প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
আমার প্রিয় চাঁদপুর কণ্ঠ
চাঁদপুর জেলা শহর হলেও অনেকে এখনো এটিকে মফস্বল বলে থাকে। এ শহরকে ঘিরে নানাজনের নানা মত এখনো বিরাজ করছে। কেউ বলে চাঁদ ফকিরের নামে এই শহরের নামকরণ আবার কারো মতে চাঁদ সওদাগর এখানে বাণিজ্য করতেন বলে তার নামানুসারে চাঁদপুরের নামকরণ নাকি করা হয়েছে। যাহোক সে কথা, কোনো না কোনোভাবে চাঁদপুরের নামকরণ তো করা হয়েছে। এক সময় চাঁদপুর শহর ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আওতাধীন। দেশ বিভাজনের পর চাঁদপুর ছিলো বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত। ১৯৮৪ সালে মহকুমা চাঁদপুর জেলায় রূপান্তরিত হয়। এই জেলার জনগণের সাপ্তাহিক মুখপত্র ছিল সাপ্তাহিক চাঁদপুর কণ্ঠ। সেই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি দৈনিকে রূপান্তরিত হয়ে জেলাবাসীর কাছে দারুণভাবে সমাদৃত। আমি মনে করি চাঁদপুর কণ্ঠের এই পাঠকপ্রিয়তা সম্ভব হয়েছে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাসার এবং প্রধান সম্পাদক শ্রদ্ধেয় কাজী শাহাদাত সাহেবের প্রচেষ্টায় পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত সকলের দৃঢ়তা ও বস্তুনিষ্ঠ সঠিক সংবাদ প্রকাশের কারণে।
পত্রিকা কার্যালয়টি যখন চাঁদপুর শহরের গুয়াখোলা সড়কের মাথায় ছিলো তখন বার্তা সম্পাদক ছিলেন শহীদ পাটোয়ারী, নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন এস.এম. আন্ওয়ারুল করীম, চীফ রিপোর্টার বিএম হান্নান, পাঠকফোরামের বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন শাহাদাৎ হোসেন শান্তসহ এমনিভাবে আরো অনেকে। বার্তা সম্পাদক শহীদ পাটোয়ারী আমাকে চাঁদপুর কণ্ঠে যোগদান করান শহর প্রতিনিধি হিসেবে। আমার দায়িত্ব ছিলো হাসপাতাল এবং থানার সংবাদ সংগ্রহ করা। আমি প্রতিদিন চেষ্টা করতাম দু-চারটি সংবাদ সংগ্রহ করে দেয়ার জন্যে। চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার পূর্বে এ পত্রিকার পাঠক ফোরাম বিভাগে ছড়া, কবিতা ও গল্প লিখতাম। যখন দেখতাম পাঠক ফোরামে আমার লেখা প্রকাশ হয়েছে তখন গর্বে বুক ভরে যেত। তাই তো চাঁদপুর কণ্ঠ আমার প্রিয় পত্রিকা। যখন আমি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেই, তখন থেকে পত্রিকাটি আমার কাছে আরো বেশি প্রিয় হয়ে উঠে।
ক’বছর একটানা চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করেছি। মাঝে পত্রিকা পরিবর্তন করে চলে যাই শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম সম্পাদিত দৈনিক আমার চাঁদপুরে। সেখানেও ৫/৬ বছর কাজ করি। শাহ মাকসুদ ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে পত্রিকাটির প্রকাশনা অনিয়মিত হয়ে যায়। আমি আবার চলে আসি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে অনেকেই চলে গেছেন, আবার অনেকেই এসেছেন। যেমন : চীফ রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন এএইচএম আহসান উল্যাহ। বর্তমানে তিনি বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ কার্যালয় তখন প্রেসক্লাব সংলগ্ন রেড ক্রিসেন্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায়। আমরা আনন্দের সাথে কাজ করছিলাম। সারাদিন চষে বেড়াতাম সংবাদের পেছনে। কেননা সন্ধ্যা হলেই শহীদ পাটোয়ারী ও আহসান উল্লাহ ভাই কী কী নিউজ আছে তার জন্যে ডাকাডাকি করতেন। সন্ধ্যার পূর্বে ছুটে যেতাম চাঁদপুর কণ্ঠে কার্যালয়ে। অফিস সহায়কদের ডেকে বলতাম, নিউজ প্যাড দাও, লিখতে হবে নিউজ। তখন ওরা সেটি দিতো। তার বুকে কলমের আঁচড় দিয়ে সংবাদ লিখে তা ওই দু সিনিয়রকে দিতাম। তারা লাল কালির কলমের আঁচড় দিয়ে বানান ও শব্দচয়ন সংশোধন করে পাঠাতেন কম্পিউটার অপারেটরদের কাছে। কম্পোজ হওয়ার পর একবার নয় একাধিকবার প্রুফ দেখতেন মির্জা জাকির ও কাজী শাহাদাত ভাই। পরদিন সকালে ছুটে যেতাম পত্রিকার স্টলে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকা খুঁজে হাতে তুলে নিয়ে দেখতাম। যখন দেখতাম আমার লেখাটি প্রকাশ হয়েছে তখন গর্বে বুক ভরে যেত। কাজী শাহাদাত, শহীদ পাটোয়ারী, বিএম হান্নান ভাই অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে রাখতেন আমাদেরকে। আমরা তা পালন করার চেষ্টা করতাম। এভাবেই আমি নিউজের অনেক কিছু দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে শিখতে পেরেছি। তাইতো আমার কাছে এ পত্রিকাটি প্রিয় পত্রিকা।
চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছরপূর্তিকালে আমি আজ সেখানে নেই। আর যখন চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করেছি সেই সময়ের অনেকেই আজ চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে নেই। তারা হলেন শহীদ পাটোয়ারী, বিএম হান্নান, আন্ওয়ারুল করীম (সদ্য প্রয়াত), শাহাদাৎ হোসেন শান্ত, ক্ষুদিরাম দাসসহ আরো অনেকে। আজকে আমি আমার এই ক্ষুদ্র লেখার মাধ্যমে শ্রদ্ধাপূর্ণচিত্তে স্মরণ করছি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে। যখন আমি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করেছি, তখন আমার সময়টা কেটেছে আনন্দের সাথে। আমরা পেয়েছিলাম প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের শাসন ও স্নেহ। তিনি যেমনিভাবে শাসন করতেন, তারও বেশি স্নেহ করতেন। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে নিয়ে লিখতে গেলে দিস্তায় দিস্তায় কাগজ লেগে যাবে। আরো কতো কী লেখা যে হৃদয়ে আছে, সেটা ব্যস্ততার কারণে বাদ পড়ে গেছে।
লেখক : কবি, গল্পকার ও সাংবাদিক।