প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
প্রবাসে ঈদ মানে বাবাকে মিস করা
জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়
২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আমার প্রিয় বাবা দুনিয়ার সকল মায়া ত্যাগ করেন। তারপর দশ বছর কেটে গেলো। অথচ প্রতিটি মুহূর্তে বাবার কথা মনে পড়ে। আমি হতভাগ্য সন্তান। বাবা যেদিন চলে গেলেন, তার মুখখানি শেষবারের মতো দেখতে পারিনি। আমি যে প্রবাসী! বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনেও প্রবাস থেকে দেশে যেতে পারিনি। প্রবাস থেকে এতো দ্রুত দেশে ফেরা যায় না। বাবাকে না দেখার বেদনা এ জীবনে আর ভুলতে পারবো না।
|আরো খবর
বাবার স্মৃতিগুলো প্রায়ই চোখে ভাসে। আমাদের পরিবারের সুখণ্ডশান্তির জন্যে বাবা ছুটে চলতেন ক্লান্তহীনভাবে, আয়-রোজগার করে তুলে দিতেন মায়ের হাতে। মা আমাদের লেখাপড়া, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব ঠিক রেখে সংসার এগিয়ে নিতেন। যখন বড় হয়েছি, তখনও সুখণ্ডদুঃখের সাথী ছিলেন মা। অথচ সেই মা-ও ছেড়ে গেলেন ১০ জুন ২০২০। প্রবাসে বসে করোনাকালে শুনতে হয়েছে মায়ের মৃত্যুসংবাদ। চোখের জলে বুক ভাসিয়েছি। তবু দেশে যেতে পারিনি। দেশে যাওয়ার উপায় ছিলো না। ফ্লাইট যে বন্ধ।
সংসারে আমরা তিন বোন, পাঁচ ভাই। সাথে অসহায় আত্মীয়-স্বজন সবাইকে সুখে রাখতে বাবা একাই লড়াই করে গেছেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অল্প বেতন আর রেশন দিয়ে সংসার চালাতেন। বিলাসবহুল জীবনের স্বপ্ন দেখেননি, চেয়েছেন সৎপথে থেকে জীবনযাপন করতে। বাবা-মা বলতেন, সৎপথে চলাই সুখের জীবন। অসৎ উপায়ে হয়তো অনেক কিছু করা সম্ভব, কিন্তু সুখী হওয়া সম্ভব নয়। তাদের শেখানো কথাগুলো আমাদের পথচলার পাথেয়। আমরা ভাই, বোন সবাই যার যার জায়গায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। হয়তো অনেক টাকা বা অনেক সম্পদ আমাদের নেই। আছে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও আন্তরিকতাপূর্ণ হৃদয়।
আমার বাবা ছিলেন উদার বটবৃক্ষ। ঈদ এলে তিনি নিজের জন্যে কিছুই কিনতেন না। আমাদের পছন্দ মতো নতুন জামা-কাপড় কিনে দিয়েছেন। ঈদে যা আবদার করেছি সাধ্যমতো পূরণ করেছেন। আমরা নতুন জামা হাতে পেয়ে আনন্দে সব ভুলে গেছি। কেউ কখনো বলিনি, বাবা তোমার জন্যে কি কিনেছো? মা জিজ্ঞেস করতেন। বাবা মুচকি হাসতেন। বলতেন, আমার আছে। আমাকে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। বাবা-মায়ের ছায়াতলে আমাদের ঈদ ছিলো অনেক আনন্দের।
প্রতি বছর ঈদ আসে। আমি ভেতর ভেতর ব্যথিত হই। আজ বাবাকে নতুন জামা কিনে দেয়ার ক্ষমতা আমাদের হয়েছে। অথচ কিছুই করতে পারছি না। জানি, বাবা এখন সব কিছু ঊর্ধ্বে। তাই ঈদ এলে খুব কান্না পায়। পিতাণ্ডমাতাহীন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। প্রবাসের ঈদ এমনিতেই কষ্টের। বাবা-মায়ের অভাব সেই কষ্টকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।