প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২২, ০০:০০
ক্রিকেট দীর্ঘ সময়ের খেলা হলেও ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলাও বটে। ভদ্রলোকের খেলা বলেই এখানে দলীয় ও মাঠের শৃঙ্খলাটাই মুখ্য। যারা এই শৃঙ্খলাকে বুড়ো আঙুল দেখান সেলিব্রিটি হওয়ার গরমে, তারাই উল্কাপি-ের মতো নিভে যেতে হয় মধ্য আকাশে। ক্রিকেট মানে নাম-যশ ও খ্যাতির হাতছানির পাশাপাশি অর্থের অবৈধ পিছুটান। ক্রিকেটাররা প্রচুর অর্থ পাওয়া সত্ত্বেও বাজিকরদের টোপ গিলে ফেলেন তাড়াতাড়ি। এই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্যে বুকড্ হয়ে তারা জলাঞ্জলি দেন নিজের সুনাম ও দেশের সম্মান। মাঠে ও মাঠের বাইরে আচরণের তারতম্যে খেলোয়াড়দের তৈরি হয় আমলনামা। এই তারতম্যের চাপ অনুভব করে খেলার মাঠ। লাল বল ও সাদা বলের ক্রিকেটে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়েরা এ প্লাস গ্রেড হলে মাসে চার লাখ টাকা বেতন পান। এ গ্রেডের খেলোয়াড়েরা পান তিন লাখ আর বি গ্রেডের খেলোয়াড়েরা পান দুই লাখ। সি গ্রেডের খেলোয়াড়েরা পান দেড়লাখ আর ডি গ্রেডের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়েরা বেতন পান মাসে এক লাখ টাকা করে। এতো কিছুর পরও আমাদের বাঘেরা মাঠে কখনো পারফর্মেন্সের বারোটা বাজায় আবার কখনো গর্জে ওঠে। তাদের নৈপুণ্যে নেই ধারাবাহিকতা, নেই আস্থা।
টেস্ট ক্রিকেটের র্যাংকিংয়ে টাইগারেরা সাত নম্বরে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে নয় নম্বরে এবং ওডিআইতেও একই। অথচ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যুদ্ধবিগ্রহগ্রস্ত আফগানিস্তান তাদের আগে রেটিংধারী হয়ে বসে আছে। শৃঙ্খলার ঘাটতি আছে বলেই সাকিব-তামিম-মুশফিকেরা একের পর এক কুকা- ঘটিয়ে ফেলে। লিটন দাসকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক রেষারেষি হলেও বরং আজ লিটন দাসই আস্থার প্রতীক। আসলে আমরাই জানি না, ক্রিকেটারদের কাছে আমরা কী চাই। লিটন দাসের নৈপুণ্যের কারণেই সবাইকে টপকে গিয়ে বাংলাদেশ আজ আইসিসি কাপে রেটিংয়ে শীর্ষে আছে। দলকে আগাতে হলে চাই গভীর দেশপ্রেম। আত্মপ্রেমে মগ্ন খেলোয়াড়েরা দেশের জন্যে খেলে না, খেলে নিজের জন্যে। ফলে মাঠে একটা দলকে পাওয়া যায় না, দল হয়ে যায় বিভক্ত।
আইসিসি কাপ ক্রিকেটে আজ অব্দি বাংলাদেশ চৌদ্দটা খেলায় দশটাতে জিতেছে এবং চারটাতে হেরেছে। বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকায় সাময়িক শীর্ষে থাকলেও যে কোনো সময় সে স্থান হারাতে পারে। নিজেদের শীর্ষস্থান ধরে রাখতে হলে তাদের তারকাখ্যাতিকে বাদ দিয়ে দলের স্বার্থ দেখা জরুরি। খেলার আগে নাঈম শেখকে নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হলো তাতে নির্বাচক থেকে শুরু করে বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ভূমিকা জলকে ঘোলা করে তুলেছে। অথচ দলীয় স্পিরিট বজায় রাখতে এ ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে চলা উচিত। কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানে টাইগারদের অনুশীলনে স্পিনকোচ ও ব্যাটিং কোচ যোগ দেয়ায় অনুশীলনের গভীরতা বেড়েছে। কিন্তু সেই মোতাবেক দলের পারফর্মেন্স উন্নতি পায়নি। এর মূল কারণ আন্তরিকতার প্রগাঢ় ঘাটতি।
খেলায় উন্নতি ঘটাতে হলে খেলাকে মাঠে রাখা চাই। টেবিলে গলা ফাটালে খেলা কমে যায়।