শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

স্মৃতির জানালা

রহমান মৃধা
স্মৃতির জানালা

আমার বাবা মরহুম হাজী আব্দুল মজিদ মৃধা, পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন সেই বৃটিশ সময়কালে এবং শেষ করেন বাংলাদেশ স্বাধীন করে। তাঁর এই দীর্ঘ চাকরির জীবনকালীন সময়ে তিনি চাঁদপুরের মানুষকে সরাসরি সেবা দিতে পেরেছেন। সময়টি হবে সম্ভবত প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের শাসন আমল, আমি খুব ছোট, আমার বড় ভাই প্রফেসর ড. মান্নান মৃধা আমার থেকে ৫-৬ বছরের বড়ো হবেন। আমার বাবার একটা বিশেষ কাজ ছিল, সকালে আমাদেরকে ঘুম থেকে তুলে দৌড়াতে পাঠানো, ঝড়-বৃষ্টি বা শীত বলে কথা নেই, সকালে এ কাজ শেষ করে নাস্তা, তারপর পড়তে বসা। ছোটবেলায় বাবার চাকরি যেখানে পরিবারের পুরো ব্যাটেলিয়ান সেখানে।

কোনো এক শীতের সকালে গোপালগঞ্জ শহরের এক রাস্তা দিয়ে শরীরচর্চা করতে করতে বাসায় ফিরতে পথে একটি ছোটখাটো ব্যাগ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখতে পান আমার বড় ভাই। কোনো মানুষজন না দেখতে পেরে শেষে তিনি ব্যাগটা বাসায় নিয়ে আসেন। বাবা তৎক্ষণাৎ জেরা করতে শুরু করলেন ‘কেন ব্যাগ বাসায় নিয়ে এসেছো?’ পরে ব্যাগ খুলে দেখেন পুরো ব্যাগ ভর্তি টাকা। এবার শুরু হলো জিজ্ঞাসাবাদ : কোথায়, কীভাবে, টাকা পেলে ইত্যাদি। সবকিছু জানার পর বাবা টাকার ব্যাগটা থানায় নিয়ে পরে শহরে মাইকিং করে দিলেন। টাকার মালিককে খুঁজে বেরও করলেন। পুরো ঘটনা মনে নেই, তবে টাকার মালিক যখন জেনেছিলেন বড়োভাই টাকাটি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পান, ভদ্রলোক আমাদের বাসায় এসে বড়োভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিলেন। কী দোয়া করেছিলেন তা জানিনে, তবে দোয়া করার সময় ভদ্রলোকের চোখে পানি ঝরছিল, মা পরে বলেছিলেন। এটা একটা বড় ঘটনা চাঁদপুরে আসার আগে। তারপর চাঁদপুরের ইলিশ মাছ, এটা তো বলা বাহুল্য। রূপালি ইলিশ মাছ স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। আমার ইলিশ মাছের প্রতি দুর্বলতা এতো বেশি যে, ছোটবেলার সেই ইলিশ মাছের স্বাদ পেতে বড়ো হয়ে একবার চাঁদপুরে গিয়ে ইলিশ মাছ খেয়েছিলাম। সে বহু বছর আগের কথা। পরে জীবনে বহুবার গোয়ালন্দের ঘাটে বসে ইলিশ মাছ, আলুভাজি খেয়েছি, খাবার তো নয় যেন অমৃত।

আমি নিয়মিত সুইডেন থেকে লিখি। হঠাৎ একজন দূরপরবাসী সাংবাদিক ভাই নক করেছিলেন যেন আমি চাঁদপুর কণ্ঠে আমার লেখা দিই মাঝেমধ্যে। ছোটবেলার স্মৃতি চাঁদপুরের ওপর, তারপর ইলিশ মাছ। এসব হৃদয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসলো, আর সেই থেকে চাঁদপুর কন্ঠ আমার দৃষ্টিতে এক জনপ্রিয় পত্রিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া আমি নিজেই ইদানিং এই পত্রিকার একজন নিয়মত লেখক এবং পাঠক---ভালো না লেগে কি পারে?

জেনেছি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রিন্টিং সংস্করণের তিন দশকপূর্তি হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আর বেঁচে থাকবেন না,। সেজন্যে স্মারক গ্রন্থ হিসেবে একটি বই প্রকাশিত হবে, ইতিহাস তৈরি হবে। নতুন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে চাঁদপুর সম্পর্কে, এটা নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার উদ্যোগ। আমি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে চাঁদপুর কণ্ঠের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি। একই সাথে প্রধান সম্পাদকসহ যারা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সঙ্গে জড়িত ও নিবেদিতপ্রাণ তাদের সুস্থতার সাথে সবার পুণ্যময় দীর্ঘজীবন নিরন্তর কামনা করি। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়