প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ০০:৪৮
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট জনসাধারণ
তিন মাসে চার শতাধিক নরমাল ডেলিভারি ।। কমেছে সিজারিয়ান অপারেশন

আড়াই শ' শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে গত তিন মাসে চার শতাধিক গর্ভবতী নারীর স্বাভাবিক সন্তান প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) হয়েছে। এতে করে কমেছে সিজারিয়ান অপারেশনের হার। বিগত সময় এবং বর্তমানে যেখানে গর্ভবতী নারীদের বেশিরভাগই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হয়ে থাকে, সেখানে গত তিন মাসে চার শতাধিক গর্ভবতী নারীর নরমাল ডেলিভারির বিষয়টি জনমনে স্বস্তি এনেছে এবং প্রশংসিত হচ্ছে। এটি সরকারি হাসপাতালের প্রসূতিসেবায় ইতিবাচক দিক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
|আরো খবর
জানা গেছে, হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে চলতি বছরের এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসে সর্বমোট ৪০৮টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১৪৩টি। আর মে মাসে ১৪৫টি এবং জুন মাসে হয়েছে ১২০টি। আর এই সময়ে এই হাসপাতালেই সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে এপ্রিল ও মে মাসে ৪৫টি করে এবং জুন মাসের ৩০ তারিখ সোমবার পর্যন্ত মাত্র ২৫টি।
এই পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মাসে হাসপাতালে গড়ে ৭০ শতাংশের বেশি ডেলিভারিই নরমাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে, যা দেশের অনেক জেলা হাসপাতালের তুলনায় ব্যতিক্রমী এবং প্রশংসনীয়।
সিজারিয়ান অপারেশনের যুগে প্রতি মাসে হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ার কারণে শহর এবং বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের রোগীদের মাঝে হাসপাতালের প্রতি অনেক আস্থা তৈরি হচ্ছে। চাঁদপুর সদরসহ আশপাশের এলাকা থেকে আগত অনেক গর্ভবতী নারী ও তাদের পরিবার এখন আর অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশনের দিকে ঝুঁকছেন না। তারা চাইছেন স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করাতে।
এর পেছনে যেমন রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রভাব, তেমনি রয়েছে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি ও চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা। প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবার সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গর্ভাবস্থায় সঠিক সেবা ও পরামর্শ পেলে অধিকাংশ মা-ই নিরাপদভাবে নরমাল ডেলিভারির মধ্য দিয়ে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হন। এতে একদিকে যেমন সিজার সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে, অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে সাশ্রয় হয়।
চাঁদপুরের মতো একটি জেলার জন্যে এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্ত। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ যদি এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আরও জোরদার করে, তবে ভবিষ্যতে নরমাল ডেলিভারির হার আরও বৃদ্ধি পাবে।
সাধারণ জনগণের জন্যে এটি এক আশাব্যঞ্জক বার্তা যে, সরকারি হাসপাতালে নিরাপদ ও স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভব ও সহজসাধ্য।
চাঁদপুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই অগ্রগতি শুধু সংখ্যার হিসেব নয়, এটা চিকিৎসা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, জনগণের আস্থা অর্জন এবং সরকারি সেবার প্রতি বিশ্বাস গঠনের প্রমাণও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি জেলা পর্যায়ে আরও প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা এবং সেবা অবকাঠামো জোরদার করে, তবে অপ্রয়োজনীয় সিজারের প্রবণতা সারাদেশে আরও হ্রাস পাবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। অনেক মা ও পরিবার এখন অপ্রয়োজনীয় সিজার এড়িয়ে নরমাল ডেলিভারিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আমরা চিকিৎসক দলও মা ও নবজাতকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নরমাল ডেলিভারির জন্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখি। পাশাপাশি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ও দক্ষ মিডওয়াইফ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্যও রয়েছে।”
ডিসিকে/এমজেডএইচ