শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

দেবী দুর্গা
রমেশ চন্দ্র সাহা (দুলাল)

পৃথিবী নামক দুর্গকে যিনি রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা। হিন্দু দর্শনে সাধনার যে ৩ টি দিক আছে তা হলো শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব। দুর্গা পূজা শক্তি সাধনার অন্তর্গত। তাই দুর্গা পূজাকে শক্তি সাধনার পূজাও বলা হয়ে থাকে।

দেবী দুর্গা যেহেতু মায়া দ্বারা সমস্ত জগৎকে আকৃষ্ট করে রাখেন, তাই ভক্তকুল দেবীকে মহামায়া রুপেও কল্পনা করে থাকেন। সত্য যুগে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈষ্য দেবীকে মহামায়া রুপেই পূজা করেছিলেন। ত্রেতা যুগে রাম চন্দ্র দেবীকে শক্তির উৎস রুপেই পূজা করেছিলেন। দ্বাপর যুগে আয়ন ঘোষ দেবীকে কাত্যায়নী রুপেই পূজা করেন। জটিলা, কুটিলাকে তিনি কাত্যায়িনি রুপেই দর্শন দিয়েছিলেন।

ষোড়শ শতাব্দীতে তাহেরপুরের জমিদার কংস নারায়ন তাহার রাজ পুরোহিত রমেশ চক্রবর্তীকে এমন এক পূজার নির্ঘন্ট তৈয়ার করার কথা বলেন, যে পূজা করলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়। তখন রাজ পুরোহিত দুর্গা পূজা করার জন্য রাজাকে পরামর্শ প্রদান করেন।

পুরোহিতের পরামর্শক্রমে দেবী দুর্গার পাশে কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে এক কাঠামোতে রেখে পূজার আয়োজন করা হয় এবং উদ্ভিদ জগৎ, প্রানী জগৎ ও শুভ শক্তিকেও পৃথিবীর কল্যানে আহ্বান জানানো হয়। দেবী দুর্গার দু-পাশে আমরা যে নব পত্রিকাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গনেশকে দেখতে পাই তাদের শক্তি সামর্থ্য অনেক। নবপত্রিকা, ধানগাছ, মানগাছ, হলুদগাছ, জয়ন্তীকা, অপরাজিতা, বেল, ইক্ষু, দুর্বাসহ সকলের পূজা করা হয়।

লক্ষ্মী ধনসম্পদের দেবী। তাহার বাহন পেঁচা, পেচাঁ ফসল বিনষ্টকারী পোকা, মাকড় খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে থাকেন। কিন্তু তার একটি বদণ্ড অভ্যাষ আছে। অন্য প্রানীকে সে ভেংচি কাটে। লক্ষ্মী দেবী ধনসম্পদের অধিষ্ঠাত্রী হওয়ায় অনেকেই সম্পদ প্রাপ্তিতে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন।

দেবী সরস্বতী জ্ঞান, বিজ্ঞানের দেবী। তাহার বাহন রাজ হংস। যাহারা দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পুষ্ট তাহাদের চাল - চলন, কথা - বার্তা, আচার - আচরন অত্যন্ত মাধুর্যতাপূর্ণ হয়। দেবীর বাহন হংস সকল সময় ভালো মন্দ বুঝতে পারেন। যেমন তাকে দুধে জলে মিশিয়ে দিলে সে জলটুকু রেখে দুধটুকু গ্রহন করে থাকেন। তেমনি গুনী ও জ্ঞানী লোকেরা মন্দ কাজ পরিহার করে ভালো কাজ করে থাকেন।

কার্তিক দেব সেনাপতি। তার বাহন ময়ূর। পাখি জগতের মধ্যে ময়ুর সর্বাধিক সৌন্দর্যের অধিকারী। ময়ুর কীট, পতঙ্গ, সর্প ভক্ষন করে থাকেন। তাই যাহারা বীর, তাহারা দুর্বলের উপর আঘাত করেন না। দুর্বলকে আঘাত করাই বীরের ধর্ম।

গনেশ সিদ্ধিদাতা। সমাজের উচুঁ, নীচু, সকলকে তিনি সু - সংগঠিত করে থাকেন। যার কর্ম মাঝে প্রকাশ পায় জাতীয় সংহতি। যে যেভাবে তাকে আরাধনা করে থাকেন, সিদ্ধিদাতা গনেশ তাহার সেই আরাধনা পূর্ণ করেন। তাহার বাহন মুষিক। মুষিক একটি ক্ষুদ্র প্রানী। পর্বতের কঠিন শিলায় সে শিবির গড়ে তোলে। মুষিকের কঠিন শক্ত দাঁতের কাছে শিলাও পরাস্ত হয় । কঠোর শ্রম, অটুট ধৈর্য্য আর অক্লান্ত পরিশ্রম তার মাঝে বিদ্যমান।

দেবী দুর্গা পূজা জাতি গঠনের প্রেরনা যোগায় বলে আমরা মনে করি। বৈদিক সুক্তে দেবী নিজেই বলেছেন অহং রাস্ট্রী, অর্থাৎ আমি এই বিশ্ব রাজ্যের অধিশ্বরী। দেবী প্রতিমায় আমরা যে পূজা করে থাকি তার দিকে দৃষ্টি দিলে প্রতিয়মান হয় যে, রাস্ট্র পরিচালনায় একটি নিখুঁত দিক এতে অন্তনির্হিত রয়েছে।

প্রত্যেক রাস্ট্রে বুদ্ধিজীবি, বীর্যজীবি, বৃত্তিজীবী ও শ্রমজীবিসহ ৪ শ্রেনীর মানুষের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। যাদেরকে নিয়ে রাস্ট্র অপ্রতিহত গতিতে তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সমর্থ হয়। কল্যানকর কাজের অগ্রগতি সাধন, সমাজের অসংগতি দুরীকরনসহ অশুভ শক্তিকে তিনি বিনাশ করে থাকেন বলেই তিনি দশভুজা দেবী দুর্গা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়