প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
স্ট্রোক মানে হোলো অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা রুদ্ধ হওয়া। যখন কোনো মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে তৎপরবর্তী অংশে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত কারণে মস্তিষ্কের টিসু পঁচে যায় কিংবা রক্তনালীতে চর্বি সঞ্চয়ের কারণে নালিকার অভ্যন্তরীণ ক্যালিবার কমে গিয়ে তৎপরবর্তী অংশে রক্তসঞ্চালন রহিত হয়ে অক্সিজেন পৌঁছুতে পারে না, তখন যে উপসর্গ ও অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকেই আসলে স্ট্রোক বলে। হার্টের ক্ষেত্রে রক্তসঞ্চালনের বাধার কারণে মায়োকার্ডিয়াম বা হার্টের মধ্যবর্তী পেশির স্তরে অক্সিজেন ঘাটতি হওয়ায় টিস্যুতে ইনফার্কশন হয়। একে বলা হয় হার্টঅ্যাটাক। উপরোক্ত উভয় ধরনের অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তি স্ট্রোক বা স্ট্রোকের ন্যায় অবস্থায় পতিত হয় এবং অজ্ঞান হওয়া বা অচেতনতা ও পরিশেষে প্যারালাইসিসের মতো ঘটনা ঘটে। বাথরুম বা টয়লেটে ¯œান বা প্রাকৃতিক কৃত্য সমাপনকালীন মানুষ এ ধরনের স্ট্রোক ও ইনফার্কশনে আক্রান্ত হয় বেশি।
২০১১ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক হাসপাতালে স্ট্রোক রোগীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১৯৪৯ জন রোগীর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে টয়লেট সংক্রান্ত কারণ বিদ্যমান। স্ট্রোকগুলো হয় মলত্যাগের সময়, নয়তো মূত্রবিয়োগের সময় কিংবা ¯œানের সময়েই সংঘটিত হয়েছে। সাধারণত গ্রীষ্মের চেয়ে শীতকালে, তরুণের চেয়ে ৬৫ বছরোর্ধ্ব মানুষের বাথরুমে স্ট্রোকের হার অধিক। ভোরের চেয়ে লেট মর্নিং বা সকাল ৮টা থেকে সকাল ১১টার মধ্যেই বাথরুমে সংঘটিত স্ট্রোকের হার বেশি। লো কমোডে বসে মলত্যাগের চেয়ে হাই কমোডে বসে মলত্যাগকারীদের স্ট্রোকের হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
যখন কেউ মলত্যাগ করতে বসে বিংবা মূত্রত্যাগে বসে, তখন তার পক্ষে নি¤œাংশে চাপ দিতে হয় অধিক। এতে দুইপায়ে ও নিম্নাংশে রক্ত আটকে থাকে বেশিক্ষণ ধরে। এ সময় হার্ট নিজে রক্ত সরবরসহ পায় না। ফলে হার্টঅ্যাটাক হয় এবং মস্তিষ্কে রক্তনালী ছিঁড়ে যায় বা ফেটে যায় ও স্ট্রোক হয়। এ ধরনের ব্যক্তি দীর্ঘক্ষণ চাপ দিয়ে বসে থাকার পর যখন উঠে দাঁড়ায় তখনই রক্তসঞ্চালনে ঘাটতি দেখা দেয় ও স্ট্রোক বা হার্টঅ্যাটাক হয়।
শীতকালে স্নান বা গোসল করতে গেলে হুট করে মাথায় পানি ঢাললে রক্তের পক্ষে পরিবেশের শীতল তাপমাত্রার সাথে দ্রুত খাপ খাওয়ানো সম্ভব হয় না। এতে স্ট্রোক সংঘটিত হয়।
বাথরুমে স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাক কমাতে হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। বাথরুমে মুক্ত বায়ুপ্রবাহ থাকা দরকার। অনেকেই বাথরুমের আবদ্ধ সংকীর্ণ অংশে ধূমপান করেন। এটা পরিহার করতে হবে। ¯œানের সময় আগে শরীরের পায়ে-হাতে পানি ঢালতে হয়, যাতে রক্ত চলাচল ও পরিবেশের তাপমাত্রার মধ্যে সমন্বয় ঘটানো সম্ভব হয়। মল নরমকারক খাবার ও ল্যাকটুলোজ সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, ফলে বাথরুমে স্ট্রোক কমে আসবে।
যাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা নিয়মিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নচেৎ বাথরুমে স্ট্রোকের শিকার হতে পারেন। নি¤œ রক্তচাপের ব্যক্তিরাও বাথরুমে স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যাদের রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল আছে তাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ডায়বেটিসের রোগীরা লো গ্লুকোজের কারণে বাথরুমে পড়ে গিয়ে স্ট্রোকাক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই হাইপ্রেসার ও লোপ্রেসারের রোগী, কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী এবং ডায়াবেটিক পেশেন্টরা বাথরুমে যাওয়ার সময় অন্যরা একটু খেয়াল রাখা উচিত।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখাসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক যে কোনো প্রশ্ন পাঠান।
ই-মেইল : রহঃড়.ধষধসরহ@মসধরষ.পড়স