প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০
নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনার ৩০ বছর : চাট্টিখানি কথা নয়
চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছরপূর্তির এই শুভলগ্নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ইলিশের বাড়ি খ্যাত বাংলাদেশের অন্যতম জেলা চাঁদপুর। এ জেলায় আমার জন্ম, লেখাপড়া, আমার বেড়ে ওঠা। ১৯৯৩ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে এইচএসসি পড়াকালে আমার গ্রাম বলাখাল থেকে নিয়মিত ট্রেনে করে চাঁদপুরে আসা-যাওয়া করতাম। প্রতিদিন কলেজের ক্লাস শেষ করে গুয়াখোলা রোডস্থ আমার বড়োভাইয়ের বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল ৪টার ট্রেনে আবার বাড়ি ফিরতাম। এটা ছিলো আমার নিয়মিত রুটিন। আবার কখনো কখনো ট্রেন মিস করলে বা এমনি এমনি বড়োভাইয়ের বাসায় থেকে যেতাম। তাই চাঁদপুর শহরকে ঘিরে রয়েছে আমার তরুণ বয়সের হাজারো স্মৃতি।
সময়ের বিবর্তনে কতো কিছু বদলেছে। বর্তমান সময়ের মতো ফেসবুক, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট তখন ছিলো না বিধায় পত্রপত্রিকা আর ম্যাগাজিনই (প্রিন্ট মিডিয়া) ছিলো দেশ-বিদেশের নানা খবরাখবর জানার একমাত্র মাধ্যম। আমার বড়োভাই মরহুম কাজী তাহেরুল ইসলাম ছিলেন পত্রিকা পড়ার পোকা, তাঁর ঘরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাণ্ডম্যাগাজিন রাখা হতো, তিনিই আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন পত্রিকা পড়ার ব্যাপারে। পত্রিকা পড়লে দেশ-বিদেশের নানা খবরাখবর জানা যায়, এতে করে জ্ঞান বাড়ে। বলতে গেলে তাঁর উৎসাহেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিলো। তাঁর কাছেই দেশের প্রথম সারির পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক, ইনকিলাব, সংবাদ, সংগ্রাম, দৈনিক বাংলা, খবর, বাংলার বাণী, ভোরের কাগজ-এর সাথে পরিচয়। প্রথম আলো এসেছে তারও অনেক পরে। এসব জাতীয় পত্রিকায় দেশ-বিদেশের নানা খবর পাওয়া গেলেও আঞ্চলিক খবরগুলো থাকতো অনেক ক্ষুদ্র আকারে। অনেক সময় নিজ জেলার কোনো আলোচিত ঘটনা, অথচ জাতীয় পত্রিকায় সেগুলো আতশী কাচ দিয়ে খুঁজে বের করতে হতো। তাও আবার প্রথমদিনই শুধু, পরে আর সেগুলোর কোনো ফলোআপ থাকতো না।
তাই মফস্বলের খবর জানতে স্থানীয় পত্রিকাগুলোই ছিলো একমাত্র ভরসা। চাঁদপুর থেকে আগে ‘সাপ্তাহিক, চাঁদপুর’ এবং ‘রক্তিম আভা’ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। তারপর এলো চাঁদপুর কণ্ঠ। এটি প্রথমে সাপ্তাহিক আকারে বের হতো। পরে এটিরই সর্বপ্রথম চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। স্থানীয় পর্যায়ে যেটা ছিলো অকল্পনীয় এবং চ্যালেঞ্জিং। সপ্তাহে একদিন ছিলো এটি প্রকাশনার দিন। আমার মাও নিয়মিত পত্রিকা পড়তেন। তাই আমার বড়োভাই মায়ের জন্যে আমার কাছে পত্রিকাটির একটি কপি দিয়ে দিতেন। তখন ট্রেন আসতে এতো দেরি হতো যে, স্টেশনে ট্রেনের জন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা লাগতো। অপেক্ষার এই সময়গুলোতে বাধ্য হয়েই পত্রিকাটির সাদা কাগজে কালো অক্ষর কোনোটাই আর বাদ থাকতো না। এরপর ট্রেনে করে আসতে আসতে আমার হাত থেকে কতজন পত্রিকা চেয়ে নিয়ে পড়তেন। বাড়িতে যেতে যেতে আসতে পত্রিকাটির দফারফা হয়ে যেতো। এতো জনপ্রিয় ছিলো পত্রিকাটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে এই পত্রিকাটি আজ ৩০ বছরপূর্তি করতে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এইতো সেদিনের কথা। সময় কত দ্রুত গড়ায়, কত কিছু বদলেছে, কত মাধ্যম এসেছে, এতো এতো প্রতিযোগিতা আর প্রতিকূলতার মাঝেও পত্রিকাটি যে টিকে আছে, এটা চাট্টিখানি কথা নয়। অর্জন তো অনেকেই করতে পারে, কিন্তু তা ধরে রাখতে পারে ক’জন?
গত ৩০ বছরে আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর সংবাদ প্রচার করা ছাড়াও সকল বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আমাদের সমাজের নানা সামাজিক আন্দোলন আর সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চাঁদপুর কণ্ঠ যে ভূমিকা রেখেছে তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই ৩০ বছরে চাঁদপুর কণ্ঠ সংবাদে নিত্যনতুন ধারা উপস্থাপনে রেখেছে আধুনিকতা আর রুচিশীলতার প্রয়াস। আমি আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত রেখে পত্রিকাটি টিকে থাকবে আরো অনেক অনেক দিন। আগামী দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে--এটা আমার বিশ্বাস ও শুভ কামনা।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী, ভিসা স্ট্রিম।