীত্বের সার্থকতা প্রতিপন্ন হয়। জীবনে রজঃস্রাব সূচনা হওয়ার পর প্রতিটি নারী স্বামী বা সঙ্গীর সাথে যৌন জীবনের চর্চার ফলে যখন কোনো মাসে মাসিকচক্র কার্যকর হতে না দেখেন, তখন তিনি একটা প্রাথমিক বার্তা পেয়ে যান গর্ভধারণের। কিন্তু এই প্রাথমিক ধারণাকে উপযুক্ত পরীক্ষণ ব্যতিরেকে নিশ্চিতরূপে গ্রহণ করা যায় না। এমন অনেক কারণ আছে যখন মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে কিন্তু গর্ভধারণ হয়নি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার মাধ্যমে হবু মায়েদের নিশ্চিত করে যে, তাঁরা আদৌ সন্তানবতী হয়েছেন নাকি হননি। গর্ভধারণ হলে মায়েদের জরায়ুতে একধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যাকে বলে হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন হরমোন বা সংক্ষেপে এইচসিজি। এর দ্বারা শতকরা নিরানব্বই ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। এই হরমোন মায়েদের মূত্রে নিঃসৃত হয় এবং ভোরের মূত্রে তার পরিমাণ বেশি থাকে। রাসায়নিকভাবে পরীক্ষাগারে তৈরি কাঠি বা স্টিক যাকে ডিভাইসও বলে, এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট অংশ বরাবর মূত্রে মিনিটখানেক ডুবিয়ে রেখে তুলে নিলে তাতে দু দাগ দেখলে গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। আর যদি একদাগ দেখা যায় তবে গর্ভধারণ হয়নি বলে প্রতিপন্ন হয়। অধিক জটিলতায় জরায়ুর আল্ট্রাসনোগ্রাম সকল সন্দেহ দূর করে দেয়। পাশাপাশি চিকিৎসক নিজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং সংশ্লিষ্ট হবু মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে নিশ্চিত হন, তিনি সত্যিকারের গর্ভধারণ করেছেন কি না। সকালবেলা বমি ভাব হওয়া, খাওয়ার রুচিতে পরিবর্তন, বিকৃত খাদ্যরুচি, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমন্বিতরূপে অপ্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ করে, ঐ হবু মা আদৌ গর্ভধারণ করেছেন কি না। আরেকটু সময় অতিক্রান্ত হলে অর্থাৎ প্রথম ট্রাইমেস্টার বা গর্ভধারণের প্রথম তিনমাস পার হলে মায়ের তলপেট স্ফীত হয়, চলনে-বলনে বিশেষ ধরন প্রকাশ পায়। তখন আর বিভ্রান্তি থাকে না, মা গর্ভধারণ করেছেন কি না তা নিয়ে। এতক্ষণ যা আলোচিত হলো তা হলো আধুনিককালের গর্ভধারণ নিরূপণ পদ্ধতি। কিন্তু প্রাচীনকালের মানুষেরা কীরূপে এই গর্ভধারণের সত্যমিথ্যা যাচাই করতেন? এ প্রশ্ন মনে উদয় হওয়া স্বাভাবিক। কৌতূহল না থাকলে তো মানুষের মনুষ্যত্ববোধই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই অটুট কৌতূহল আমাদের প্রাচীন কালের গর্ভধারণ নিরূপণ পদ্ধতি জানতে তাড়িত করে। এ বিষয়ে সিএনএন হতে কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

প্রকাশিত প্রাচীন মিশরীয় কাগজ ‘প্যাপিরাস কার্লসবার্গ কালেকশন’ হতে প্রাপ্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক একটা প্যাপিরাস দুহাজার আঠারো সালের শেষের দিকে কোপেনহোগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অনুবাদ করেছেন। এর দ্বারা প্রায় তিন হাজার পাঁচশো বছর আগেকার মিশরীয়দের গর্ভধারণ ও শিশুর লিঙ্গ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত একটি অভিনব পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া গেছে। এর দ্বারা প্রমাণ হয়, মানবসভ্যতায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস আমাদের ধারণার চেয়েও উন্নত এবং প্রাচীন। পরন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রাচীন মিশরীয়রা অনেক বেশি অগ্রণী ছিলেন।

তাদের ব্যবহৃত এ পদ্ধতিতে গর্ভবতী পরীক্ষাপ্রার্থী মাকে দুটো আলাদা ব্যাগে প্রস্রাব করতে দেওয়া হতো। একটি ব্যাগে থাকতো গমের দানা ও অন্যটি থাকতো যবের দানায় ভরা। এরপর পর্যবেক্ষণ করা হতো কোন্ ব্যাগের দানা আগে অঙ্কুরিত হয়। আগে গম অঙ্কুরিত হলে মায়ের গর্ভে কন্যা শিশু আর যব অঙ্কুরিত হলে মায়ের গর্ভে ছেলে শিশু আছে বলে ধরা হতো। কোনো ব্যাগেই অঙ্কুর না গজালে ধরে নেওয়া হতো নারীটি গর্ভবতী নন। এই পরীক্ষা শুধু মিশরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পরবর্তীতে গ্রিক, রোমান ও মধ্যযুগীয় ইউরোপেও এই পদ্ধতি ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। ষোলোশ নিরানব্বই সালে প্রকাশিত একটি জার্মান লোককথার বইয়ে এমনকি উনিশশো ষাটের দশক পর্যন্ত এশিয়া মাইনরে এই পদ্ধতি চালু ছিল বলে জানা যায়।

উনিশশো তেষট্টি সালে একদল গবেষক এই পদ্ধতি পরীক্ষা করে শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণে ব্যর্থ হন। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাব প্রায় শতকরা সত্তর ভাগ ক্ষেত্রে গম বা যবের দানা অঙ্কুরিত করতে সক্ষম। গর্ভাবস্থায় মায়েদের প্রস্রাবে নির্গত ইস্ট্রোজেন হরমোন বীজের অঙ্কুরোদগমে সহায়তা করতে পারে বলে তারা একমত হন।

আবার চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস গর্ভধারণ পরীক্ষার্থে একটা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। তিনি এক ঋতুচক্র না হওয়া হবু মাকে রাতে শোয়ার আগে পানি ও মধুর মিশ্রণ পান করতে দিতেন। যদি এতে রাতে পেট ফুলে যেতো এবং পেটে কামড় দিয়ে ব্যথা হতো তাহলে তিনি নিশ্চিত হতেন যে ঐ মা গর্ভবতী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়