সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৫

এ আগুন কিসের আগুন?

অনলাইন ডেস্ক
এ আগুন কিসের আগুন?

আগুন লেগে কোথাও না কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর কোন্ দিন না পাওয়া যায়! কোনো না কোনোভাবে আগুন লাগছেই। সতর্কতার অভাবে লাগছে, কারো কোনো না কোনো ভুলের জন্যে লাগছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে লাগছে, সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো থেকে লাগছে, চুলা থেকে লাগছে, গ্যাস লিকেজ থেকে লাগছে, আরো কতো কারণে লাগছে। শত্রুতা ও ঈর্ষা বা প্রতিহিংসাবশত যে আগুন লাগে, সেটা অন্য সকল আগুন থেকে ভয়ঙ্কর।

গত শুক্রবার রাতে ফরিদগঞ্জে আগুনে পুড়লো এক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। এ আগুন নিয়ে লিখেছেন সিনিয়র সাংবাদিক প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে আগুনে পুড়ে গেছে রায়হান ফ্যাশন হাউজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুক্রবার (৮ আগস্ট ২০২৫) রাতে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারের এ ঘটনায় কাউসার হোসেন রায়হান নামে ওই ব্যবসায়ীর ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। সংসার চালানোর একমাত্র মাধ্যম দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দিশেহারা তিনি। খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও আগুনে দোকানের ডেকোরেশনসহ মূল্যবান সব জিসিনপত্র পুড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছে ওই বাজারের কয়েকটি দোকানপাট।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সারাদিন ব্যবসার কাজ শেষে রাত ১০টায় দোকানের মালিক সার্টার বন্ধ করে বাসায় চলে যান। রাত ১২টার দিকে দোকানের ভেতরে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন জ্বলতে দেখে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের সময় স্থানীয় এলাকাবাসীসহ ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। প্রতিবেশী ব্যবসায়ী মো. সিহাব হোসেন বলেন, রাতে আগুন লাগার পর আমি কাউসার হোসেন রায়হানকে খবর দেই। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা বলতে পারবো না। দোকানের স্বত্বাধিকারী কাউসার হোসেন রায়হান জানান, ডেকোরেশনসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করে আমি এ ব্যবসা করছি। পরিবার নিয়ে ভালোই চলছিলাম। স্বপ্ন ছিলো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে অনেক ভালো কিছু করবো। এখন সব পুড়ে গেলো। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেলো বলতে পারলাম না! কীভাবে আগুন লেগেছে, তাও নিশ্চিত হতে পারিনি। প্রতিদিনের ন্যায় রাত ১০টার সময় আমি দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যাই। পরে খবর পাই আমার দোকানে আগুন লেগেছে। এসে দেখি দোকানের ভেতরে থাকা সব মালামাল পুড়ে গেছে। এতে আমার ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দোকানে নগদ ৩ লাখ টাকা ছিলো, তাও পাইনি।

আগুন কীভাবে লেগেছে সেটা নিশ্চিত হতে পারলে গৃদকালিন্দিয়া বাজারের ব্যবসায়ী কাউসার অনেক কষ্টের মধ্যেও ন্যূনতম স্বস্তি খুঁজে পেতেন। এটা আগুনে পুড়ে যাওয়া আপনজনের লাশ খুঁজে পাওয়ার মতোই স্বস্তি। এ আগুন যদি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে হয়, তাহলে সেটা এক বিষয়। আর এ আগুন যদি নাশকতার জন্যে হয়, তাহলে সেটা উদ্বেগের বিষয়। সর্বোপরি এ আগুন যদি কারো ঈর্ষা ও প্রতিহিংসার কারণে হয়, তবে সেটা অনেক দুঃখজনক বিষয়। আগুনের কারণ জানা থাকলে ক্ষয়ক্ষতির শিকার মালামাল ফেরত পাওয়া যায় না, বীমাবৃত হলে চেষ্টা-তদবিরে কিয়দংশ ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, আবার আগুনের জন্যে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তার কাছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কর্তৃক ক্ষতিপূরণ চাওয়া যায়, তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। এর চাইতে কী আর করা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্যে আমাদের দেশে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় যে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে, সেটা যৎসামান্য। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সামান্য সাহস পায়, এর চাইতে বেশি কিছু পায় না। পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, শুভাকাক্সক্ষী, বন্ধুবান্ধব, সৎ প্রতিবেশী, চিত্তবান বিত্তবান ব্যক্তির সহযোগিতা ছাড়া আগুন সহ নানা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। যে কারণেই গৃদকালিন্দিয়ার ব্যবসায়ী কাউসারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে উপরোল্লিখিত সহযোগিতা, সর্বোপরি তার সাহস ও প্রত্যয় এবং মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা দরকার। আমরা আর কোনো কাউসারের স্বপ্ন আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাক, সেটা চরম শত্রুর ক্ষেত্রেও প্রত্যাশা করি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়