প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২২
হাজীগঞ্জের বেশির ভাগ মাদরাসায় খেলার মাঠ নেই
খেলাধুলা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা

খেলাধুলাতে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক পিছিয়ে। তার মধ্যে বেশির ভাগ মাদরাসায় নেই খেলার মাঠ। যাদের মাঠ আছে নামেমাত্র তারা ছোট পরিসরে খেলাধুলার আয়োজন করে। উপজেলার ২৩টি মাদরাসার মধ্যে দু-একটি বাদে কোনো মাদরাসার পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠ নেই। জমির দাম নাগালের বাইরে, আর একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে ফেলার কারণে মাদরাসাকেন্দ্রিক নতুন করে কোনো মাঠ তৈরি হবার সম্ভাবনা নেই বলে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। উপজেলা ঘুরে চাঁদপুর কণ্ঠের সরেজমিন প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে ও মাদরাসাগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলাতে মোট এমপিওভুক্ত মাদরাসার সংখ্যা ২৩টি। এর মধ্যে কামিল (মাস্টার্স), ফাজিল (ডিগ্রি), আলিম (এইচএসসি) ও দাখিল (এসএসসি) মাদরাসা রয়েছে। মাদরাগুলোর মধ্যে যেগুলোতে মাঠ একেবারে ছোট তারা আউটডোরের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করে ক্ষুদ্র পরিসরে। যেমন বিস্কুট দৌড়, অংক দৌড়, হাড়ি ভাঙ্গা ইত্যাদি। যাদের কোনো মাঠ নেই, তারা হামদ, নাত, কেরাত প্রতিযোগিতা, কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিকল্প কিছু করে থাকে। মাদরাসায় ক্রীড়া আয়োজনগুলো কখনো ব্যাপক আকারে হতে দেখা যায় না। অনেকটাই ঘরোয়া পরিবেশে শেষ করে প্রতিষ্ঠানগুলো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ আহমাদিয়া কামিল মাদরাসা নামে- সুনামে ও ফলাফলে সেরা থাকলেও এর মাঠ নেই বললেই চলে। যা রয়েছে তা চিকন সরু জায়গা। রাজারাগাঁও ফাজিল মাদরাসা মাঠ তুলনামূলক কিছুটা বড়ো হলেও খেলাধুলার জন্যে মোটেই উপযোগী নয়। তার ওপর বছরজুড়ে মাঠে নির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। নেছারাবাদ ফাজিল মাদরাসার মাঠ আছে, তবে খেলাধুলার জন্যে মোটেই উপযোগী নয়। রামচন্দ্রপুর ফাজিল মাদরাসার মাঠটি অনেকটাই সরু গলির মতো। সুহিলপুর এবিএস ফাজিল মাদরাসায় মাঠ বলতে কিছু নেই। ছালেহ আবাদ এম. এন. ফাজিল মাদরাসার মাঠটি তুলনামূলক অনেক বড়ো। বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল মাদরাসার মাঠ কিছুটা বড়ো হলেও এর পূর্ব পাশের পুকুরে মাঠে ভেঙ্গে পড়ে যেতে দেখা গেছে। সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসায় তিনদিকে ভবন থাকার কারণে মাঠ অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে। নওহাটা ফাজিল মাদরাসার মাঠ যা-ই আছে, সেটি বড়ো ঘাসে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বাকিলা ফাজিল মাদরাসার মাঠ নেই বললেই চলে। কাপাইকাপ আলিম মাদরাসা মাঠ সরু গলির মতো। বলাখাল এম. এন. আলিম মাদরাসার মাঠ সরু। কাকৈরতলা ইসলামীয়া আলিম মাদরাসার মাঠ মোটামুটি খেলাধুলার উপযুক্ত। দেশগাঁও দারুস সুন্নাহ ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার মাঠ খেলাধুলার জন্যে মোটেই উপযোগী নয়। রাজাপুর ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার মাঠ নেই বললেই চলে। মদিনাতুল উলুম ইসলামীয়া দাখিলা মাদরাসায় মাঠই নেই। মাদরাসে আবেদীয়া মোজাদ্দেদীয়া দাখিল মাদরাসার মাঠ রয়েছে, তবে এটি ধেররা মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফের সম্পত্তি। ডাটরা শিবপুর আজিজিয়া দাখিল মাদরাসা মাঠ পরিপূর্ণ নয়। উচ্চগাঁও ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার কোনো মাঠ নেই। রাজাপুর ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদরাসা মাঠ যা-ই আছে, স্থানীয় লোকজন সেটি রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে। শ্রীপুর মকবুল আহমেদ ইছমাইলীয়া দাখিল মাদরাসায় মাঠ নেই। হাজেরা আলী ক্যাডেট দাখিল মাদরাসা ছোট পরিসরে রয়েছে, আর আলী আহমেদ ইসলামিয়া একাডেমিক দাখিল মাদরাসার মাঠ বেশ ছোট।
বাকিলা ফাজিলা মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা ওমর ফারক বলেন, মাঠ উপযোগী না থাকার কারণে আমরা ছোট পরিসরের খেলাগুলো করি। আমার ক্যাম্পাসে মসজিদসহ ভবনগুলো শুরু থেকে পরিকল্পনামাফিক না করার কারণে মাঠটি ছোট হয়ে গেছে। মাঠ বড়ো করার সুযোগ আর নেই। এরপরও একজন দানশীল বলেছিলেন, ক্যাম্পাসের বাইরে জমি পেলে তিনি মাঠের জন্যে টাকা দিবেন। ইতোমধ্যে তিনি ইন্তেকাল করার কারণে আমাদের সেই আশা অপূর্ণ রয়ে গেছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, যাদের মাঠ রয়েছে তারা সংস্কারের জন্যে বরাদ্দ চাইলে আমি তো বরাদ্দ দেই। যাদের মাঠের জায়গা নেই তারা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে জমি কিনে নিতে পারে।