প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরে কোরবানির জন্যে ৭০ হাজার গরু প্রস্তুত
পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় থাকছে মেডিকেল টিম
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর চাঁদপুর জেলায় পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানি দেয়ার জন্যে পশুর চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার। এ বছর চাঁদপুর জেলায় অন্য জেলা থেকে অথবা পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে কোরবানির জন্য পশু আমদানি করতে হবে না। চাঁদপুরের স্থানীয় গবাদি পশুতেই চাঁদপুরের কোরবানির চাহিদা মিটানো যাবে।
|আরো খবর
এছাড়া নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে স্বীকৃত কোরবানির হাটে বিনামূল্যে পশুস্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে এবং বিভিন্ন পশুর হাটে থাকবে মেডিকেল টিম। যাতে অসুস্থ ও রোগবালাইয়ে আক্রান্ত পশু কেউ নিয়ে না আসে অথবা সেটা বিক্রি না হয়। আমরা সেখানে ফ্রি অব কস্ট চেকআপের ব্যবস্থা করবো। যারা বিক্রি করবেন, কিনবেন বা খাবেন তাদের সবার জন্য একটা নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মনিটরিং করা হবে বলে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে।
চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে ও নদীর পশ্চিম পাড়ে ত্রিশের অধিক চরাঞ্চলসহ জেলার ৮ উপজেলায় খামারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই বছরজুড়ে গবাদি পশু পালন করেছেন। পালনকৃত পশু থেকেই প্রতিবছর কোরবানির অধিকাংশ চাহিদা মিটানো হয়ে থাকে। এছাড়াও কোরবানির হাটে জেলার বাইরে থেকে পশু আমদানি হয়। গত কয়েক বছর জেলার অভ্যন্তরে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন অনেকেই। এসব খামার এখন কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে। চাঁদপুর জেলায় কোরবানির জন্য ৭০ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে কোরবানির হাটগুলো প্রস্তুত হতে শুরু করেছে। এ বছর জেলায় প্রায় দুই শতাধিক কোরবানির পশুর হাট বসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরের মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় অধিকাংশ মানুষ কৃষি, পশু পালন ও মৎস্য আহরণ করে জীবীকা নির্বাহ করেন। মূলত চরাঞ্চল থেকেই অধিকাংশ কোরবানির পশু হাটে আসে। ব্যক্তি উদ্যোগে এবং খামারিদের পশু বিক্রির জন্য কোরবানির হাটে গরু নিয়ে আসেন। যার ফলে এখন খামারিরা তাদের বিক্রিযোগ্য পশুগুলো লালন-পালন ও যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার অনেকেই কোরবানির হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক থেকে দু’মাস আগে জেলার বাহির থেকে এবং বিভিন্ন হাট থেকে পশু ক্রয় করে অস্থায়ী খামার করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ৮ উপজেলায় তালিকাভুক্ত খামারী আছে ২ হাজার ৬৩৪ জন। কোরবানির চাহিদার জন্য এসব খামারীর পালনকৃত ষাঁড়, বলদ, গাভী, মহিষ রয়েছে ৬৯ হাজার। গত বছরের কোরবানির পশুর সংখ্যা অনুযায়ী এ বছরের চাহিদা ৭০ হাজার।
চাঁদপুর জেলার সবচে’ বড় পশুরহাট হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজার। গত একসপ্তাহ ওই বাজারটিকে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতাদের হাঁটার রাস্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। বাজারের ইজারাদার অমল ধর জানান, বাজারে আগত ক্রেতাণ্ডবিক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে আমাদের কর্মী রাখা হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর হাসিল কম ধরা হয়েছে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে হাসিল ছাড় রাখারও নিয়ম রাখা হয়েছে।
মেঘনা তীরবর্তী নিয়মিত গরুর হাট চাঁদপুর সদর উপজেলার সফরমালি বাজার। সেখানে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাট বসে। কোরবানি উপলক্ষে গরুর আমদানি বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম ১০-১৫% বেশি। যে কারণে ক্রেতারা দেখে চলে যান, কিনতে চান না।
চাঁদপুর জেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিসমিল্লাহ ডেইরি ফার্মের পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান বেপারী জানান, গত দুবছর করোনার কারণে আমাদের অনেক লোকসান হয়েছে। এখন বাজারে খাবারের দাম বেশি। যার কারণে খরচ হিসেব করে দাম নির্ণয় করলে বেশি হয়ে যায়। অনেকেই দেখতে আসেন কিন্তু কিনেন না। এখন আমাদেরকে কোরবানির হাট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
একই ফার্মের শ্রমিক চাঁদ আলী ও সুমন জানান, খামারে পালনকৃত গরুগুলোকে ঘাসসহ বিভিন্নভাবে উৎপাদিত দেশীয় খাবার খাওয়ানো হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মধ্যেই এসব গরু বেড়ে উঠে। ক্ষতিকারক কোনো কিছুই খাবারে ব্যবহার হয় না।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ বখতিয়ার উদ্দিন জানান, জেলায় ২ হাজার ৬৩৪ জন খামারী রয়েছেন। যারা ৫ থেকে ২০টি গবাদিপশু পালন করেন। এ রকম প্রায় ৮০ হাজার গবাদিপশু রয়েছে। কোরবানির জন্যে এ বছর গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি এ বছর আমাদের যে চাহিদা আছে, তা মিটিয়ে অতিরিক্ত পশু থাকবে। এ বছর আমরা খুবই সুন্দরভাবে পবিত্র কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করতে পারবো। এতে আমাদের চাঁদপুর জেলার কোনোরূপ সমস্যা দেখছি না।