শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছরপূর্তি জেলাবাসীর জন্যে গর্বের

আব্দুল্লাহ আল মামুন
চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছরপূর্তি জেলাবাসীর জন্যে গর্বের

আমি তখন সবেমাত্র এইচএসসি পাস করে চাঁদপুর সরকারি কলেজে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। পত্রিকায় কাজ করার ব্যাপারে আমার একটি সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা লুক্কায়িত ছিলো। সে কারণে আমি চেষ্টা করছিলাম কীভাবে একটি পত্রিকার সাথে নিজেকে যুক্ত করে এই আঙ্গিকে নিজের মেধা ও মননকে সমৃদ্ধ করা যায়। তারই অংশ হিসেবে আমি চাঁদপুরের একটি স্থানীয় পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাই। কিন্তু মনে মনে একটি ইচ্ছা ছিলো, যদি আমি কোনোভাবে চাঁদপুরের বহুল প্রচারিত এবং স্বনামধন্য দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার সুযোগ পাই, তাহলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো। ইতোমধ্যে মহান আল্লাহ আমার এই দোয়া কবুল করে নেন এবং তারই অংশ হিসেবে আমি ২০০০ সালের প্রথম দিকে একদিন গুয়াখোলা রোডস্থ দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে সন্ধ্যা নাগাদ যাই। ওই সময় চাঁদপুর কণ্ঠে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন শহীদ পাটোয়ারী। তিনি ওপরে ওপরে একটু রাগী স্বভাবের হলেও ভেতরে মানুষটা বেশ ভালো মনের বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়। তিনি আমার কাছে জানতে চান আমি কোনো কাজে এসেছি কিনা? আমি তাকে জানাই, আমি চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার জন্যে সুযোগ চাই। যেহেতু আমি ইতোমধ্যেই একটি স্থানীয় পত্রিকাতে কাজ করতাম, সে কারণে তিনি আমাকে টুকটাক চিনতেন। তিনি আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কাকে যেন ইন্টারকমে ফোন করলেন এবং বললেন ‘বস্ আপনার কাছে মামুন এসেছে, আপনার সাথে দেখা করতে চায়’। তার সম্মতি নিয়ে আমি প্রধান সম্পাদক প্রথিতযশা সাংবাদিক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের রুমে গেলাম। তিনি আমাকে বসতে বললেন এবং চা খাওয়ার অফার দিলেন। আমি যখন তার সাথে কথা বলছিলাম, তখন আমার মনে হচ্ছিলো এই মানুষটা খুবই জ্ঞানী এবং সহজ-সরল মানুষ, কিন্তু তিনি তাঁর ওপরের দিকে একটি আবরণ তৈরি করে রেখেছেন। যাতে করে বাইরের সকলেই তাঁকে বেশ ভয় পায় এবং সমীহ করে চলে। আমি তাঁর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি চাঁদপুর কণ্ঠের তৎকালীন ব্যবস্থাপক সাংবাদিক গিয়াসউদ্দিন মিলন ভাইকে তাঁর রুমে ডেকে পাঠালেন এবং আমি চাঁদপুর কণ্ঠে কীভাবে কাজ করতে পারি সে বিষয়ে তিনি তাকে দিকনির্দেশনা দিলেন। ওইদিন থেকেই চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলো।

আমি দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করেছি এবং চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে চাঁদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় যাওয়ার, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে কথা বলার এবং সংবাদ সংগ্রহ করার সুযোগ হয়েছে। আমি প্রত্যেকটি উপজেলায় চাঁদপুর কণ্ঠের যে প্রতিনিধিরা কাজ করতেন, বিশেষ করে আমাদের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক কামাল ভাই, সাংবাদিক টুটুল ভাই, শাহরাস্তি উপজেলার সাংবাদিক হৃদয়, কাজল ভাই, ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক প্রবীর চক্রবর্তী দাদা ও মানিক পাঠান ভাই, হাইমচর উপজেলার সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম শফিক ভাই, মতলব উত্তরের সাংবাদিক লাভলু ভাই, মতলব দক্ষিণের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার ভাইসহ সকলের বিশেষ স্নেহ ও সহযোগিতা পেয়েছি।

চাঁদপুর কণ্ঠে আমার কর্মজীবনের একটি বিশেষ সময় আসে ২০০১ সালে। চাঁদপুরের প্রতিনিধি হিসেবে পিআইবির আয়োজনে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মা ও শিশুর ওপরে সাতদিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগদান করার সুযোগ পেয়ে যাই। বিশেষ করে প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের কারণে আমার এই সরকারি ট্রেনিংয়ের সুযোগ হয়। ওই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আমি সাংবাদিকতার অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারি এবং মা ও শিশুদের ক্ষেত্রে কীভাবে একজন সংবাদকর্মী বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকায় উপস্থাপন করবেন সে বিষয়ে সম্যক ধারণা পাই। এই ট্রেনিংটি আমার জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে এবং আমি এরপর থেকে যতোগুলো রিপোর্ট চাঁদপুর কণ্ঠে করেছি, প্রত্যেকটি রিপোর্টের ক্ষেত্রে আমি সতর্কতা অবলম্বন করেছি। ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান আমি প্রত্যেকটি রিপোর্টে প্রয়োগ করেছি। ওই ট্রেনিংয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার অধিকাংশ স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকার উদীয়মান সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে পরিচিতি লাভ করার সুযোগ পাই।

আমি ২০০১ সালে চাঁদপুর কণ্ঠের সার্কুলেশন বিভাগের ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করি। আমার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কাজী শাহাদাত ভাইয়ের ইচ্ছার কারণে চাঁদপুর কণ্ঠের তৎকালীন ম্যানেজার গিয়াসউদ্দিন মিলন ভাই আমাকে তার অধীনে এই দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই আমি চাঁদপুর কণ্ঠের সার্কুলেশন অনেক বেশি বৃদ্ধি করার সুযোগ পাই। চাঁদপুর জেলার পত্রিকা এজেন্ট ও পত্রিকা যারা বিক্রি করেন তাদের সকলের সাথে পরিচিত হওয়ার একটি দুর্লভ সুযোগ পেয়ে যাই। সেক্ষেত্রে ক’জনের নাম না বললেই নয়। চাঁদপুর জেলার পত্রিকা এজেন্টের মধ্যে তৎকালীন নুরনবী পাটোয়ারী ভাই অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তিনি চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন এবং খুবই পরিপাটি, রুচিশীল, পোশাক সচেতন ও কর্মীবান্ধব ছিলেন। মহামায়া বাজারের বাবুল ভাই চাঁদপুর কণ্ঠ রাখতেন। আমি বোগদাদ বাসের মাধ্যমে পত্রিকা যাতে তিনি দ্রুত সকালে পেয়ে যান তার ব্যবস্থা করি। এতে তিনি খুবই খুশি হন এবং আমাকে একটি বিশেষ শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতেন।

যেহেতু আমি চাঁদপুর কণ্ঠের সার্কুলেশন ম্যানেজার ছিলাম এবং চাঁদপুরের অনেক ঐতিহ্যবাহী এলাকা বাবুরহাটে আমার বাড়ি, সে কারণে ওই অঞ্চলেও চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যাপক সার্কুলেশন ছিলো। প্রতিটি দোকানে, প্রতিটি বাড়িতে চাঁদপুর কণ্ঠ রাখা হতো এবং চাঁদপুর কণ্ঠে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হলে সকলেই আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেন, আমাকে বিশেষ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। আমি বাবুরহাটের বহু দোকান থেকে বিভিন্ন উৎসবের সময় বিজ্ঞাপন পেতাম এবং অনেক দোকান মালিক, রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সুধীজন চাঁদপুর কণ্ঠে আমার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের মনের কথা এলাকার মানুষকে জানাতেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। এ সময় পুরো চাঁদপুর জেলায় আমি একটি ছোটখাট পরিচিতি পেয়ে যাই এবং নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতে থাকি। চাঁদপুর কণ্ঠের কারণে আমি বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষসহ সকলের সাথে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ পেয়ে যাই। প্রতিদিন বিকেলে চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে যেতাম এবং কোনো কোনো সময় রাত দশটায় নিজ বাড়িতে কাজ শেষ করে পৌঁছতাম। বিশেষ করে সন্ধ্যাকালীন প্রচুর সংবাদ আসতো বলে ব্যস্ত থাকতাম। আমি, বিএম হান্নান ভাই, শহীদ পাটোয়ারী ভাই, সেলিম ভাই, গিয়াসউদ্দিন মিলন ভাই, আন্ওয়ারুল করীম ভাই এবং চাঁদপুর কণ্ঠে আমাদের অভিভাবক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের সাথে কাজ করে প্রশান্তি লাভ করি।

চাঁদপুর শহরের সকল স্তরের মানুষজন চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে আসতেন। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, চাঁদপুর জেলার স্বনামধন্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার ভাই যখন অফিসে আসতেন, ওই সময় বিভিন্ন স্তরের লোকজনে অফিস ভরে যেতো। আমরা সকলের সাথে মিশে কাজ করার একটি অপূর্ব সুযোগ ওই সময় পেয়ে যাই। জেলার সচেতন সকলেই চাঁদপুর কণ্ঠকে তাদের নিজেদের পত্রিকা হিসেবে মনে করে সকল সমস্যা জানানো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এই সমস্যা তুলে ধরার একটি মাধ্যম হিসেবে পেয়ে যান। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত যে পাঁচ বছর সময় আমি চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করেছি, ওই সময় আমার পড়াশোনার বিষয়ে সবসময় চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের সকলেই আমাকে উৎসাহ দিতেন। আমার কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সকল ছাত্র-ছাত্রী ও সম্মানিত শিক্ষকরা বিশেষ করে বিভাগীয় প্রধান মাসুদা জাহান ম্যাডাম আমাকে চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার কারণে বিশেষ স্নেহ করতেন। যে বিষয়টি আমাকে খুবই সম্মানিত করেছে তা হলো, চাঁদপুর সরকারি কলেজের ওই সময়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর বজলুল হক স্যার আমাকে কলেজের সকল প্রোগ্রামে দাওয়াত করতেন এবং আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। আমি প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম বলে আমাকে প্রচুর ব্যবহারিক ক্লাস করতে হতো। আমি শুধুমাত্র চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার কারণে কিছু বিশেষ ছাড়ও পেতাম। আমার পরিবার বিশেষ করে পুলিশে চাকরিরত আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার কারণে আমাকে একটু বিশেষ স্নেহ করতেন এবং তাঁর সহকর্মীদের সাথে আমার বিষয়ে গর্বভরে কথা বলতেন।

২০০৬ সালের মে মাসের ৩০ তারিখে আমি চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে চলে এসে চাকরি জীবনে পদার্পণ করি এবং আজ প্রায় ১৯ বছর আমি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করছি। আমি মনে করি আমার এই চাকরি জীবনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে চাঁদপুর কণ্ঠের ওই ছয় বছর, যখন আমি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার মানসপটে সবসময় চাঁদপুর কণ্ঠ মিশে আছে। আজও আমার এলাকার লোকজন আমাকে শুধুমাত্র পত্রিকায় কাজ করার কারণে সবচেয়ে বেশি চিনে থাকে এবং আমি নিজেকে চাঁদপুর কণ্ঠের একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি মন থেকে দোয়া করি, মহান আল্লাহতা’লা চাঁদপুর কণ্ঠকে শতায়ু দান করুক এবং চাঁদপুরবাসীর সকল বিষয় আরো ভালোভাবে তুলে ধরুক।

লেখক : সাবেক সার্কুলেশন ম্যানেজার ও স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। বর্তমানে সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিক্রয় ব্যবস্থাপক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়