প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৩
রেলওয়ের জায়গায় এমন লিংক রোডসহ অনেক কিছুই হতে পারে

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে চাঁদপুর শহরের হাজী মহসিন রোডের সাথে সংযোগ রক্ষা করে ছায়াবাণী রেলওয়ে সিএসডি লিংক রোড নামক নতুন রাস্তাটির উদ্বোধন করা হয়েছে। ফুলেল ফিতা কেটে রোডটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি রোডের পাশে বৃক্ষরোপণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, এটি একটি পাড়া-মহল্লার রাস্তা হলেও শহরের মধ্যবর্তী স্থানে। শহরের যানজট নিরসনে এই রোডটি ভূমিকা রাখবে। এই রাস্তা চাঁদপুর শহরের প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপণী বিতানসহ নতুন বাজার, ইচলী ও ঢালীর ঘাট যাতায়াতের সহজ মাধ্যম। তাই এই রাস্তার পাশে কোনো দোকান দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে হাঁটা ও চলাচলের জন্যে ফুটপাথ করা হবে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
রেলওয়ের জায়গায় উল্লেখিত লিংক রোডটি করতে গিয়ে চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এটা সাবেক মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের কারণে হয়েছে। তিনি রেল কর্তৃপক্ষকে পূর্ব অবহিতি ব্যতিরেকে রেলওয়ের পরিত্যক্ত লাইনে লিংক রোডের কাজটি প্রকল্পভুক্ত করেছেন, যে কারণে তার পালিয়ে যাওয়ার পর পৌর প্রশাসকদের এ কাজটি করতে গিয়ে বারবার রেল কর্তৃপক্ষের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অবশেষে রেল কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করেই ছায়াবাণী রেলওয়ে সিএসডি লিংক রোডের কাজ শেষ করে উদ্বোধন সম্পন্ন করেছে। শহরের যানজট নিরসনে রেলওয়ের জায়গায় এমন লিংক রোড আরো করা যেতে পারে। যেমন কোর্ট স্টেশনের পশ্চিম দিকে বড়ো স্টেশনমুখী অ্যাপ্রোচ রোডের সংযোগ রক্ষা করে রেলক্রসিং দিয়ে চৌদ্দ কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে বকুলতলা রোড পর্যন্ত কিংবা বকুলতলা রেলওয়ে মার্কেটের সামনে রেলক্রসিং নির্মাণ করে বকুলতলা রোড পর্যন্ত লিংক রোড বানানোর স্বল্প খরচের উদ্যোগ নিতে পারে চাঁদপুর পৌরসভা। এতে শহরের বিপুল সংখ্যক মানুষ কোর্ট স্টেশন রেলক্রসিং ও ব্যস্ততম কালীবাড়ি মোড় এড়িয়ে বিকল্প পথে পালবাজার, পুরাণবাজার, প্রধান ডাকঘর, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয়, স্ট্র্যান্ড রোড, চৌধুরী ঘাট, ৫নং ঘাট ইত্যাদি স্থানে, এমনকি মোলহেডে যেতে পারবে। এছাড়া চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের জায়গায় সিএনজি অটোরিকশা, অটোবাইক ও রিকশা স্ট্যান্ড এবং পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারে। চৌদ্দ কোয়ার্টারের সামনে সাবেক খেলার মাঠটি সংস্কার বা নির্মাণ করতে পারে। এজন্যে অতি অবশ্যই চাঁদপুর পৌরসভাকে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষের অপারগতায় তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে, চাঁদপুরে রেলওয়ের বহু একর সম্পত্তি জবরদখল হয়ে বিক্রিও হয়ে গেছে, যেখানে যুগের পর যুগ রেল কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ নেই। চাঁদপুরে রেলওয়ের জায়গা কৃষি লীজ এনে চাষাবাদের পরিবর্তে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের প্রমাণ রয়েছে, যেখানেও দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদ অভিযান নেই। এমন বাস্তবতায় শহরের যানজট নিরসনে লিংক রোড, প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে পাবলিক টয়লেট, যানবাহনের স্ট্যান্ড, খেলার মাঠ ইত্যাদি নির্মাণের প্রয়োজনে পৌরসভাকে প্রয়োজনীয় ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন প্রদান কিংবা লীজ প্রদানের বিষয়টি ভাবতেই হবে। অহেতুক গোঁড়ামি পরিহার করতে হবে। অন্যথায় রেল কর্তৃপক্ষকে ব্রিটিশ আমলে স্বীয় গোঁড়ামির পরিণতিতে তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান মধুসূদন রায়ের সাথে সমঝোতা করতে গিয়ে তাঁর নামে মধুরোড স্টেশন বানিয়ে দেয়ার মতো খেসারত দিতে হয় কিনা সেটা আগাম ভেবে দেখতে হবে।
উল্লেখ করা দরকার, রেলওয়ের গোঁড়ামির মধ্যেই জেলা প্রশাসন হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের সম্মুখে রেলওয়ে লেকে মুক্তিযুদ্ধের সুদৃশ্য স্মারক ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও বড় স্টেশন মোলহেডে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমির স্মারক স্তম্ভ ‘রক্তধারা’ নির্মাণ করেছে।
স্মর্তব্য, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিতান্তই গোঁড়ামি করে রেলমন্ত্রী চাঁদপুরের সবচে’ বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র বড় স্টেশন মোলহেডে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পর্যটন কর্পোরেশনকে পর্যটনবান্ধব প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয় নি, বরং নিজেদের সীমিত সামর্থ্যে কিছু করার উদ্যোগ নিয়ে কার্যত তেমন কিছুই করতে পারে নি। কাজের নামে বস্তুত প্রহসন করেছে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা সীমিত সামর্থ্যের আওতায় পর্যটকদের জন্যে যা কিছু করেছে, তা দিয়েই পর্যটন কেন্দ্রটি কোনোরকমে চলছে, যাতে প্রতিনিয়ত রেল কর্তৃপক্ষের প্রতি ওয়াকিবহাল পর্যটকদের ক্ষোভের অদৃশ্য তীর নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। কোনো একদিন কোনো ক্ষুব্ধ পর্যটক বা সচেতন নাগরিক যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের জনস্বার্থপরিপন্থী গোঁড়ামির জন্যে মামলা দায়ের করে কিংবা উচ্চ আদালত সো মোটো (নিজের ইচ্ছায়) রেল কর্তৃপক্ষের প্রতি রুল জারি করে, তাহলে রেল কর্তৃপক্ষকে হার মানা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে আমরা বিশ্বাস রাখি। কেননা রেল কর্তৃপক্ষ বিনা যুক্তিতে নিজেদের অব্যবহৃত জায়গা পরিত্যক্ত/অব্যবহৃত রেখে দেশের প্রচলিত আইনে জনস্বার্থকে উপেক্ষা করার মতো ক্ষমতা রাখে না।