প্রকাশ : ১২ জুন ২০২২, ১৯:১৯
চাঁদপুরে দুর্লভ নতুন হলুদ ড্রাগন চাষ সাড়া ফেলেছে
বিশ্বখ্যাত বেশ কয়েক ধরণের ড্রাগনের সফল ফলন হয়েছে এবার চাঁদপুরের আলোচিত ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পে। প্রতিদিন শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ আসছে এখানে উৎপাদিত নানা জাতের এসব ড্রাগন ফল দেখতে । বিষেশ করে ভিন্ন জাতের ড্রাগন উৎপাদন ও তার সফল ফলন এই ফ্রুটস ভ্যালিতে অনেকটা ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে। দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন তাঁর পৈত্রিক বিশাল আকারের পরিত্যক্ত ইটভাটায় সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে বিদেশী নানাজাতের ফল উৎপাদন করে ইতোমধ্যে বেশ চমক সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে এবার দুর্লভ জাতের হলুদ ড্রাগন চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম সফল ফলন করেছেন। এই দুর্লভ জাতের হলুদ ড্রাগন, যা বিশ্বে ‘কুইন অব ড্রাগন’ হিসেবে খ্যাত। বাজারে প্রচলিত হলুদ রংয়ের ড্রাগনের সাথে এর মিল নেই। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। মিষ্টতা অনেক বেশি এবং রসালো। চাঁদপুর সদরের শাহতলীতে অবস্থিত ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পে মোট ৭ জাতের ড্রাগন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন বিশ্বখ্যাত তিন জাতের হলুদ ড্রাগন এই দেশের ড্রাগন চাষীদের মুখে হাসি ফুটাবে বলে মনে করে এখানকার কৃষিবিদরা। এই জাত হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ফলের জাত। প্রথমবারের মত দেশে হলুদ ড্রাগনের নতুন জাত বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত আইসিস গোল্ড, গোল্ডেন ইয়েলো এবং পিটাহায়া ইয়েলো জাতের ফলন একমাত্র চাঁদপুরের ফ্্রুটস ভ্যালি এগ্রোতেই হয়েছে। অপর দু’টি অস্টেলিয়ান ও ফিলিপাইনের জাত। একই সাথে লাল এবং ক্ষয়েরী রংয়ের আমেরিকান ব্রাউন বিউটি এবং লা ভার্ন রেড হাইব্রিড ড্রাগনের ফলনেও সফল হয়েছেন ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পের স্বত্ত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন জানান, এই ৪টি ড্রাগন এদেশে নতুন জাত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারো কারো কাছে এসব জাত থাকলেও পরীক্ষামূলক সফল বাণিজ্যিক ফলন এই প্রথম। এসব জাত উচ্চ ফলনশীল এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। এছাড়া এখানে উৎপাদিত লাল ড্রাগনের নতুন দুটি জাত এদেশে প্রচলিত লাল ড্রাগনের মত হলেও সাইজ, রং, আকার, চেহারা এবং স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, সাধারণত অন্যান্য ড্রাগন ৪০০ গ্রাম থেকে ৯০০ ওজনের হয়ে থাকে । তবে গাছের বয়স ৩ বছর ছাড়িয়ে গেলে আইসিস জাতের একেকটি ড্রাগন ১ কেজি ওজন ছাড়িয়ে যাবে। ড্রগনের এই জাতিটা ঠান্ডা তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় শীতকালেও ড্রাগনের চাষাবাদের মাধ্যমে ড্রাগনের প্রাপ্যতা ধরে রাখার আশা প্রকাশ করেন এই উদ্যোক্তা।
|আরো খবর
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর ম্যানেজার সোহান চৌধুরীসহ অন্য স্টাফরা বলেন, সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে আমরা ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর চাষাবাদ করেছি। ড্রগন গাছের পরিচর্যা একটু বেশি করতে হবে। তাহলে ভালো ফলন আসবে। গত তিন মাস আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এবং পরিশ্রম করেছি। যেমন, কচুরিপানা দিয়ে রেখেছি, মাটি একত্রিত করে নিয়মিত পানি দিতে হয়। এছাড়াও মিলিবাগ পোকা, মাকড়সাসহ বিভিন্ন প্রকার পোকায় আক্রান্ত হয়। আমরা সব সময় সে বিষয়গুলো দেখে রেখেছি।
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে ঘুরতে আসা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাত বলেন, আমি এর আগে বেশ কয়েকবার লাল ড্রাগন খেয়েছি। আজকে এই হলুদ জাতের ড্রাগন খেলাম। তবে এর আগে অন্য ড্রাগনে আমি এত স্বাদ পাইনি। হলুদ ড্রাগন খেয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি একটি বিরল স্বাদের ড্রাগন। আজকে এখানে না আসলে হয়তো জানতেই পারতাম না এই জাতটি এত সুস্বাদু। এসব জাতও এদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে চাষাবাদ উপযোগী তা ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে দেখা যাচ্ছে।
সারা বিশ্বে আইসিস ড্রাগনকে সুপারফুড বিবেচনা করে “কুইন অব ড্রাগন” নামে ডাকা হয়। সেই আইসিস গোল্ড ড্রাগনও এই ফ্রুটস ভ্যালিতে সফল ফলন হয়েছে। এই ড্রাগন মিষ্টি এবং সাইজে বড় ও একই সাথে অন্য সাইট্রাস স্বাদের অধিকারী। এর পুষ্টিগুণ অন্য সব ড্রাগনের তুলনায় অনেক বেশি। চাঁদপুরে ড্রাগন ফলের অপার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, আমি শাহতলীর ফ্রুটস ভ্যালিতে গিয়েছি। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নানা জাতের ফলের উৎপাদন হচ্ছে এখানে। ড্রাগন ফল এখন শাহতলীর ফ্রুটস ভ্যালি ছাড়াও চাঁদপুরের মতলব, ফরিদগঞ্জ, কচুয়াসহ নানা স্থানেও চাষ হচ্ছে। এখন ড্রাগন ফলের মওসুম চলছে, তাই দামও হাতের নাগালে। তবে হেলাল সাহেবের ফ্রুটস ভ্যালিতে উৎপাদিত ভিন্ন জাতের ড্রাগন ফলন এই জেলার উদ্যোক্তাদের ড্রাগন চাষে আগ্রহী ও আশান্বিত করবে বলে আমি মনে করি।