শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

মহিষাসুরের ইতিকথা
পণ্ডিত কালীপদ চক্রবর্তী

সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে অশুভ শক্তির প্রচণ্ড অধিকারী মহিষাসুরের জন্মদাতা পিতা ছিলেন স্বয়ং অগ্নি দেবের একজন পরম ভক্ত। এই কারণে সকল সময়ই মহিষাসুর অগ্নিদেবের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ লাভ করায় সে দিনে, দিনে হিংস্র হয়ে উঠেছিল। তার অত্যাচারে শুধু দেবকুলই চিন্তিত ছিল না স্বর্গ, মর্ত্যে, পাতাল ত্রিভুবনই ছিল তার ভয়ে তটস্থ। তা ছাড়াও মহিষাসুর এত ভীষণ অত্যাচারী ও শক্তিশালী হয়ে উঠার পেছনে আরো একটি বিশেষ কারণ ছিল। সেই বিশেষ কারণটি হলো মহিষাসুরের জন্ম তার পিতার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী অগ্নিদেবের শক্তিতে হয়েছিল। এজন্যই সে এত শক্তিশালী হতে পেরেছে। প্রকৃত পক্ষে মহিষাসুর এত ভয়ঙ্ককর ও অত্যাচারী ছিল যে, তার কারণে অসুর বংশের সকল নারী গানও ছিল আতঙ্কিত। অনেকে নিজের প্রাণের ভয়ে মহিষাসুরের সেবা করার জন্য তার কাছে যেতে সাহস পেতেন না। মহিষাসুরের রাজত্ব কালে নারী জাতির কোন আধিপত্যই ছিল না। তারা ছিল ভীষণ অসহায় ও ভীতসন্ত্রস্ত এবং একেবারেই অবলা। মায়ের জাতির প্রতি মহিষাসুরের এত অন্যায় আর এত অবিচারে স্বর্গস্থ সকল দেবতাদের পর্যন্ত ব্যথিত করেছিল। সে জন্যই মহিষাসুরের রাজত্ব চলাকালে নারীর দূর্বলতাই প্রকট রূপধারণ করে। অত্যাচারী মহিষাসুর দাম্বিকতার সাথে নারী কুলকে অবজ্ঞা করে বলেছিলেন , এই পৃথিবীতে নারী শুধুই কেবলমাত্র পুরুষের ভোগবিলাস আর সেবিকার কাজ করার জন্য। যদি তা না হতো, তা হলে কিন্তু আমি সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমগ্র সৃষ্টি থেকেই নারী শব্দটি চিরতরে মুছে ফেলতাম। তার এধরনের বক্তব্যই প্রমাণ করে সে কত হিংস্র ও জানোয়ার স্বভাবের ছিলেন। মাতৃ জাতির প্রতি কতবড় অপমানজনক উক্তি করেছিলেন এই পাষ- মহিষাসুর!

মহিষাসুরের মূল লক্ষ্য ছিলো স্বর্গ, মর্ত্যে পাতাল ত্রিলোকের অধিষ্ঠাত্রী হওয়া, আর ত্রিলোক জয় করা। তাই সে নিজের ইচ্ছে পূরণের লক্ষ্যে স্বীয় শক্তি বৃদ্ধি করার নিমিত্তে বহুকাল যাবৎ সে প্রজাপতি ব্রহ্মা দেবের কঠিন তপস্যায় নিমগ্ন ছিলেন। অবশেষে তার তপস্যায় মুগ্ধ হলেন প্রজাপতি ব্রহ্মদেব। অতঃপর ব্রহ্মদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাকে সাধনোচিত বর প্রার্থনা করতে বললেন। আর তাতেই মহাবিপদ উপস্থিত হলো! এমন সুযোগ পাওয়ায় অত্যাচারী মহিষাসুর প্রজাপতি ব্রহ্মদেবের কাছে শেষ পর্যন্ত একেবারে অমরত্ব বর চেয়ে বসলেন! তখন একান্ত নিরূপায় হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মদেব পাষ- অত্যাচারী বললেন- ‘হে মহিষাসুর! অমর হলে তো তোমার জন্মই হতো না। তা ছাড়া েেদবতা ভিন্ন অন্য কেউই অমরত্ব বর পেতে পারে না। অতএব তুমি আমার নিকট অন্য কোন বর প্রার্থণা কর। তখন মহিষাসুর প্রজাপতি ব্রহ্মার নিকট আবার বর চাইলেন-‘প্রভু তাহলে আমাকে এই বরদিন ‘আজ থেকে এই ত্রিভূবনের কোন দেবতা, দৈত্য , দানব, মানব ও অসুর এমন কি কোন পুরুষ লোকের দ্বারা যেন আমার কোনো দিনই মৃত্যু না হয়! আপনি এখন আমাকে এই বরই দিন। এবার তার ইচ্ছা পূরণ করার নিমিত্তে প্রজাপতি ব্রহ্মদেব বললেন ‘তথাস্তু’। আসলে মহিষাসুর তখন তার হীন বুদ্ধির বলেই ভাবলেন আমি তো আসলে এখন শেষ পর্যন্ত একেবারে অমরত্ব বরই পেয়ে গেলাম। যার ফলে সে সানন্দে প্রসন্ন হয়ে গেলো। কারণ মহিষাসুরের অন্ধ ধারণা ছিল দুর্বল নারীদের হাতে তার মৃত্যু হতে পারে না। তাই বর চাওয়ার সময় নারী শব্দটি তিনি এড়িয়ে গেছেন দাম্ভিকতার সাথে। তার ধারণা ছিল নারী অবলা, নারী শুধুই অবজ্ঞার পাত্র। তাছাড়া এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে অবলা নারীগণ েেকান দিন তার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পাবেন না। আর নারীর কিবা ক্ষমতা আছে তার সাথে যুদ্ধ করার। তাই সে প্রজাপতি ব্রহ্মদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে মূর্খ মহিষাসুর নিজে নিজে আরো বেশি অত্যাচারি হয়ে উঠলেন। এদিকে ত্রিলোক জয় করেই মহিষাসুর শেষ পর্যন্ত স্বর্গস্থ সকল দেবতা গণের উপরেই ভয়ঙ্কর অত্যাচার শুরু করে দিলেন। এমন কি দেবতা গণকেই স্বর্গলোক থেকে বিতাড়িত করে মহিষাসুর সম্পূর্ণ স্বর্গ রাজ্য দখল করে নিলেন। স্বর্গ দখল শেষে অত্যাচারি মহিষাসুরের কারণে গোটা রাজ্য জুড়েই দেবপূজা, যাগ, যজ্ঞ, ঘন্টা ধ্বণি ও শঙ্খ ধ্বণি একেবারে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল!

এ দিকে স্বর্গ হারা সকল দেবতাগণ মহিষাসুরের দখল থেকে তাঁদের হৃত রাজ্য পুনরায় উদ্ধার করার নিমিত্তে পর্যায় ক্রমে ভগবান প্রজাপতি ব্রহ্মা দেব পরমেশ্বর ভগবান মহাবিষ্ণু ও ভগবান শিবের নিকট গেলেন। অবশেষে ত্রিদেবের কথামত দেবগণ সকলে মা মহামায়ার স্তব স্তুতি পাঠ করতে লাগলেন। দেবতা গণের স্তব স্তুতিতে সন্তুষ্ট হয়ে মহামায়া কিন্তু তাদের সম্মুখে এসে হাজীর হলেন ও সকল দেবতাগণের থেকে তাদের করুন ইতিহাস শ্রবণ করলেন। অতঃপর মহাদেবী এই অত্যাচারী মহিষাসুর সমেত তার সকল অসুর সৈন্য দেরকে বধ করে, দেবতা গণের হৃত রাজ্য পূনরায় উদ্ধার করে দেয়ার সংকল্প করলেন এবং মহিষাসুরকে বধ করে দেবতাদের হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দেন এবং পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়