প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪২
যে কারণে বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যায়

এবার বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হচ্ছে। তাই বেশ কিছু পানিবাহিত রোগ দেখা যাচ্ছে।
বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ
পানিদূষণ : বন্যার কারণে বা বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে বিশুদ্ধ পানির উৎসের সঙ্গে দূষিত পানি মিশে যায়। এতে পানীয় জলের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়। বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়ায়।
বন্যা উপদ্রুত এলাকা : বন্যার কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ দূষিত পানি ব্যবহার করে। এ সময়ে স্যানিটেশনের ব্যবস্থাও ঠিক থাকে না। ফলে রোগজীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
খাবারে জীবাণু : অপরিষ্কার পানিতে ধোয়া ফল, সবজি বা অন্যান্য খাবার থেকেও রোগ ছড়াতে পারে। যথাযথ তাপমাত্রায় রান্না না করলেও খাবারে জীবাণু থেকে যেতে পারে।
জীবাণুর বংশবৃদ্ধি : আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর বংশবৃদ্ধি সহজ হয়।
বর্ষাকালে যেসব পানিবাহিত রোগ বাড়ে
ডায়রিয়া ও আমাশয় : এটি সাধারণ পানিবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। দূষিত পানি ও খাবার থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর কারণে এই রোগ হয়। রোগীর পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমি ও পেটব্যথা, এমনকি জ্বরও হতে পারে। তবে পায়খানার সঙ্গে রক্ত বা আমাশয় ও পেট কামড়ানো দেখা দিতে পারে। চাল ধোয়া পানির মতো তরল ও সাদা পায়খানা হলে কলেরা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড : এটি একধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা দূষিত পানি ও খাবার থেকে ছড়ায়। সালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি নামের দুটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এ দুটি রোগ হয়ে থাকে। রোগীর প্রচণ্ড জ্বর, বমি, পেটব্যথা, র্যাশ, পায়খানার সমস্যা, মাথাব্যথা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো টাইফয়েডের সঠিক চিকিৎসা করা না গেলে পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত হয়, এমনকি নাড়ি পর্যন্ত ছিদ্র হয়ে যায়, শরীরের নানা জায়গায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এতে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হয়।
জন্ডিস : দূষিত পানি ও রাস্তার পাশের অপরিচ্ছন্ন খাবারের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘এ’ বা ‘ই’ ভাইরাস দ্বারা হতে পারে এই রোগ। এ সময় রোগীর চোখ ও শরীর হলুদ হয়ে যায়, প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। তা ছাড়া খাবারে অনীহা, বমি বা বমিভাব, পেটব্যথা, জ্বর প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কলেরা : এটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি রোগ, যা দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
লেপ্টোস্পাইরোসিস : এটি ‘লেপ্টোস্পিরা’ ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এই রোগ সাধারণত সংক্রমিত প্রাণী, বিশেষ করে ইঁদুরের প্রস্রাবের মাধ্যমে দূষিত পানি থেকে ছড়ায়। মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, জন্ডিস, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমির মতো রোগের লক্ষণ দেখা যায়। সঠিক চিকিৎসা না হলে মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হতে পারে।
অন্যান্য পেটের সংক্রমণ : ব্যাকটেরিয়াল ডিসেন্ট্রি, ভাইরাল ডায়রিয়া, প্রটোজোয়াল ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগও এই সময় বৃদ্ধি পায়।
যেসব সতর্কতা অবলম্বন জরুরি
বিশুদ্ধ পানি পান : পানি ফুটিয়ে, ফিল্টার করে বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পান করা উচিত।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা : খাবার আগে, অপরিচ্ছন্ন কিছু স্পর্শ করে ও টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
খাদ্যের সুরক্ষা : খোলা বা বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ফল ও সবজি পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে।
পুকুরের পানি ব্যবহারে সতর্কতা : দূষিত পুকুর বা নদীর পানিতে গোসল বা মুখ-হাত ধোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাইরের খাবার, বিশেষ করে খোলা খাবার একদমই খাওয়া যাবে না। গরমে রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া পানি, শরবত, জুস প্রভৃতি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হঠাৎ বেশি অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র : প্রথম আলো।