প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০
স্কাউটিংয়ে তাসফিয়া সুলতানার কৃতিত্বের গল্প
“ভাইবা কেন্দ্রে সারিবদ্ধ আমি, আর দূর থেকে অপলক চেয়ে থাকা আমার মা! একজোড়া চোখ যেনো বলেছিল, “হার মানিস না’’

আজকে আমরা জানতে চলেছি এমন একজনের গল্প যিনি কাব এবং স্কাউট শাখার সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড-শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড, প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড এবং সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক চঁাদপুর জেলার একজন কৃতী স্কাউট সদস্যের কাছে থেকে তার অর্জনের গল্পÑ
আমি তাসফিয়া সুলতানা, স্কাউটিং করেছি বাংলাদেশ স্কাউটস কুমিল্লা অঞ্চলের অধীনস্থ চঁাদপুর জেলা স্কাউট থেকে। সেই ছোট্ট সেই তাসফিয়াÑযে কিনা শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড মূল্যায়নের দিন সবার হাসির কারণ হয়েছিলাম! কারণটা অবশ্য মজার, আমাকে দেখে কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না আমি একজন মূল্যায়নে অংশগ্রহণকারী। বয়সে ছোট, মুখে শিশুসুলভ মিষ্টতা। তবে সেই দিনেই, ভাইবা বোর্ডের এক লিডার বলেছিলেন, “তুমি একদিন স্কাউটদের সর্বোচ্চ পদক অর্জন করবে।” একটিমাত্র বাক্য, “তুমি একদিন স্কাউটদের সর্বোচ্চ পদক অর্জন করবে” আমার স্কাউটিং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যেন সঙ্গী হয়ে থেকেছে। কখনো সাহস জুগিয়েছে, কখনো কঁাদিয়েছে আবার কখনো অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
অবশ্য আমার স্কাউটিংয়ের পথচলা একা শুরু হয়নি। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান সিদ্দিকী স্যার ছিলেন আমার প্রথম অনুপ্রেরণা। ওনার হাত ধরেই আমার স্কাউটিং জীবনের শুরু। স্যারের উৎসাহ, আগ্রহ, আর আত্মবিশ্বাস আমার ভিতর স্কাউটিংয়ের বীজ বপন করে দিয়েছল। তিনি শুধু আমাকে স্কাউট ইউনিটে যুক্ত করেননি, বরং প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন পথপ্রদর্শক হয়ে। আমি আজও মনে করি, স্যারের সেই এতোটা আস্থা, অনুপ্রেরণা না পেলে হয়তো আমি স্কাউটিংয়ে এভাবে জড়িয়ে পড়তাম না।
সময় অনেকটা গড়িয়েছে! শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড অর্জনের পর প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ডের জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি। চ্যালেঞ্জ ছিল বহু, কিন্তু সবচেয়ে কঠিন ছিল ভাইবার আগের সেই দিনটি। আমি তখন ভীষণ অসুস্থ। জ্বর, দুর্বলতা! সব মিলে আমার নিজেকেই মনে হচ্ছিল অক্ষম এবং আমি হয়তো পারবো না!
আমি আশাও ছেড়ে দিয়েছিলাম প্রায়। কিন্তু তখনই আম্মুর কণ্ঠে সেই অনুপ্রেরণা মূলক কথা বা শক্তি ভেসে এলো, “তুই পারবি মা, তোর ওপর আমার বিশ্বাস আছে।” সেই কথাটা যেন হৃদয়ের গহীনে স্থায়ী হয়ে গেল।
যখন ভাইবার জন্য সারিবদ্ধভাবে সবাই রওনা দিল, আমি একটু পেছনে তাকালামÑদূরে দঁাড়িয়ে থাকা আম্মুর দিকে। তার চোখের সেই অপলক দৃষ্টি আমাকে আরেকবার বলছিল, “তোকে পারতেই হবে।”
সেই মুহূর্তে আমার ভেতরকার সব ভয়, সব কষ্ট যেন হারিয়ে গিয়ে আত্মবিশ্বাসে রূপ নিয়ে নিল। আমাকে পারতেই হবে!
আমি ভাইবা দিয়েছি, জানি না কতটা ভালো হয়েছিল, কিন্তু আম্মুর বিশ্বাস, স্কাউট শিক্ষকের সেই ভবিষ্যদ্বাণী, প্রধান শিক্ষকের সেই শুরুর হাত ধরা, আমার ইউনিটের বড় ভাই এবং আপুদের অনুপ্রেরণা আর আমার নিজের লড়াইÑসব মিলিয়ে আজ আমিও একজন প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট।
এই স্বপ্নের চূড়ায় পেঁৗছানোটা শুধু আমার একার নয়, আমার পরিবার, আমার স্কুল, আমার দল, আমার শিক্ষকদের ভালোবাসা, আস্থা আর একই সাথে আমার আত্ববিশ্বাস এবং প্রচেষ্টা এর ফল।
ইতি,
তাসফিয়া সুলতানা : শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী-২০১৮; সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী-২০২২; প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী-২০২২।








