প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৭
বিনোদন আর নীতি-নৈতিকতার কনটেন্ট জগতে আপন খানের সাফল্য
‘কালা বিলাই’ থেকে লাখো মানুষের মন জয় করা চাঁদপুরের আপন খানের গল্প

ইন্টারনেটের বিস্তৃতি আর স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে আধুনিকতার এই যুগে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে না এমন মানুষ মেলা কঠিন। তাই একসময় কনটেন্ট তৈরির বিষয়টি ব্যয়বহুল হলেও প্রযুক্তি সে অবস্থাকে একেবারে মিনিমাল জায়গায় নিয়ে এসেছে। এখন একটি স্মার্টফোন দিয়েই কনটেন্ট নির্মাণ সম্ভব। তবে সব বয়সি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংস্পর্শে এলেও এ মাধ্যমে সবচেয়ে সক্রিয় তরুণরা। নিজের পেশাদার সেক্টরে সামাজিক যোগাযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড করে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। ইউটিউব, টিকটক, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে এখন যে কেউই হতে পারেন কনটেন্ট নির্মাতা।
দেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের মেঘনা তীরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আপন খান। হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়েই শখের বসে শুরু করেন কনটেন্ট বানানো। ২০১৯ সালে কনটেন্ট নির্মাণ শুরু করা আপন সময়ের ব্যবধানে এখন আলোচিত। শুরুর দিকে পেরোতে হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। বিনোদনমূলক কনটেন্ট নির্মাণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ইন্টারনেট দুনিয়ায় ‘কালা বিলাই’ নামের আইডিতে কনটেন্ট নির্মাণ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি। চাঁদপুরের নিজস্ব ভাষায় নির্মিত মজার মজার ভিডিও মানুষকে দারুণভাবে আকর্ষণ করেছে। ইতোমধ্যে জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের আলোচিত ভিডিও কন্টেন্ট নির্মাতাদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও কনটেন্টে মেতেছে তরুণ প্রজন্ম। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন আপন খানসহ তার টিমের সদস্যরা। ৫ সদস্যের টিমে সময়োপযোগী কনটেন্ট তৈরি করে কুড়িয়েছেন ব্যাপক বাহবা। তার ভিডিওগুলোতে শিক্ষণীয় তথ্য, হাস্যরস এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার মিশ্রণ থাকে, যা তাকে ফেসবুকে একটি বিশাল ফলোয়ার বেস তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তিনি তার কনটেন্টের মাধ্যমে অনেকের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রেরণা দিয়েছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমাগত সক্রিয় থেকে তার সৃজনশীলতা ও দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। অনার্স পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি সময় দেন তার ভাইয়ের একটি মোবাইলের দোকানে। এর ফাঁকে সহকর্মী ভাই বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করেন মজাদার কনটেন্ট। কনটেন্টের প্রয়োজনীয় গল্প লেখা, এডিটিং এবং পরিচালনার কাজ করেন তিনি নিজেই। ভালো কনটেন্ট বানিয়ে রেভিনিউ জেনারেটের পাশাপাশি কাজ করছেন বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে। পরিবার ও প্রতিবেশীদের সব বাধা পেরিয়ে এখন তিনি সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর। প্রথমে সফলতা না পেলেও হতাশ না হয়ে ২০২৩ সাল থেকে এর সুফল দেখতে পান তিনি। বর্তমানে ফেসবুকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় দেড় মিলিয়ন। আপনের ধারণা মতে, ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে শুধু বিনোদন দেওয়াই নয়, এর মাধ্যমে সমাজের জন্যে ভালো কাজও করা সম্ভব। বর্তমান প্রজন্মকে নীতি-নৈতিকতার ওপর ধারণা দেওয়া একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কাজ। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, অসংগতি, সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরার একটি বৃহত্তর প্লাটফর্ম এটি। তার ইনকাম থেকে কিছু অংশ থেকে সামাজিক ও মানবিক কাজে অবদান রাখার চেষ্টা করেন আপন খানসহ তার টিমের অন্য সদস্যরাও।
আপন খান বলেন, পৃথিবী এখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। তাই বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে কনটেন্ট ক্রিয়েশনে সম্ভাবনা অনেক। কনটেন্ট ক্রিয়েশন যেমন সম্ভাবনাময় পেশা তেমনি এখানে নানা ঝুঁকিও রয়েছে। অনেক সময় ভিডিও প্রকাশ করার পর সাউন্ডে সমস্যা হতে পারে, যেমন অডিও ফাইলের সমস্যা বা প্ল্যাটফর্মের সেটিংসের কারণে সাউন্ড না আসা। এটি দর্শকদের অভিজ্ঞতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তার ধারণা মতে, ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে শুধু বিনোদন দেয়াই নয়, এর মাধ্যমে সমাজের জন্যে ভালো কাজও করা সম্ভব। বর্তমান প্রজন্মকে নীতি-নৈতিকতার ওপর ধারণা দেয়া একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কাজ। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, অসংগতি, সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরার একটি বৃহত্তর প্লাটফর্ম এটি। বেকারত্ব দূর করার অন্যতম মাধ্যমও হতে পারে এই প্ল্যাটফর্ম। ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমেও ভালো আয় করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব।
লেখক : সমাজকর্মী ও ফিচার লেখক, চাঁদপুর সদর। ০১৮৩০-৮৮৫০০০