শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০

জীবনে গতি এনেছে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ

মোঃ মোস্তফা কামাল সুজন
জীবনে গতি এনেছে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ

২০০২ সালে আমার পাসপোর্ট করা হয়। মামার কাছে সেটার কপি ও টাকা দিয়েছি। এখন অপেক্ষা কবে ভিসা হবে এবং দুবাই যাবো। এরই মাঝে একদিন আমাদের বাসায় বাবা ও জেঠা কথা বলছেন। তাঁদের কথার মাঝখানে আমাকে দেখে জেঠা বললেন, সারাদিন ঘরে বসে না থেকে কোনো একটা কাজ কর। আমার বাবা তখন চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁদপুরস্থ উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে উচ্চমান হিসাব সহকারী পদে কর্মরত। আমাদের বাসার ভাড়াটিয়া আল-আমিনের পিতার শহরের স্ট্র্যান্ড রোডস্থ নির্মাণ সামগ্রীর দোকানে আমার বাবার কিছু ইনভেস্ট ছিলো বলে আমার ছোট ভাই রাজন সেখানে কাজ করছিলো। ২০০২ সালের একদিন রাজনের কাছে যাওয়ার পথে দেখা ভিডিও গেমস্-এর দোকানদার মিজান ভাইয়ের সাথে। তিনি বললেন, সুজন! বসে না থেকে আমার মদিনা কম্পিউটারে এসে কাজ শিখো। আমি বাসায় গিয়ে কথাটা বলে আমার মা-বাবাকে রাজি করাই। তারা কম্পিউটারে কাজ শেখার জন্যে টাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেখানে কম্পিউটারের কি-বোর্ডের অক্ষর দেখে দেখে টাইপ শুরু করলাম। আর ফাঁকে ফাঁকে কম্পিউটারে গেম খেলতাম। বেশ ক’মাস পর একদিন একজন এসে বললেন, মিজান! সাহিত্য পাতার লেখাগুলো দিয়ে গেলাম, কাজগুলো হয়ে গেলে সিডিতে করে অফিসে পৌঁছে দিবেন। কম্পোজ করার জন্যে লেখার পাতাগুলো হাতে নিয়ে মিজান ভাই বললেন, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের কাজ এগুলো। দেখি তুমি কতোটুকু কাজ শিখেছো, এগুলো টাইপ (কম্পোজ) কর। আমি তখন অনেক সময় ব্যয় করে ৩/৪টি কবিতা কম্পোজ করেছি। যদিও সেই কম্পোজে অনেক ভুল ছিলো। এটাই আমার দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে প্রথম পরিচয়।

এরপর ২০০৮ সালে বাবা স্ট্রোক করার পর এলাকার মিঠু ভাই (শাহ্ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম)-এর ‘আমার চাঁদপুর’ অফিসে কোনো রকম টাইপ শিখে কাজ শুরু করলাম। ‘আমার চাঁদপুরে’র ফটোগ্রাফার আলমগীর ভাই শাহ্ মাকসুদুল আলমকে বললেন, ভাই! আমি চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করবো। উত্তরে তিনি বললেন, কাজ করো, তবে আমাদেরকে ছবি ও নিউজ দিও। আমি বুঝতে পারলাম ‘আমার চাঁদপুর’ পত্রিকার সঙ্কটাপন্ন সময় চলছে। মনে মনে ভাবলাম, আমিও যদি চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকার কম্পিউটার সেকশনে কাজ করতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো। এরপর ২০১০ সালে দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ ও ২০১৩ সালে ইল্শেপাড় পত্রিকায় পার্টটাইম কাজ করি। এরই মাঝে একদিন দৈনিক চাঁদপুর দর্পণের সম্পাদক ও প্রকাশক ইকরাম চৌধুরী আমাকে একদিন রাতে চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসে পাঠালেন সেখানকার একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেনড্রাইভে করে নিয়ে আসতে। সেটা নিয়ে আসার সময় একজন বললেন, চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসেও এই তথ্যগুলো গিয়ে দিয়ে আসতে হবে। রাত প্রায় ১২/১টা, রেড ক্রিসেন্ট ভবনের তৃতীয় তলার বারান্দায় গিয়ে দেখি, রোটাঃ কাজী শাহাদাত স্যার পেস্টিং টেবিলে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এটাই আমার জীবনে প্রথম চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে যাওয়া।

২০১৬ সালে বিশেষ কিছু কারণে ইল্শেপাড় পত্রিকায় কাজ বন্ধ করে একটা প্রাইভেট ফিজিওথেরাপি সেন্টারের মালিকের সাথে ভালো সম্পর্কের কারণে সেখানে বিকেল থেকে কাজ শুরু করলাম। যদিও দিনে টেলিটক কোম্পানিতে কাজ করতাম। এরই মাঝে একদিন ইল্শেপাড় পত্রিকায় আমি যেই ফিজিওথেরাপি সেন্টারে কাজ করতাম সেই সেন্টারের বিরুদ্ধে কিছু অসত্য তথ্য সম্বলিত নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং সংবাদদাতা হিসেবে আমার নামটি সেখানে ছাপা হয়। ফিজিওথেরাপি সেন্টারে আমার আর কাজ করা হলো না। এরই মাঝে আমি ভাবলাম, যদি আর কখনো পত্রিকা অফিসে কাজ করতে হয় তাহলে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকায় কাজ করবো। কিছুদিন পর আমার ছোট ভাই বিল্লালের সহপাঠী জীবনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। সে আমাকে অপেক্ষার কথা বললো। বেশ কয়েক মাস পর জীবন আমাকে তার চাকুরি থেকে অব্যাহতি এবং চাঁদপুর কণ্ঠে তার পরিবর্তে আমাকে কাজ করার জন্যে বললো। আমি কোনো কিছু চিন্তা না করেই এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।

২০১৬ সালের শেষ দিকে এক সন্ধ্যায় চাঁদপুর রেড ক্রিসেন্ট ভবনস্থ চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসের দ্বিতীয় তলায় গেলাম। ম্যানেজার সেলিম রেজা ভাইয়ের সাথে কথা বলে তার রুম থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম অনেক সাংবাদিক সেখানে। এরই মাঝে আমার পূর্ব পরিচিত মিজান ভাইকে দেখলাম। তিনি দেখেই বললেন, কিরে চাকরি করবি? এখানে তো তুই টিকবি না। আর যদি টিকে যাস্ তাহলে তোর জীবনে গতি ফিরে আসবে। তার সেই কথার অর্থ তাৎক্ষণিক বুঝতে পারিনি।

চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ শুরুর পর বুঝেছি চাঁদপুরের অন্যান্য পত্রিকাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে খুব বেশি কাজে লাগবে না। এখানে কাজের পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন ছিলো আমার জন্যে। এখানকার চেইন অব কমান্ড অনেক দৃঢ়। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে আমার স্যার রোটাঃ কাজী শাহাদাত অনেক জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ। তিনি সবদিকে নজর রাখেন। সত্যিকার অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। একই সাথে কঠোর ও কোমলতা মিশ্রিত ব্যক্তিত্ববান একজন মানুষ তিনি। আমার ব্যক্তিগত মতে তিনি একজন অনেক বড়ো মাপের নেতা। যিনি একটা পত্রিকা অফিসের সংবাদদাতা, বিজ্ঞাপনদাতা, অফিসের কর্মচারী, শুভাকাঙ্ক্ষী সবার দিকে একই সাথে সমান নজর রাখেন। অফিসের সবার কর্মকাণ্ডের ছোট ছোট বিষয়গুলোও তার নজর এড়ায় না। সময়ের কাজ সময়ের আগেই তিনি যথাসম্ভব গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। কাজের মাঝে যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি তাৎক্ষণিক কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করে কাজটা দ্রুত শেষ করেন। কখনও তিনি কারো অপেক্ষায় কোনো কাজ রেখে দেন না। নিজেই সব কাজ তদারকি করেন। চাঁদপুর কণ্ঠে আসার পর অনেক কিছুই শিখেছি। এখানে অনেকের সাথেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে। একের জনের কাছে এক একটা ব্যাপার শিখেছি। এর মধ্যে জীবনে কাজে লাগার মতো যে জিনিসটি শিখেছি সেটা হলো কাজ শুরু করার পূর্বেই কাজটা যতোটুকু সম্ভব গুছিয়ে রাখা। এতে সহজেই সেটা হয়ে যায়। কাজটা করতে গিয়ে সঙ্কটময় মুহূর্ত আসলে গোছানো কাজ বেশি দেরি হয় না। মিজান ভাইয়ের কথা মতো জীবন থেকে আলসেমি দূর হয়েছে, জীবনে গতি ফিরে এসেছে।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে যাঁদের সাথে কাজ করেছি সবার কথা আলাদা করে লিখতে গেলে অনেক বড়ো একটা লেখা হয়ে যাবে। তাই সহকর্মী, বড়ো ও ছোট সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

লেখক : কম্পিউটার অপারেটর, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়