শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে কচুক্ষেত থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:০৩

স্বাধীনতার ঘোষক' দাবিদার চাঁন মিয়ার মামলা বাণিজ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

কামরুজ্জামান টুটুল
স্বাধীনতার ঘোষক' দাবিদার চাঁন মিয়ার মামলা বাণিজ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

'স্বাধীনতার ঘোষক' দাবিদার চাঁন মিয়ার মামলা বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে এলাকাবাসী। অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিজেই প্রায় অর্ধশত মামলার বাদী হয়ে মামলা পরিচালনা করে দীর্ঘ দিন ধরে শতাধিক পরিবারকে হয়রানি করে আসছেন। এর প্রতিবাদে গত শুক্রবার (৫ অক্টোবর ২০২৫) হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও বাজারের ঈদগাহে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শাহাদাত মেম্বারের নেতৃত্বে মিছিল শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ে চাঁন মিয়া নিজে বাদী হয়ে এবং অন্যের মামলা-মোকদ্দমার কোর্ট পাওয়ার নিয়ে মামলা পরিচালনা নেশা এবং পেশায় পরিণত করে সাধারণ মানুষদের হয়রানির মাধমে চাঁদাবাজি করে আসছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও তার এ অপকর্ম বন্ধ হয়নি। ২০২১ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক চাঁন মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিলো । সে সময়ে চাঁন মিয়া আত্মগোপনে থাকলেও পরে অদৃশ্য ইশারায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পুনরায় মামলা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে । চাঁদ মিয়ার দায়ের করা সব মামলা ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের দাবিতে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার ১নং রাজারগাঁও গ্রামের মৃত ছিদ্দিক বেপারীর ছেলে চাঁন মিয়া স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর হঠাৎ নিজেকে 'স্বাধীনতার ঘোষক' দাবি করে ২০১০ সালের ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট সেকশনে একটি রিট দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। তাই তিনি রিট আবেদনটি শুনানি না করে নিজেকে প্রশাসনের কাছ থেকে আড়াল করতে ঢাকা ছাড়েন এবং নিজ গ্রাম রাজারগাঁওয়ে অবস্থান করেন। এরপর থেকে শুরু হয় চাঁন মিয়ার মামলা বাণিজ্য। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় সামনে রেখে মানুষকে হয়রানি করতে অকারণেই কথায় কথায় মামলা দিয়ে টাকা রোজগারের নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেন। মানুষের সাথে ঝগড়া লাগানো এবং ঝগড়া মিটানোর কথা বলে টাকা নেয়া তার যেন এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এ রকম অপকর্মের অসংখ্য নজির থাকার অভিযোগ রয়েছে। চাঁন মিয়ার দাযের করা মামলায় বহু আসামীর পরিবার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।

শাহাদাত মেম্বারের লিখিত বক্তব্যের তথ্য মতে, চাঁন মিয়া নিজেই একা প্রায় অর্ধশত মামলা পরিচালনা করে আসছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য মানুষের কাছ থেকে মামলা পরিচালনা করার পাওয়ার নিয়েছেন। ২০১২ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চাঁন মিয়া বাদী হয়ে করা মামলার নং জি আর ৫০/২০১২,২৪০/২০১২, দায়রা জজ আদালত ১৭২/২০১৫, ৫২০/২০১৫, ১৭১/ ১১৪-এ বিবাদী ছামাদ পাটওয়ারী, ৪৬/২০১৮-এ চাঁদপুর জজ কোর্টে বন্টন স্বত্ব-বিবাদী ৮০ জন। মামলা নং- ১৬৭৩/২০১৯, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল মামলায় বিবাদী নাজিমুদ্দিন গং, মামলা নং ১৬৯৪/২০১৯- এ বিবাদী করা হয় ১০২ জন। মামলা নং ৩১৮.৩০.৪,২০১৮-এ বিবাদী ১৪ জন। মামলা নং ১৬৯৩/২০১৯-এ বিবাদী রফিকুল ইসলাম গং। মামলা নং ১৬৯১/১৯-এ বিবাদী লোকমান বেপারী। মামলা নং ১৬৯৫/১৯-এ বিবাদী ফজলুল হক। মামলা নং ১৬৯৬/২০১৯-এ বিবাদী অলি উল্লাহ, ১৬৯৬/২০১৯-এ বিবাদী গফুর গং, ১৬৯৬/১৯-এ বিবাদী কাসেম পাটওয়ারী গং, ১৬৯৬/১৯-এ বিবাদী রাজ্জাক, ১৬৯৬/১৯-এ বিবাদী ওসমান মৌলভী গং, ১৬৯৬/১৯-এ বিবাদী নূরুল ইসলাম গং, মামলা নং ১৬৯৭/১৯-এ বিবাদী সেলিম গং, মামলা নং ১৬৯৮/১৯-এ বিবাদী রফিক। এ সকল মামলার প্রতিবাদে গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট আবু তাহের চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ছাড়াও এলাকার সর্বস্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়